পুঁজির সংকটে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক বাধা তো রয়েছেই। উদ্যোক্তাদের ভালো পরিকল্পনা থাকলেও পুঁজিসংকটে ব্যবসা শুরু করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের অভাব ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা না থাকায় গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সেই সঙ্গে রয়েছে বাজারজাতকরণের প্রতিবন্ধকতা। তা সত্ত্বেও ব্যবসায় নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ব্যবসায় আগ্রহ দেখাচ্ছে।
কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত ঋণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মূলধনের অপর্যাপ্ততা তথা অর্থায়নের ঘাটতি নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা। বিশ্লেষকদের মতে, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকঋণ না পাওয়ার কয়েকটি কারণ হলো, ট্রেড লাইসেন্স সমস্যা, ব্যবসার প্রমাণাদি না থাকা, ঋণ তারা কীভাবে ব্যবহার করবেন তা না জানা, দুজন পুরুষ গ্যারান্টর এবং দোকান না থাকলে বাড়িতে মালপত্র রাখার বিষয়টিও রয়েছে। এসব কারণে নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংকঋণ পাচ্ছেন না।
নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতা শীর্ষক ওয়েবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা পারিবারিক চাপে এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে ব্যবসায় অংশ নিতে পারছেন না। নারী উদ্যোক্তারা সাধারণত মূলধন এবং ঋণ প্রাপ্তিতে বাধার সম্মুখীন হন। পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এমনকি ব্যবসা শুরু ও চালিয়ে যেতেও বাধার মুখে পড়ছেন তারা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনেক নারী উদ্যোক্তা তাদের পণ্য ও সেবার প্রচার এবং বাজারজাতকরণে পিছিয়ে থাকেন। অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে এ সমস্যা দেখা যায়। নারী উদ্যোক্তাদের ওপর পরিবার ও সমাজের চাপ অনেক বেশি থাকে। ব্যবসা এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে তারা প্রায়ই সমস্যায় পড়েন। দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে পারলে নারীদের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়বে। এতে সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব প্রদানের পথও সহজ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এসএমই খাতে মোট ঋণের অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে। কিন্তু গড়ে মোট ঋণের ৬ থেকে ৮ শতাংশ পাচ্ছেন। এটিও নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ডিজিটাল যুগে অনেক নারী উদ্যোক্তা প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে পিছিয়ে আছেন। এসব নারী ব্যবসায় অংশ নিয়েও ক্রমাগত লোকসানের কারণে টিকে থাকতে পারছেন না। এসব সংকট সমাধানে নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, বাজারজাতকরণের সহযোগিতা এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত ঋণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ঋণ ও মূলধনের অপর্যাপ্ততা তথা অর্থায়নের ঘাটতি নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ, প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া দরকার। এসব সমস্যার কারণে ব্যবসায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে না। আবার ব্যবসায় অংশগ্রহণের পরও অনেকে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন না। ব্যবসায়ে টিকে থাকতে পারছেন না।
নারী উদ্যোক্তাদের চলার পথকে মসৃণ করতে সরকারকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আলাদা সাপ্লায়ার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা জরুরি। করপোরেট বায়ারের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং এ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাজারজাতকরণে সহায়তা করতে হবে। আশা করছি, সরকার নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।