জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা যেভাবে টাইমলাইন ধরে ধরে ভোটের দাবি করছেন,  ঠিক সেভাবে টাইমলাইন ধরে ধরে ভোটের সঙ্গে সংস্কার ও বিচারের দাবি করুন। আপনারা যেভাবে বলছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চান ঠিক সেভাবেই বলুন ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিচার ও সংস্কার চান তাহলে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকবো।
শনিবার (২৮ জুন) বিকালে দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত জাতীয় নাগরিক পার্টির একটি পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 
ওই সভায় হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, জুলাই আগস্টের পূর্বে মাহফিলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হতো,  হুজুরদেরকে দাড়ি ধরে টেনে টেনে মাহফিল থেকে বের করে দেওয়া হতো, মাইক বন্ধ করে দেওয়া হতো। আমরা দেখতাম আমাদের এখানে একশো-দেড়শ কোটি টাকা দিয়ে এমপি হতো। যে ছেলেরা জুলাই-আগস্টে রাস্তার মধ্যে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হয়েছে ওরা এমপি হতে চায় নাই। ওরা ক্ষমতা চায় নাই। ওরা দেশের সংস্কার চেয়েছে, ওরা চেয়েছে দেশে আর কখনো আলেম-ওলামাদের অপদস্ত হতে হবে না। ওরা চেয়েছে দেশে বাক স্বাধীনতা থাকবে। ওরা চেয়েছে ক্ষমতা কে প্রশ্ন করা যাবে। ওরা চেয়েছে একশ-দেড়শো কোটি টাকা দিয়ে ক্ষমতা কিনতে পাওয়া যাবে না। ওরা চেয়েছে ভোটের অধিকারের জন্য রাস্তায় এসে কেউ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হবে না। 
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ক্ষমতা, দায়িত্ব এগুলো হচ্ছে আমানত। আপনারা আমানতের খেয়ানত করবেন না। আপনাদের কাছে একদিন ক্ষমতা থাকে। আপনারা যদি একদিন ওই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তাহলে পরবর্তী পাঁচ বছর নেতা যদি আপনাদেরকে নির্যাতন করে তাহলে আপনাদের বলার কোন ভাষা থাকবে না। সেজন্য একদিনের জন্য ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার করুন। ভোটের আগে আমাদের কিছু কাজ রয়েছে। আমাদের শহীদদের রক্তের দায়ভার রয়েছে। এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা আমরা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি নাই। এখনো পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার হয় নাই। এখনও পর্যন্ত হাসিনা মিডিয়া মুক্ত হয়নি। মিডিয়ার মধ্যে এখনো  ফ্যাসিবাদের দোসররা লুকিয়ে আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা লুকিয়ে আছে। আওয়ামী লীগের লেসপন্সোদের মধ্যে  এখনো পর্যন্ত দেখবেন না তারা কোন ক্ষমা চেয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেউ ক্ষমা না চাইবে তাদের সঙ্গে রিকনসিলিয়েশনের (সমঝোতার) প্রশ্নই আসে না। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বলতে চাই, আপনারা যে গতিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঠিক একই ভাবে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আওয়ামীলীগ মুক্ত করুন, মিডিয়া গুলোকে আওয়ামীলীগ মুক্ত করুন,  বিচার বিভাগকে আওয়ামীলীগ মুক্ত করুন, যেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জুডিশিয়াল ট্রায়ালের এর মধ্য দিয়ে আর কাউকে বিনাবিচারে ফাঁসির কাষ্ঠে মৃত্যুবরণ করতে না হয়। আমি প্রত্যাশা করব এই মাটিতে আমার জন্ম, সবাই দল-মতের উর্ধে উঠে সবাই আমাকে সমর্থন দিবেন। আমরা আপনাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করতে চাই, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা যা চিন্তা করে সেটা মুখে বলেনা, যেটা মুখে বলে সেটা করে না। এটার নাম দিয়েছে তাঁরা ‘রাজনীতি । তারা প্রতারণাকে কৌশল  হিসেবে চালিয়ে দেয়। কিন্তু এনসিপি নিশ্চিত করতে চায় আমরা যা চিন্তা করব সেটাই বলবো আর যেটাই বলবো সেটাই আমরা বাস্তবায়ন করবো। আমরা প্রতিহিংসা রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা। রাস্তায় পোস্টার ছেঁড়ে ফেলার প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ  বলেন, আপনার আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন, মনে রাখবেন  আল্লাহ যাকে সম্মান দেয় আল্লাহ যাকে উপরে উঠায় আপনারা তার পোস্টার ছিঁড়ে নিচে নামাতে পারবেন না।  প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যে সোহাদ্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকবে। আপনি যদি কোন ভাল কাজ করেন আমি হাসনাত আবদুল্লাহ আপনাকে সহযোগিতা করব আর আমি যদি কোনো ভালো কাজ করি আমি আপানাদের কাছে সহযোগিতা চাইব। রাজনীতি এটা না আপনি কতজনকে শত্রু বানাইলেন, রাজনীতি হচ্ছে সেটা আপনি কতজন শত্রুকে বন্ধু বানাতে পারলেন। আপনি আমার বিরুদ্ধে মিছিল দিবেন, আপনি আমার পিঠের চামড়া তুলতে চাইবেন, আমি আপনাকে বুকে টেনে নেব। আপনি আমার নিপাত চাইবেন আপনি আমাকে পাথর ছুঁড়বেন, আমি আপনাকে ফুল ছুঁড়ে আবার আমার বুকে টেনে নেব। এই তরুণ প্রজন্ম সহিংসতা রাজনীতি করে না। কিন্তু যেখানে অন্যায় আসবে সেখানে কখনো আমরা আপোষ করব না।  হাসিনা যেভাবে আমাদেরকে কিনে নিতে পারে নাই,  ক্ষমতা যেভাবে কিনে নিতে পারে নাই।  কোন অন্যায় আবদার আমাদেরকে কিনে নিতে পারবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই দেবিদ্বারের মাটিতে আমরা ভেসে আসে নাই। এই দেবিদ্বারে মাটিতে আমরা ফরেন বডি না । এই মাটিতে আমাদের জন্ম, এই মাটিতে আমাদের উত্থান, এই মাটিতে আমাদের বিকাশ। আমরা ঢাকা থেকে এসে জুড়ে বসি নাই। সুতরাং আমাদের বিরুদ্ধে যদি অন্যায় ভাবে কোন ধরনের কুৎসা রটানো হয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটার বিরোধিতা আমরা করব। 
পরিচিতি সভার আয়োজক কমিটির প্রকৌশলী মোহাম্মদ নোমান সরকারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দেবিদ্বার উপজেলা নাগরিক পার্টির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক জামাল মোহাম্মদ কবীর, জাতীয় যুবশক্তি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক নাজমুল হাসান নাহিদ, দেবিদ্বার উপজেলা নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি শামীম কাওসার প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন মাহমুদুল হাসান ও মাজহারুল ইসলাম।