রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঘন ঘন ত্রুটির কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি এবং জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ পরিচালনা সংস্থা আন্তর্জাতিক রুটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী এবং মালামাল পরিবহন করে। বিভিন্ন সময়ে এই বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়াও যাত্রী হয়রানি, ফ্লাইট বিলম্বসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মাঝে ফ্লাইট পরিচালনায় হিমশিম খেতে হয় সংস্থাটির। দুর্ঘটনা ও ত্রুটির কারণে শুধু যাত্রীদের দুর্ভোগই বাড়ছে না, ক্ষতির মুখে পড়ছে সম্ভাবনাময় এ সংস্থাটি।
বহরে থাকা ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে তিনটি বর্তমানে হ্যাঙ্গারে পড়ে আছে এবং দুটি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ফলে মাত্র ১৬টি উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে বিমান কর্তৃপক্ষকে। এদিকে গত শনিবার একই দিনে এ সংস্থার দুটি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি এবং গত দুই মাসে একাধিক ত্রুটি ও ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহগামী ফ্লাইট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে আসে। ফ্লাইটটিতে সমস্যার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ায় মাঝ আকাশ থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন পাইলট।
সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উড়োজাহাজটির ফুয়েল ব্যালান্সিং সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এর আগে গত ১৬ জুলাই দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের বিজি-১৪৮ ফ্লাইটের চাকা ফেটে যাওয়ায় উড্ডয়ন বিলম্বিত হয় এবং যাত্রীদের হোটেলে থাকতে হয়। এতে কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীভোগান্তি চরমে পৌঁছায়।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এর ফলে দেশি-বিদেশি যাত্রীদের আস্থার জায়গাতেও চিড় ধরতে পারে এবং নিয়মিত যাত্রীরাও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ভ্রমণে উৎসাহ হারাতে পারেন।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের বেশির ভাগ এয়ারক্রাফট পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ঘন ঘন ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। এতে যাত্রীরা বারবার বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এবং ব্র্যান্ড ইমেজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এখনই বহর সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো জরুরি। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী একটি এয়ারলাইনস হলেও বিমান তার ব্র্যান্ডিংয়ে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। যাত্রীসেবার মানও অনেক দুর্বল। বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে আধুনিক বিমান না থাকা, অপরদিকে পরিকল্পনার অভাব ও জবাবদিহির ঘাটতি- এ দুইয়ের সমন্বয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এখন বড় ধরনের অস্তিত্বসংকটে পড়ছে। সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নিলে এ সংস্থার সেবার মান ও আর্থিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
পুরোনো বিমানগুলোর যান্ত্রিক ও কারিগরি ত্রুটির কারণে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব হচ্ছে। এতে করে যাত্রীভোগান্তি বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থাটিকে ইমেজসংকটে পড়তে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নতুন ও আধুনিক বিমান যুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। বিমান কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি পায়। বিমানের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস তাদের সমস্যা কাটিয়ে যুগপোযোগী বিশ্বমানের বিমান সংস্থায় পরিণত হবে, সেটিই প্রত্যাশা।