অবশেষে
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষিত
হয়েছে। তার আগে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের জনপ্রিয়
পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে জঙ্গি হামলার ১৮ দিন পরও ভারত সরকার প্রমাণ করতে
পারেনি যে সে ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তান সরকার সরাসরি জড়িত ছিল। পাকিস্তান সে
মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে অবিলম্বে একটি যৌথ তদন্ত দাবি
করেছে। কিন্তু ভারত তাতে এগিয়ে আসেনি।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, জঙ্গি
হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত অপেক্ষা করছিল পাকিস্তানে একটি পুরোদস্তুর সামরিক
অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে। কিন্তু পেহেলগামের দুঃখজনক ঘটনার কারণে
পাকিস্তানের ওপর ভারতের সর্বাত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিল
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যরা। তাই ভারত শেষ পর্যন্ত ৬ মে
ভোররাত থেকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের ৯টি স্থানে সশস্ত্র
আক্রমণ শুরু করে। তাদের মতে, সে ৯টি স্থানে ছিল পাকিস্তানি জঙ্গিদের
আশ্রয়শিবির ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র।
পেহেলগামে জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে
পাকিস্তানের কোনো বক্তব্য শুনতে প্রস্তুত ছিল না ভারত। পাকিস্তান বারবার
বলার চেষ্টা করেছে যে পেহেলগামে হামলা হয়েছে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের ভেতর
থেকেই।
ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আগে থেকেই হুঁশিয়ার
করেছিল যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটতে
পারে এবং তাতে পর্যটকদের ওপর হামলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ পেহেলগামে
হামলা হওয়ার আগ পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরে বহিরাগত পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে
দাঁড়িয়েছিল প্রায় আড়াই কোটি।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, অতি অল্প সময়ের
মধ্যেই তা তিন কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে,
কাশ্মীরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছিল কেন্দ্রীয় দিল্লি
সরকারের ওপর, কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর নয়। কাশ্মীরের পুলিশ
প্রশাসন পরিচালনার কোনো ক্ষমতাই দেওয়া হয়নি স্থানীয় মুখ্যমন্ত্রীকে। অথচ
আশাতীতভাবে কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে গেলেও কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কোনো ব্যবস্থা নেননি। ভারতীয় গণমাধ্যমের একটি
অংশের মতে, ভারতের বর্তমান সরকার বিশ্বব্যাপী এ বিষয়টি প্রমাণ করতে
চেয়েছিল যে কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার অর্থাৎ সংবিধানের ৩৭০
ধারা ও ৩৫ক বিলুপ্ত করায় সেখানে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
বিজেপি
সরকারের অধীনে কাশ্মীরের অধিবাসীদের জীবনযাপন কিংবা বহিরাগত পর্যটকদের
অবস্থান অত্যন্ত নিরাপদ। বর্তমান ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের প্রশাসন অত্যন্ত
শক্তিশালী ও নিরাপদ। তাই জম্মু-কাশ্মীর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা পুলিশ
প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
গত মাসের ২২ তারিখ পেহেলগামে
জঙ্গি হামলা সংঘটিত হওয়ার বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই সেখানে অন্তত চারজন জঙ্গি
অবস্থান নিয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছিল বলে জানা যায়। এমনকি ঘটনার
পর্যালোচনায় এমন তথ্যও জানা যায় যে জঙ্গিদের হাতে ছিল আফগানিস্তানে ফেলে
যাওয়া মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কিংবা কেন্দ্রীয়
