বাংলাদেশে
আলু, পেঁয়াজসহ এমন কিছু পচনশীল ফসল রয়েছে, মৌসুমে যেগুলোর দাম
অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যায়। কৃষকের তখন মাথায় হাত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন
করা ফসলের তখন যে দাম পাওয়া যায়, তাতে উৎপাদন খরচও উঠে না। আবার মৌসুম শেষ
হতেই সেগুলোর দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকে।
কিছুদিন আগেও আলুর দাম ছিল ৭৮-৮০
টাকা। পেঁয়াজের দাম কখনো কখনো ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কাঁচা মরিচের দাম ছাড়িয়ে
যায় হাজার টাকাও। এর জন্য দায়ী মূলত পর্যাপ্ত সংরক্ষণ সুবিধার অভাব।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত মৌসুমে দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এ বছর
আলুর চাষ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে।
এখন বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা কেজিপ্রতি সাত-আট টাকা লোকসান দিয়ে
বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে তাঁরা হিমাগারেও আলু
রাখতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতে আলুর রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী দেশে আলুর উৎপাদন ছাড়িয়েছে এক
কোটি ৯ লাখ টন। অন্যদিকে চাহিদা ৯০ লাখ টন, যা চাহিদার চেয়ে ১৯ লাখ টন বা
২২ শতাংশ বেশি। গত ৯ বছর ধরে প্রতিবছর কিছু আলু রপ্তানি হলেও তার পরিমাণ
খুবই কম। রপ্তানির পরিমাণ গড়ে প্রতিবছর ৫০ হাজার টনের মতো।
কিন্তু গত
অর্থবছরে আলুর সংকট থাকায় প্রায় এক লাখ টন আলু আমদানিও করতে হয়েছে। উৎপাদন
সংকটে গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১২ হাজার টন। চলতি অর্থবছরের প্রায়
সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ১২ হাজার টনের কাছাকাছি। এমন পরিস্থিতিতে এ বছর
কতটাই বা আলু রপ্তানি করা যাবে। দ্বিগুণ বা এক লাখ টনও যদি রপ্তানি করা
যায়, তাহলেও অতিরিক্ত থেকে যাবে ১৮ লাখ টন।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে
জানা যায়, বর্তমানে কৃষক প্রতি কেজি আলু ১০-১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য
হচ্ছেন। যেখানে তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ২০ টাকা। তাহলে এই লোকসান
কৃষক কিভাবে সামাল দেবেন? সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো সংস্থা যদি দ্রুত
ন্যায্য দামে কৃষকদের কাছ থেকে কিছু পরিমাণে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে রাখে,
তাহলেও কৃষক কিছুটা রক্ষা পাবে। সংকটের সময় তা বাজারেও ছাড়া যাবে। আর শুধু
আলু নয়, আরো কিছু ফসলের ক্ষেত্রে মৌসুমে এমন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ টনের মতো, উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টনের
বেশি। কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এ
কারণে ঘাটতি থাকে পাঁচ লাখ টনের মতো।
আমরা আশা করি, কৃষককে রক্ষায় এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার দ্রুত সম্প্রসারণ করা হবে।