কুমিল্লার
লালমাইয়ে ওএমএস ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের
কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় আহ্বায়কের নেতৃত্বে তালা
ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার কারণে টানা দুই দিন অফিস করতে পারেননি ওই
কর্মকর্তা। পরবর্তীতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া ব্যক্তিরা উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তার কাছে চাবি বুঝিয়ে দেন।
এর আগে সোমবার বেলা তিনটার দিকে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমাই উপজেলা শাখার আহ্বায়ক নোমান হোসেনের
নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি ও ‘সমন্বয়ক’ যাঁরা আবেদন করে পরিবেশক
নিয়োগ পাননি, তাঁরা প্রথমে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তালা ভেঙে
ফেলেন। এরপর নতুন তালা লাগিয়ে দেন। এ ঘটনার পর থেকে নিয়োগ পাওয়া পরিবেশকদের
সমর্থক, বঞ্চিত পরিবেশকদের সমর্থক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তেজনা
ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থির মধ্যেই কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য
নিয়ন্ত্রকের হস্তক্ষেপে তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কি কারণে
সমন্বয়করা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন- তা তদন্ত করতে
তিন সদস্যের কমিটির গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
হিমাদ্রী খীসা। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাবি হস্তান্তর করায় উপজেলা
খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর চাবি পৌঁছাতে পারেনি। তবে বুধবার থেকে তারা যথারীতি
অফিস করবেন। তবে তারা কী কারণে এমন ঘটনা ঘটালেন তা জানতে পারিনি। জেলা
প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে যে তদন্ত কমিটি হবে- তারা তদন্ত করলেই মূল বিষয়টি
বের হয়ে আসবে।
তিনি আরো বলেন, নিয়মের মধ্য দিয়েই নিয়োগ দেওয়া হলেও
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে অনিয়মের
অভিযোগ করেছেন। খাদ্য অফিসের তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন এবং জেলা
প্রশাসক স্যারসহ আমার কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কোনো অনিয়ম হলে আমরা
সেটি তদন্ত করে দেখব। কিন্তু এভাবে তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেওয়া
কোনোভাবেই উচিত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র
আন্দোলনের লালমাই উপজেলা শাখার আহ্বায়ক নোমান হোসেন নিজেও উপজেলার বাগমারা
(দক্ষিণ) ইউনিয়নে ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু
তিনি বাদ পড়েছেন। নোমান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, খাদ্যনিয়ন্ত্রকের
নির্দেশনা মেনে আমি সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমাকে কিছু না জানিয়ে এক
ওষুধের দোকানদারকে অনিয়মের মাধ্যমে লটারি ছাড়াই আমাদের ইউনিয়নে ডিলার নিয়োগ
দেওয়া হয়েছে। একই দিন উপজেলার অন্য দুটি ইউনিয়নেও ডিলার নিয়োগে অনিয়ম
হয়েছে। উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রাজিব কুমার দে নীতিমালা না মেনে ও অনৈতিক
সুবিধার মাধ্যমে এই কাজ করেছেন।
তবে পুরোপুরি নিয়ম মেনেই পরিবেশক নিয়োগ
দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন লালমাই উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রাজিব কুমার দে।
তিনি বলেছেন, এখানে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি, নিয়ম মেনেই ডিলার নিয়োগ দেওয়া
হয়েছে। এরপরও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আমাদের দপ্তরে তালা
ভেঙে নতুন তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি ইউএনও স্যারসহ ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাঁদের এসব অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন।