৫ শ’ টাকা চুরির ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে বিচারক ছিলেন আবু তাহের। বিচারে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় অভিযুক্ত সাইমুনকে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে স্কুল থেকে ফেরার পথে আবু তাহেরর পুত্র হোসাইনকে ডেকে নিয়ে কীটনাশক জাতীয় বিষাক্ত তরল খাইয়ে দেয় সাইমুন ও তার ভাই আলাউদ্দিন। ৩১ মে’র এ ঘটনার পর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি অবস্থায় বুধবার (১৮ জুন) মৃত্যুবরণ করে হোসাইন (১২)। চিকিৎসকরা জানায়, হোসাইনকে বিষাক্ত তরল পান করানো ছাড়াও তার গোপনাঙ্গে ইজিবাইকের ব্যাটারির এসিড ঢেলে দেওয়া হয়। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামে ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
এ ঘটনায় ১২ জুন বুড়িচং থানায় হোসাইনের মা শাহিনা আক্তারের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে শিকারপুর গ্রামের মোঃ সোলাইমানের দুই সন্তান আলাউদ্দিন (২২) এবং সাইমুনকে (১৬)।নিহত হোসেন একইগ্রামের কৃষক আবু তাহেরের ছেলে। সে শিকারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো।
নিহত হোসেনের বাবা আবু তাহের বলেন, সম্প্রতি শিকারপুর এলাকার মইনুল হোসেনের মুদি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এই চুরির ঘটনায় একই এলাকার অটোরিকশা চালক সোলাইমানের ছেলে সাইমুনকে অভিযুক্ত করে মইনুল। পরে গ্রাম্য সালিশে আরো চারজন বিচারকের সাথে আমিও বিচারক হিসেবে থাকি। সেখানে সাইমুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয় এবং সাইমুনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই বিচারের জের ধরে গত ৩১ মে সোলাইমানের দুই ছেলে সাইমুন ও আলাউদ্দিন আমার ১৪ বছর বয়সী ছেলে হোসেইনকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের বাড়িতে। হোসেইনের হাত পা বেধে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক বিষপান করিয়ে তার অণ্ডকোষে এসিড ঢেলে দেয়। পরে আমরা হোসেইনকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেইখানে ৫ দিন ছিল। তারপর দুইদিন ছিল একটা বেসরকারি হাসপাতালে। হোসেইনের অবস্থায় আরো খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে আবার সদর হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে আসি। সেখানে ভর্তি অবস্থায় বুধবার হোসেন মারা যায়।
হোসেইনের মা শাহেনা বেগম বলেন, আমার ছেলে ১২ দিন ধরে আইসিইউতে থেকে জীবন মরণের সাথে লড়াই করে আজকে মারা গেছে। চুরির বিচার করতে গিয়ে আজ আমি আমার নিষ্পাপ ছেলেকে হারিয়েছি। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীর বিচার চাই।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের মেডিসিন কনসাল্টেন্ট অরূপ কুমার রায় জানায়, বিষক্রিয়ায় তার গলা ফুলে গিয়েছিল, শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। অন্ডকোষ ঝলসে গিয়েছিল সম্পূর্ণ। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টেই জানা যাবে কি ধরনের বিষপ্রয়োগ কিংবা রাসায়নিক ব্যবহার হয়েছিলো।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় দুই ব্যক্তির নামোল্লেখ করে মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালে মারা যাওয়া হোসাইনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।