গোয়েন্দা সংস্থার হাতে সে ব্যাপারে কোনো তথ্যই ছিল না। এ ব্যাপারে ভারতীয়
গণমাধ্যমের একটি অংশ তাদের প্রতিরক্ষা দপ্তর কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার
যোগ্যতা কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ উত্থাপন করেছে। তারা বলেছে,
পুলওয়ামা কিংবা পেহেলগামে সংঘটিত সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা সম্পূর্ণভাবে
গোয়েন্দা অভিযান কিংবা তৎপরতার অভাবেই ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিরক্ষা
বিভাগের যত ব্যর্থতা বা অজ্ঞতাই থাকুক না কেন, ভারতের বিজেপি সরকার এক
বাক্যে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কার্যকলাপকেই চোখ বন্ধ করে দোষ দিয়ে যায়। এ
বিষয়টি এখন ভারতজুড়েই আলোচনা কিংবা সমালোচনার একটি বিশেষ বিষয় হয়ে
দাঁড়িয়েছে। বিগত ১৮ দিনের মধ্যে ভারত পেহেলগামে সংঘটিত ২৬ জন পর্যটকের
মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গিত সন্ত্রাসীদের কোনো সন্ধান না পেলেও
অত্যন্ত বড় গলায় একটি তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে যে তারা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত
কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের ৯টি স্থানে অবস্থিত তথাকথিত জঙ্গি শিবিরগুলো গুঁড়িয়ে
দিয়েছে। গত মঙ্গল ও বুধবার থেকে তারা সে জঙ্গি শিবিরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র
দিয়ে হামলা চালায় বলে জানা গেছে। অথচ সম্প্রতি পুলওয়ামাতে সংঘটিত জঙ্গি
হামলায় ৪০ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পাল্টা হামলা ও
গোয়েন্দা তৎপরতা চালালেও ভারত কাশ্মীরের নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বিক
বিবেচনায় বড় করে দেখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে কাশ্মীরের রাজ্য সরকার,
স্থানীয় পুলিশ বাহিনী কিংবা এমনকি মুখ্যমন্ত্রীকেও বিশেষ কোনো দায়িত্ব
দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ভারতীয় গণমাধ্যমের অভিযোগ হচ্ছে, বিজেপি সরকার
কাশ্মীরের মুসলিম অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীকে রাজ্য হিসেবে কাশ্মীরের অখণ্ডতা
রক্ষা কিংবা নিরাপত্তার ব্যাপারে মোটেও বিশ্বাস করে না। বর্তমান সরকার
সন্দেহ পোষণ করে যে স্থানীয় মুসলিম নাগরিকদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা
জঙ্গিদের যোগসাজশ রয়েছে।
পহেলগামে সংঘটিত জঙ্গি হামলা কিংবা তৎপরতায়
গণমাধ্যমের একটি অংশের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ভারত কোনোভাবেই কাশ্মীর
সমস্যার সমাধান চায় না। তাদের মতে, বর্তমান সরকার কাশ্মীরের তথাকথিত ইসলামী
জঙ্গিদের উত্তরোত্তর বর্ধিত তৎপরতা দেখিয়ে ভারতব্যাপী হিন্দু ভোটারদের
ঐক্যবদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করতেই বেশি আগ্রহী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘সিন্দূর অপারেশন’ তারই একটি অংশ। গণমাধ্যমের
কারো কারো মতে, যদি তা-ই না হবে তবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আক্রমণ চালাতে
মোদির এই ‘সিন্দূর অপারেশন’ কেন? ভারতে কোটি কোটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ
রয়েছে, যাদের সঙ্গে সিন্দূরের কোনো সম্পর্ক নেই। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ৯টি
তথাকথিত জঙ্গি শিবির আক্রমণের সঙ্গে সাধারণ নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের কোনো
সম্পর্ক নেই। অথচ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকেও ‘অপারেশন সিন্দূরের’ নামে
নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে এরই মধ্যে পাকিস্তানের
প্রায় পঞ্চাশের অধিক সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের সঙ্গে পেহেলগামে নিহত
ব্যক্তিদের কোনো শত্রুতা ছিল না। তাতে পাকিস্তানকে ভারতের অভ্যন্তরে
