প্রকাশ: বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ১:০৩ এএম |
মাসুদ পারভেজ।।
স্ক্যাবিস! এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ। খোস, পাঁচড়া জাতীয় এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কুমিল্লার গ্রাম থেকে শহর সবখানে। আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে শরীরের কিডনি পর্যন্ত নষ্ট করতে সক্ষম খোস, পাঁচড়াজনিত এই রোগ। নগরীর রেইসকোর্সের বাসিন্দা শিশু তাওহিদ। হাত-পা ছেয়ে গেছে ছোট লাল র্যাশে। চিকিৎসা নিতে বাবার সাথে এসেছেন কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে। তাওহিদের বাবা জামাল হোসেন জানান, তিন ছেলে ও স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই এই রোগে আক্রান্ত। প্রথমে ছেলে তাওহিদ আক্রান্ত হয়। এরপর তার শরীর ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে ছেলে জোনায়েদ, তানজিদ ও স্ত্রী আসমা আক্তারের শরীরে জীবানু ছড়িয়ে পড়ে। হাত,পায়ে শুরুতে ছোট ছোট ঘামাচির মত দেখা দেয়। তীব্র চুলকানি দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গেলে চিকিৎসক এটিকে ছোঁয়াচে চর্মরোগ স্ক্যবিসের কথা বলে। তবে চিকিৎসা নেয়ার পরও কোন সমাধান দেখা যাচ্ছে না। পরিবারের সবাই খুব কষ্ট পাচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানান, কুমিল্লা জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে যাওয়া ৭০ শতাংশই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। শুরুতে শিশুদের মধ্যে থাকলেও এখন সব বয়সীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসা না পেলে আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনি পর্যন্ত নষ্ট করতে সক্ষম খোস, পাঁচড়াজনিত এই রোগ। রোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার পাশাপাশি তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকেও ছড়াতে পারে ভয়াবহ এই চর্মরোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লায় আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক ব্যাধি স্ক্যাবিস। ভয়াবহ এ রোগ শুরুতে ঘামাচির দানা থেকে তীব্র চুলকানি। হাতের তালু, আঙ্গুলে ফাঁক, পেট, ঘাড়, কোমড়সহ দেহের বিভিন্ন ভাঁজে জন্ম নেয়া খোস, পাঁচড়াই স্ক্যাবিসের উপসর্গ। থাকতে পারে ঘা, জ্বর এবং ব্যথাও। আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত চিকিৎসা না নিলে নানা জটিল রোগসহ কিডনির ক্ষতি করে দিতে পারে স্ক্যাবিস। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ার পাশাপাশি তার ব্যবহৃত যেকোন কিছু থেকে সংক্রমিত হতে পারে অন্যরা। এ ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি জেলার মুরাদনগর ও দেবিদ্বার উপজেলায়।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ছোঁয়াচে এ চর্মরোগের সংক্রমণ বাড়ছে। প্রতিদিন তিনি দুই শতাধিকের বেশি চর্মরোগের আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা শতকরা ৭০ শতাংশ রোগি স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। এ রোগ ছোঁয়াচে হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে বা তার ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর ও তোয়ালে থেকেও পরিবারের অন্যদের শরীরেও ছড়ায় এ সংক্রমণটি। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেয়া উচিত। চিকিৎসা না নিলে নানা জটিল রোগসহ কিডনি পর্যন্ত ড্যামেজ করে দিতে পারে এ সংক্রামক ব্যাধি স্ক্যাবিস স্ক্যাবিস।
তবে স্ক্যাবিস চিকিৎসা নিরাময়যোগ্য। সংক্রমণ ঠেকাতে এক ঘরে অবস্থানকারী সব সদস্যদের এক সাথে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আলী নূর বশির। তিনি বলেন, গরম-শীত, গরমের বৃষ্টি এ রোগের মৌসুম। এবার এটা যৌনবাহিতও। চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য স্ক্যাবিসে সংক্রামিত ব্যক্তি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে জীবাণু ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন পুরো পরিবার। স্ক্যাবিস কিডনিকে আক্রান্ত করেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শের সাথে জনসচেতনাও বাড়াতে হবে এ রোগ প্রতিরোধে।