মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২
‘গুলিতে আমার একমাত্র ছেলের বুকটা ফুটো হয়ে গেছে’
শাহীন আলম, দেবিদ্বার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪, ১:৪৯ এএম |

 ‘গুলিতে আমার একমাত্র ছেলের বুকটা ফুটো হয়ে গেছে’



‘বাড়িতে আইলে এই ঘরে আর কেডায় থাকবো, আমারে কেডা ফোন করে বলবো দাদি তোমার লাইগ্যা কি আনমু, তোমার ওষুধ লাগবোনি, ওরে সাগর তুই কইরে আমার আগে তুই কেমনে মরলি ? তরে কেডা গুলি করে মারল ! ঘরের দরজায় বসে নাতির ছবি হাতে নিয়ে কাঁদছেন ষাট বছরের বৃদ্ধা রাজিয়া খাতুন। তাকে সান্তনা দিতে এসে কাঁদছেন পাড়াপ্রতিবেশীরাও। ক্ষোভ ও ঘৃণা জানাচ্ছেন সাগরের হত্যাকারীদের প্রতি।
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকার মিরপুর  ১০ নম্বরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মো.সাগর মিয়া (১৯)। পরে তার বাবা শনিবার দুপুরে সাগরের মরদেহ নিয়ে আসেন গ্রামের বাড়ি দেবিদ্বারে। দুপুরে জানাজা শেষে বাড়ির একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 
নিহত সাগর মিয়া দেবিদ্বার উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের মো.হানিফ মিয়ার একমাত্র ছেলে। বাবা মা ও দুই বোন নিয়ে মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। কিডনি রোগী বাবার চিকিৎসা ও পেটের দায়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সবজি  বিক্রি করতেন। 
সাগরের বাবা আবু হানিফ মিয়া বলেন, শুক্রবার গোলাগুলির দিন আমি বারবার বলছিলাম বাবা তুই আজকে যাইস না, আমার ওষুধ ও ঘরে বাজার নাই হাতেও টাকা ছিল না তাই ভ্যান নিয়ে বের হইছিলো। এরপর আমি বিকালে ফোন করছিলাম, সে আমারে জানায়,  আমি মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় আছি তুমি চিন্তা কইরো না, আমি বলছি তুই বাসায় চলে আয়, আমাকে জানায় বাবা আমি আসতে পারব না, এখানে অনেক গোলাগুলি হচ্ছে। এরপর সন্ধ্যায় ফোন দিলে তার নম্বর বন্ধ পাই। রাত ৮টার দিকে আমি সাগরকে খুঁজতে বের হই। তখনও বাহিরে টিয়ারসেল ও গোলাগুলি চলছিল। পরে রাত ১০টার পর আমি মিরপুর ১০ নম্বরে এসে সাগরের খোঁজ নিলে কেউ একজন বলেন, আপনার ছেলে কি সবজি বিক্রি করত। আমি হ্যাঁ বললে, তিনি একটি প্রাইভেট হাসপাতালের নাম বলে বলল ওখানে গিয়ে খোঁজ নেন, মিরপুরে যারা আহত হইছে এদের প্রায় সবাই ওই হাসপাতালে আছে। আমি দৌড়ে ওই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করলে রাত ৩ টার পর আমার ছেলের লাশ দেখানো হয়। এরপর আমি আর কিছু বলতে পারব না। আমার একমাত্র ছেলের বুকে পাষন্ডরা গুলি মেরেছে, বুক ফুটো হয়ে গেছে। আমার একটি মাত্র ছেলে তাকেও  আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিল। আমি অসুস্থ কখন মারা যাই ঠিক নাই, আমার পুরো সংসারটা শেষ হয়ে গেল। তার মা ও দুই বোন রয়েছে তাদের দেখাশুনা কে করবে বলেই অঝোরে কাঁদছেন আবু হানিফ মিয়া।      
সাগরের ফুফু সাহিদা আক্তার জানান, সাগর আমার একমাত্র ভাতিজা। বাড়িতে আসলে এই ঘরেই থাকত। সাগরের বাবা অনেকদিন থেকে কেডনি রোগে ভুগছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য সাগর লেখাপড়া বন্ধ করে ঢাকায় সৃজনালী সবজি বিক্রি করত। সংসারের একমাত্র রোজগার করত সাগর। সন্তান হারিয়ে আমার ভাই বার বার বেহুস হয়ে পড়ছে। 
দাদি রাজিয়া খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, আমার নাতি বাড়িতে আইলে দুই একদিন থাইক্যা ঢাহা যাওয়ার সময় আমার লগে দুষ্টুমি করত, বলত দাদি তোমারে পরের বার এসে বিয়ে করমু, তুমি রেডি থাইকো, এই বলে হাসাহাসি করে আমার কাছ থেকে বিদায় নিত। এলাকায় সকল ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করত। আমার নাতিরে ফিরাই আইন্না দাও, কেডা আমার নাতিরে মারল তার  তো শত্রু নাই বলে । দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.নয়ন মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত দেবিদ্বারে তিনটি মরদেহ আসার খবর পেয়েছি। ঢাকায় নিহত সাগরের বাড়ি বড়শালঘর গ্রামে। নিহত পরিবারগুলোর খোঁজ খবর রাখছি।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, ঢাকায় নিগত তিন পরিবারের সদস্যদের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আমি নিজে তাদের বাড়িতে গিয়ে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দিয়েছি। সাগরের পরিবারকেও সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। 













সর্বশেষ সংবাদ
ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াই ছিলো নিপীড়নকারীদের উদ্দেশ্য?
পর্নোগ্রাফি মামলার আসামিদের রিমান্ডে চায় পুলিশ
কুমিল্লায় প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ
সেনাবাহিনীর অভিযান কুমিল্লায়৩ হাজার ইয়াবা ও ৩০ লাখ টাকাসহ আটক ১
এবি পার্টি মহানগরের উদ্যোগে চাউল বিতরণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
চালের ড্রাম ছিলো ৩ হাজার ইয়াবা ও ৩০ লাখ টাকা; জব্দ করল সেনাবাহিনী
লালমাইয়ে দুই মাদকসেবীকে সাজা
ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াই ছিলো নিপীড়নকারীদের উদ্দেশ্য?
অবশেষে বন্ধ হলো কুমিল্লা কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা
কে এই ফজর আলী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২