নিজস্ব
প্রতিবেদক : ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিশ্বব্যাপী
শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘অনন্য অবদানের’ জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের
সম্মানসূচক ‘ডি লিট’ ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন
দেখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এই নোবেলবিজয়ী বলেছেন, “সেই নতুন বিশ্ব গড়ার সক্ষমতা আমাদের আছে, যেটা আমরা গড়তে চাই।”
বাসস
জানায়, বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে
অধ্যাপক ইউনূসকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইয়াহ্ইয়া
আখতার ডি লিট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টার হাতে।
চট্টগ্রামের
সন্তান ইউনূস তার ১৯৭২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিক্ষকতা করেছেন। অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বও তিনি পালন
করেছেন।
১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ২৮ বছর
ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইউনূস। ক্ষুদ্রঋণের
মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে গ্রামীণ
ব্যাংক ও মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
২০২৪
সালের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে আন্দোলনে নেতৃত্ব
দেওয়া ছাত্রনেতারা মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের হাল ধরার প্রস্তাব দেয়। তাদের
আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৮ অগাস্ট অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব
নেন মুহাম্মদ ইউনূস।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে
অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই বিশ্বকে আমরা সেইভাবে
গড়ে তুলতে পারি, যেভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু সবারই স্বপ্ন থাকতে
হবে—কেমন পরিবেশ সে চায়, কেমন সমাজ সে গড়তে চায়।”
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পটভূমি স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমানে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, তা ‘ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির’ সভ্যতা।
“আমরা যে অর্থনীতি দাঁড় করিয়েছি, তা মানুষকেন্দ্রিক নয়, ব্যবসাকেন্দ্রিক। এই ব্যবসাকেন্দ্রিক সভ্যতা আত্মঘাতী এবং এটা টিকবে না।”
অনুষ্ঠানে
নিজের অতীত স্মৃতি স্মরণ করে ইউনূস বলেন, ১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর এখানে এসে তিনি
আনন্দিত।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ কীভাবে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন
দুর্বিষহ করে তুলেছিল, সে কথা তুলে ধরে ইউনূস বলেন, সেই প্রেক্ষাপটেই
গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগেই গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল।
বাসস
লিখেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবং দেশের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে
এটাই ছিল সবচেয়ে বড় সমাবর্তন, যেখানে ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি
দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজও বক্তব্য দেন সমাবর্তন
অনুষ্ঠানে।