শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫
১৩ আষাঢ় ১৪৩২
কুমিল্লার জগন্নাথপুরে যখন রথউৎসব হতো তখন হাতির মিছিল হতো
আবুল কাশেম হৃদয়, গবেষক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫, ৪:০৭ পিএম আপডেট: ২৭.০৬.২০২৫ ৪:১৪ পিএম |

সতের রত্ন মন্দির। কুমিল্লা শহরের পূর্বে জগন্নাথপুরে অবস্থিত। এই দেবমন্দির নির্মাণের সূচনা ও সমাপ্তি পর্যন্ত বেশ কয়েজন ত্রিপুরা মহারাজার মৃত্যু, সিংহাসন হারানো, দখলের ঘটনা ঘটেছে। মাঝখানে মোগল সম্রাট ত্রিপুরা জয় করেছেন। এসেছে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজত্ব। এ মন্দিরটির নির্মাণ যিনি কাজ শুরু করেন তাঁর নাম মহারাজা দ্বিতীয় রত্ন মাণিক্য। আর যিনি নির্মাণ কাজ শেষ করেন তাঁর নাম কৃষ্ণ মাণিক্য। মাঝখানে ৫০ বছরের মতো সময় গেছে।
কুমিল্লার জগন্নাথপুরে যখন রথউৎসব  হতো তখন হাতির মিছিল হতো
ত্রিপুরার মহারাজা রাম মাণিক্যের চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ৫ বছর বয়সী রত্ন মাণিক্য বাবার মৃত্যুর পর সিংহাসন আরোহন করেন। কিন্তু পিতৃব্য নরেন্দ্র মাণিক্য শিশু রাজাকে ক্ষমতাচ্যূত করে সিংহাসন আরোহনের ৩ বছর পর মারা গেলে রত্ন মাণিক্য আবার সিংহাসন ফিরে পান। ১৬৮৫ সাল খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭১২ খ্রিস্টাব্দ ২৭ বছর রাজ্য শাসন করা এই রাজার পুত্র সন্তান ছিল না। পুত্র সন্তানের আসায় তিনি ১২৫টি বিয়ে করেন। কিন্তু তারপরও তাঁর পুত্র সন্তান হয় নি। এর মধ্যে কোন এক সময় তিনি জগন্নাথপুরের সতের রত্ন মন্দিরের ভিত্তিস্থাপন করেন। এই রত্নমাণিক্যকে হত্যা করে সিংহাসন আরোহন করেন মহেন্দ্র মাণিক্য। দেবমন্দির নির্মাণকাজ তখন ধমকে যায়। মাত্র দুই বছর পর মারা যান মহেন্দ্রমাণিক্য। পরে রত্নমাণিক্যের ভাই দ্বিতীয় ধর্মমাণিক্য সিংহাসন আরোহন করেন। এরপর মোঘল সম্রাটের জামাতা বাংলার নবাব সুজাউদ্দিনের অনুমতিক্রমে মীর হাবিব ত্রিপুরা জয় করেন। নাম হয় চাকলা রোশনাবাদ। সিংহাসন দেয়া হয় মহারাজা জগৎ মাণিক্যকে। তার শাসনের মধ্যে আবার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হয় ধর্মমাণিক্যকে। ধর্মমাণিক্যের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই মুকুন্দ মাণিক্য সিংহাসনে আরোহন করেন। এক ঘটনায় ত্রিপুরার ফৌজদার হাজী মুনসম তাকে বন্দি করলে অপমানে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। তারপর মহারাজা হন জয়মাণিক্য। এর মধ্যে তিনি তিনবার সিংহাসনে আরোহন করেন। পরে মুর্শিদাবাদের নবাব আলীবর্দ্দি খার সনন্দ গ্রহণ করে মহারাজা হন বিজয় মাণিক্য। তাঁর মৃত্যুর পর সমশের গাজি চাকলা রোশনাবাদের অধিপতি হন। ত্রিপুরার রাজধানী উদয়পুর দখল করেন। মুশির্দাবাদের নবাবের সৈন্যরা সমশের গাজিকে বন্দি করেন এবং পরে তার মৃত্যু হয়। সিংহাসনে আসেন কৃষ্ণ মাণিক্য। এর মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার দেওয়ানী লাভ করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর দেওয়ালী লাভের তিন বছর পর কৃষ্ণমাণিক্য ক্ষমতা হারান। বলরাম মাণিক্য চাকলা রোশনাবাদ শাসন করেন। বলরামকে বিতারিত করে আবার ক্ষমতা ফিরে পান কৃষ্ণমাণিক্য। 

১৭৬৫ সালের ১২ আগস্ট দেওয়ানী লাভের চার বছর আগে ১৭৬১ সালে ত্রিপুরা জেলা বৃটিশদের কুক্ষিগত হয়। ১ জানুয়ারি ১৭৭৯ মি. আর. লিক নামে একজনকে রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কৃষ্ণ মাণিক্যের সময় ১৭৬১ সালে জগন্নাথপুরের সতের রত্ন মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।  অষ্টকোণাকার একটি কেন্দ্রীয় কক্ষকে কেন্দ্র করে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়। এই কেন্দ্রিয় কক্ষের উপরেই সুউচ্চ চূড়া। যা প্রায় ১৫ দশমিক ১৫ মিটার উঁচু। তিন তলা মন্দিরের দ্বিতীয় তলার ছাদে ৮টি চূড়া বা রত্ন। তিন তলায়ও ৮টি চূড়া বা রত্ন। উপরের চূড়া বা রত্নটিই মন্দিরের আকর্ষণ। মন্দিরটির নির্মাণকাজ শেষ করে তাতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দারুমূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। এই মন্দিরটির বয়স এখন ২৬৪ বছর! ভূমিকম্পের কারণে এটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। তবে এখনও তা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর এই জগন্নাথপুরে যখন রথউৎসব হতো তখন হাতির মিছিল হতো। জমিদাররা হাতি প্রেরণ করতেন। আরো কতো লোককথা মানুষের মুখে মুখে। 












সর্বশেষ সংবাদ
‘বন্দর বাঁচাতে, করিডোর ঠেকাতে’ চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ এখন কুমিল্লায়
কুমিল্লার জগন্নাথপুরে যখন রথউৎসব হতো তখন হাতির মিছিল হতো
কুমিল্লা বোর্ডে অনুপস্থিত আড়াই হাজার
বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন স্মরণে স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
করোনা আক্রান্ত শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
“আমরা কুমিল্লার তরুণ প্রজন্ম” বুড়িচং উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন, মানবিক কাজের অঙ্গীকার
কুমিল্লার জগন্নাথপুরে যখন রথউৎসব হতো তখন হাতির মিছিল হতো
‘৯ কোটি টাকায় খনন হবে কুমিল্লার ৫ খাল’
‘বন্দর বাঁচাতে, করিডোর ঠেকাতে’ চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ এখন কুমিল্লায়
করোনা আক্রান্ত শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২