প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা চালাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সে কারণেই পাকিস্তান
সরকার তার সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনে পাল্টা আক্রমণের ক্ষমতা প্রদান করেছে।
ভারতের তিন থেকে পাঁচটি যুদ্ধবিমান তাদের দেশের অভ্যন্তরেই বিধ্বস্ত হয়েছে
বলে দাবি করা হয়েছে।
গত বুধবার পাকিস্তানের ছয়টি শহরে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র
হামলা চালানো শুরু করেছে। পাকিস্তান সে হামলার শুরুতেই প্রতিরোধ গড়ে
তুলেছে বলে জানা গেছে। তবে পাল্টাপাল্টি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় এক শ
সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যাদের সঙ্গে জঙ্গি তৎপরতার
কোনো সংশ্লেষ নেই। ভারত ও পাকিস্তানকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহবান
জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধে দুই দেশকে
যাবতীয় সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প। চলমান সংঘাতকে খুবই ভয়াবহ
বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি চাই তারা বিষয়টি অবিলম্বে
মিটিয়ে নিক।’ তাদের পাল্টাপাল্টি হামলা কোনো সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনবে
না বলেও তিনি মনে করেন। উভয় দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক
রয়েছে। প্রয়োজনে তাঁর পক্ষ থেকে সহায়তা দিতেও তিনি প্রস্তুত রয়েছেন বলে
উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। এর একটি ন্যায়সংগত সমাধান না হলে পাকিস্তান ভারতের
হামলার প্রতিশোধ নেবে বলে পাকিস্তানের জনগণ মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও রাশিয়া ও চীন কাশ্মীর সমস্যার মধ্যস্থতা
করতে প্রস্তুত ছিল বলে অতীতে বারবার তারা জানিয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের
অসম্মতি তাদেরকে সে দেশের শাসকগোষ্ঠীর অজ্ঞতার কথাই তুলে ধরেছে বারবার।
কাশ্মীরের
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সংঘটিত জঙ্গি হামলা ও ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করার
কারণে ভারত তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ
করে। সেগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক ও বিমান চলাচলের ক্ষেত্র ছাড়াও সিন্ধুর
ঐতিহাসিক পানিচুক্তি বাতিল করে ভারত। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি
ভারতের অসম্মানকে সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল বলে উল্লেখ
করে। পাকিস্তানের বক্তব্য হচ্ছে, পেহেলগামে সংঘটিত জঙ্গি হামলার সঙ্গে তার
কোনো সম্পর্ক নেই। নিরীহ-নিরস্ত্র পর্যটকদের ওপর এ ধরনের হামলায়
পাকিস্তানের জনগণ অত্যন্ত মর্মাহত বলে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া বিগত ১৮ দিনেও
ভারত প্রমাণ করতে পারেনি যে সে ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত। সে দুঃখজনক
জঙ্গি হামলার একটি যৌথ তদন্ত হওয়া উচিত বলে পাকিস্তান যে প্রস্তাব দিয়েছে,
ভারত এখনো তাতে সাড়া দেয়নি। পেহেলগামের হামলার ব্যাপারে ভারত এখন পর্যন্ত
কোনো সমাধানের প্রক্রিয়া চালু করতে পারেনি। পাকিস্তানের ওপর সশস্ত্র
হামলা-পাল্টাহামলা চালানোই এখন পর্যন্ত ভারতের একমাত্র অবস্থান বলে বিবেচিত
হয়েছে, যাতে মূল সমস্যার মোটেও কোনো সমাধান হবে বলে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো
মনে করে না। এ ব্যাপারে অতি সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আহূত এক
জরুরি সভায় বসেছিল স্থায়ী সদস্য দেশগুলো ও অন্যরা। তাদের অভিমত হচ্ছে,
কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে অবিলম্বে নিরাপত্তা পরিষদে ভারত ও পাকিস্তানের জরুরি
আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। কারণ ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ৪৭
নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মীর প্রশ্নে কোনো গণভোট অনুষ্ঠিত হয়নি। কারণ
