শোক
আর দুঃখে স্তব্ধ পুরো দেশ। বিমান দুর্ঘটায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড
কলেজের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের অকালমৃত্যুর যন্ত্রণা মা-বাবা আর
স্বজনদের ছাড়িয়ে পুরো দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। হাসপাতাল, জাতীয় বার্ন
অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ সর্বত্র অভিভাবক, আত্মীয়-স্বজনের
কান্না, ক্ষোভ আর হাহাকার। কেন এতগুলো শিশুর মৃত্যু হলো-এই প্রশ্ন কুরে
কুরে খাচ্ছে তাদের।
কেউই এ ধরনের মর্মান্তিক, অমানবিক ও করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না।
হাসপাতালগুলো এখন যেন মৃত্যুপুরী। অনেকের সন্তান হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তারা আগুনে পোড়ার অসহ্য ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
আহতদের
যন্ত্রণায় অভিভাবকরা হতবিহ্বল। অনেক অভিভাবক গতকালও তাঁদের প্রিয় সন্তানের
হদিস পাননি। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনটি এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত
হয়েছে। পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসের স্তূপ জমে আছে।
পোড়া গন্ধে বাতাস
ভারী। ভবনের সামনের খোলা জায়গায় পড়ে আছে আংশিক পোড়া বই, আইডি কার্ড ও
ব্যাগের টুকরা। পরিবেশটা আরো দুঃসহ করে তুলেছে সন্তানের খোঁজে আসা
অভিভাবক-স্বজনদের হাহাকার। এমন পরিবেশে শুধু নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছেন কেউ
কেউ। কেউ পাথরের মতো স্থির।
কেউ ভেঙে পড়ছেন ছেলের বা মেয়ের নাম লেখা
একটি ছেঁড়া খাতার পাতা দেখে। এসবের ভেতর নিখোঁজ সন্তানদের চিহ্ন খুঁজে
ফিরছেন অভিভাবকরা। কেউ পেয়েছেন সন্তানের ব্যবহৃত বই, কেউ নোটখাতা আবার কেউ
আইডি কার্ডের টুকরা। তা দেখে বুক ঠেলে আসা হাহাকারে মুষড়ে পড়ছেন মা-বাবা।
কী সান্ত্বনা তাঁদের জন্য, জানা নেই।
আহত এসব শিক্ষার্থীর চিকিৎসা চলছে
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিক্যাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল,
সিএমএইচ, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, উত্তরা
ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, শহীদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসা করছেন দেশের চিকিৎসকরাই। আরো উন্নত
চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে এসেছে চিকিৎসকদল। এটি ভালো খবর, জাতীয়
বার্ন ইনস্টিটিউটসহ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসায় সহায়তা করলে
উন্নত চিকিৎসা হবে এই শিক্ষার্থীদের।
হতাহতের সংখ্যা নিয়ে অভিভাবক ও
সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হাসপাতালে
ভর্তি ৬৮, মৃত্যু ২৮। আর আইএসপিআর বলছে, ভর্তি রোগী ১৬৫, মৃত্যু ৩১। এই
বিভ্রান্তি কেন? সরকারের উচিত দ্রুত এই বিভ্রান্তি কাটানো, যাতে অভিভাবকসহ
জনমনে কোনো ধরনের প্রশ্ন তৈরি না হয়।
বিস্ফোরণের শব্দে শিক্ষার্থীদের
কোমল মনে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ শিক্ষার্থীরা।
ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে যাওয়া এই
শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা লাগবে। প্রয়োজনে একটি সেল গঠন করে এই
শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে। মনিটর করতে হবে চিকিৎসার শেষ পর্যন্ত।