নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় রেমালের
প্রভাবে রাজধানীসহ দেশজুড়ে যে বর্ষণ চলছে, তা আরও ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে
পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরপর বুধবার থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা
বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ঘূর্ণিঝড়
রেমাল দুর্বল হয়ে স্থল নিস্নচাপে পরিণত হওয়ার পর মোটামুটি সারাদেশেই বিরাজ
করছে; এর ফলে মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে
পারে।
“তবে আজকের মত ভারি বৃষ্টি কাল হবে না। আজ সারাদেশেই ভারি বৃষ্টি
হচ্ছে। ২৮ তারিখের পর একটু একটু করে দেশের তাপমাত্রা বাড়বে। এ মাসে
তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই, তবে জুনে বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েক দফা থাকতে পারে
অল্প সময়ের জন্য।”
সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায়
দেশেসর্বোচ্চ ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। এসময়ে ঢাকায়
বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭১ মিলিমিটার।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে
বলা হয়েছে, সারাদেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ
হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে
কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
রোববার নেত্রকোণা ও সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
বৃষ্টিতে দুর্ভোগ:
সকাল
থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরীর অফিসগামী মানুষ।
মিরপুরের কালশীতে সকাল থেকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় তাদের।
ভারি বৃষ্টির ফলে তাদের অনেকেই ভিজে যান, কেউ কেউ আশ্রয় নেন ফ্লাইওভারের নিচে।
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাহিরা জান্নাত। তিনি সেখানকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা।
তাহিরা
বলেন, “ছাতায় মানছে না এমন বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় অর্ধেক ভিজে গেলাম।
তারমধ্যে গাড়ি পাচ্ছি না। কখন গাড়ি পাব, কখন অফিসে যাব বৃঝতেছি না। সিএনজিও
পাচ্ছি না। এভাবে ভিজে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।”
এসময় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা না গেলেও মিরপুরের কালশী থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত বেশ জনজট ছিল।
এদিকে
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাখালীর কাঁচাবাজার এলাকা থেকে মগবাজার যাওয়ার জন্য
অটোরিকশা খুঁজছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী জয়নুল আহমেদ। এটুকু দুরত্বের জন্য
চালক ২৫০ টাকা ভাড়া দাবি করেন, বাধ্য হয়ে তিনিও যেতে রাজি হন।
সাধারণত ১০০-১৫০ টাকায় অন্যান্য দিন সেখানে যাওয়া যায়।
গত
২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি
লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ,
নি¤œচাপ, গভীর নি¤œচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন
এর নাম দেওয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল
ঘূর্ণিঝড়ে।
এর প্রভাবে রোববার বিকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক
বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরদিন সকাল থেকে সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে
দুর্বল হয়ে আসে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল।
ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পাঁচ জেলায় অন্তত আটজনের মৃত্যুর খবর এসেছে; বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন দুর্গত জেলাগুলোর দেড় কোটির বেশি গ্রাহক।
স্বাভাবিকের
চেয়ে সাত-আট ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের চাপে সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ কয়েক
জেলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপকূলীয় নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত
হয়েছে শত শত গ্রাম।
এছাড়া খুলনার দাকোপ ও কয়রা এলাকায় রোববার রাতজুড়ে
ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের তা-বে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য এসেছে। সেই
সঙ্গে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের; ভেঙে গেছে কয়েক’শ কাঁচা ঘরবাড়ি ও
দোকানপাট।