দেশের
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নানা বিষয়কে টার্গেট করে একশ্রেণির মানুষের
মধ্যে অর্থ আয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা জেগেছে। এ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।
পেশাজীবীদের কেউ কেউ ভালো জায়গায় চাকরি বা পদায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর
কাছে ধরনা দিচ্ছেন। ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লবিংয়ে। তারা বলছেন, গত ১৬ বছর
আওয়ামী লীগের আমলে তারা বঞ্চিত ছিলেন। এ কারণেও মানুষের মধ্যে অস্থিরতা
ছড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা এসব ঘটনাকে মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন।
তারা বলছেন, দেশের অনেকের মধ্যে এমন এক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, এখন তারা
যেন স্বাধীন।
তাদের যা ইচ্ছা পাওয়ার বা অর্জন করার অধিকার তৈরি হয়েছে।
এসব কারণে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও দখলের ঘটনা ঘটছে। মব সন্ত্রাসের
মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। উচ্চ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে ৯
জুলাই মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর নৃশংসভাবে পাথর
দিয়ে আঘাত করে লাশের ওপর উঠে উল্লাস করে দুষ্কৃতকারীরা। আইন ও
সালিশকেন্দ্রের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে রাজনৈতিক
খুনের সংখ্যা ৬৫। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধীরা অপরাধ করলে আইনের আওতায়
আনা হবে না।
এই মোটিভেশনের জায়গা থেকে তারা ভায়োলেন্স করে যাচ্ছে। এর
ফল কী হতে পারে, বিবেচনা করছে না। রাষ্ট্র পরিচালনা যদি দুর্বল হয় তখন
এমনটি ঘটে। সরকারের প্রতি মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তা তারা পূরণ করতে
পারেনি। এর কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয় অনেক বেড়ে
গেছে। সেদিকে রাষ্ট্র নজরই দিচ্ছে না। সমাজব্যবস্থায় দরকার ছিল মানুষের
প্রত্যাশা পূরণ করা। অনেক কারণে তারা তা পারেনি। অসহযোগিতাও ছিল। মূলত
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় একাত্তরের পরে যা হয়নি, এখন তার দরকার ছিল। শুধু
রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, সামাজিক বিশৃঙ্খলাও বাড়ছে। পরিবারগুলোতে অশান্তি
বাড়ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনার পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে
মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটেছে। এ কারণে সর্বত্র অসন্তুষ্টি ও অস্বস্তি বেড়েছে।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল
করিম বলেন, আইনের শাসন না থাকলে এরকম হয়। মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন
এসেছে তা হলো, অপরাধ করলে কিছু হবে না। অপরাধ করে সহজে পার পাওয়া যাবে। এর
নানা দিক আছে। অনেকে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকার বেশি দিন থাকবে না। তারা
শাস্তি দিলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। আগে মানুষ
স্বাধীনভাবে তার মতপ্রকাশ করতে পারেনি। এখন এই স্বাধীনতা পেয়ে অনেকে
অন্যায়ভাবে এর অপব্যবহার করছে।
সামাজিক ও মনোজাগতিক পরিবর্তনের কারণে
দেশে নজিরবিহীন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য
সরকারকে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজ ও পরিবারেরও
যথেষ্ট দায় রয়েছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। রাজনৈতিক
দলগুলোকে এ ক্ষেত্রে সহনশীল আচরণ করতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার
সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। দেশের বিভিন্নমুখী সমস্যা বা ইস্যু নিয়ে মিডিয়ায়
বিস্তর আলোচনা ও লেখালেখি করতে হবে, যাতে করে মানুষ সচেতন হয়। আশা করছি,
অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে নিতে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ
করবে।