ভারত কাশ্মীরে গণভোটের বিষয়টি মেনে নেয়নি। তা ছাড়া নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে
ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নিতেও রাজি হয়নি। ফলে বিগত ৭৭ বছর যাবৎ এ
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জাতিসংঘে ঝুলে রয়েছে। এবং প্রতিনিয়ত সে সমস্যাকে
কেন্দ্র করে কাশ্মীরে বারবার ফিরে আসে এক যুদ্ধাবস্থা। ভারত মনে করে
কাশ্মীর একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাজ্য। সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হলে
কাশ্মীর কোনোকালেই ভারতের অংশ হবে না। কাশ্মীরের শাসক বা রাজা হরি সিং নামক
জনৈক হিন্দু ব্যক্তি হলেও পাক-ভারত বিভক্তির বহু আগে থেকেই সেটি ছিল মোগল
সাম্রাজ্যের অংশ। এখন মোগল, ব্রিটিশ বা অন্য কেউই কোনো অঞ্চলের মালিক নন,
গণতান্ত্রিক শাসনের অধীনে প্রকৃত মালিক হচ্ছেন রাজ্যের জনগণ। তাদের
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রায়ই হবে এ ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে বিচার্য বিষয়। ভারত
বিভক্তির পর ইংরেজ শাসকরা এ উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গেলে ভারতীয় শাসকরা মুসলিম
সংখ্যাগরিষ্ঠ কিংবা অধ্যুষিত রাজ্যগুলো একে একে দখল করে নেয়। সেখানে
স্থানীয় জনগণের মতামত নেওয়ার কোনো ধার ধারেনি ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস
সরকার। আর এ ব্যাপারে বর্তমান হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার তো দেশের
সংখ্যালঘুদের কোনো অধিকার দিতেই রাজি নয়।
পেহেলগামে সংঘটিত জঙ্গি হামলার
পর ভারত প্রতিশোধের অভীপ্সায় পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬২ সালে স্বাক্ষরিত
ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিল করে দেয়। আন্তর্জাতিক নদী আইন এ ব্যাপারে
কী বলে তা জানার আগে বিবেচনা করতে হবে সিন্ধু একটি অভিন্ন নদী। সিন্ধু ও
তার শাখা নদীগুলো পাকিস্তানের কৃষিব্যবস্থায় এ অঞ্চলের একমাত্র প্রাণ
সঞ্জীবনী উৎস, সেটি থেকে একতরফাভাবে ভাটির প্রতিবেশী দেশকে ভারত বঞ্চিত
করতে পারে না। এর বিরুদ্ধে প্রয়োজন হলে পাকিস্তানকে জাতিসংঘ এবং পাশাপাশি
আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু চুক্তি বাতিল করার পর
পাকিস্তানও তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১৯৭১ সালে সংঘটিত পাক-ভারত
যুদ্ধের পর (যা থেকে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে) স্বাক্ষরিত শিমলা চুক্তি
স্থগিত বা আপাতত বাতিল করে দেয়। এতে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ শিমলা চুক্তিটি
১৯৭২ সালের প্রথম দিকে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। শিমলা চুক্তির ধারা অনুযায়ী দুই
দেশের মধ্যে বিরাজিত সব সমস্যা (কাশ্মীরসহ) দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার
মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। সে অবস্থায় জাতিসংঘে ঋজু করা ভারত ও
পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান কাশ্মীর ইস্যুটি অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে
পড়ে। বর্তমান সময়ে অর্থাৎ এ মুহূর্তে পাকিস্তান শিমলা চুক্তি স্থগিত বা
বাতিল করার কারণে তার পক্ষে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে জাতিসংঘে
ফিরে যেতে কোনো বাধা থাকবে না। সুতরাং তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করে ভারতের
বর্তমান একগুঁয়ে মনোভাব এবং সিন্ধুসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাতিল
করে দেওয়া পাকিস্তানের জন্য তার আন্তর্জাতিক আইনি অধিকার ফিরে পাওয়ার সুযোগ
করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনসহ বিভিন্ন
আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শ ও সাহায্য নিতে পারে।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক