ঈদ
মানেই আনন্দ। আর এই আনন্দঘন মুহুর্তে যদি পাওয়া যায় লম্বা ছুটি তাহলেও আর
কথাই নেই। ৩০দিন রোজা রেখে ঈদগাহে নামাজ আদায়ের পর যখন অফুরন্ত সময় হাতে কে
বা ঘরে বসে থাকে। তাইতো পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ভ্রমন
পিপাষুরা ছুটে গেছেন বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে।
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও
সংস্কৃতিতে এগিয়ে থাকা কুমিল্লা দেশ-বিদেশে পর্যটন জেলা হিসেবেও বেশ খ্যাতি
পেয়েছে। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী শালবন বিহার, বৌদ্ধমন্দির, রূপবান মুড়া,
বার্ড এর এর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বিনোদন স্পট। ওই বিনোদন স্পটে
জেলার গন্ডি পেড়িয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার দর্শণার্থী।
লম্বা
ছুটিতে শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে সব বয়সীদের মিলন মেলায় পরিণত
হয়েছে জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো। আনন্দে মেতেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল
সম্প্রদায়ের মানুষ। বিনোদনে একাকার হয়ে গেছে ধনী-গরীবের ভেদাভেদ।
পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়ে আনন্দ উল্লাসে
কেটেছে ভ্রমন পিপাষুদের।
আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় গ্রীষ্মের প্রচন্ড
খড়তাপ উপেক্ষা করে যেমন এসেছেন দর্শণার্থীরা তেমনি ওয়াটার জোনের পানিতে গাঁ
ভাসাতেও ভুল করেনি বিনোদন প্রেমী দর্শণার্থীরা।
জেলার নগর উদ্যান বা
ধর্মসাগরপাড় ছাড়া শহরের ভিতর তেমন কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় কোটবাড়ি
এলাকাস্থ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের পদচারণা ছিল বেশ চোখে পড়ার
মতো। এর মধ্যে প্রতœতাত্তিক নিদর্শন রাজবাড়ি, যাদুঘর, কোটিলামুড়া,
রূপŸানমুড়া বা শালবন বিহার। সরকারি ওই বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি কোটবাড়ি
এলাকায় বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানা উদ্যোগে বেশ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র
গড়ে উঠায় ভ্রমন পিপাষুদের ভ্রমন তৃষ্ণা মেটাচ্ছে ওইসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোত।
এর মধ্যে রয়েছে ডাইনোসর পার্ক, ব্লু ওয়াটার পার্ক, সেনা বাহিনী পরিচালিত
রূপসাগরের সাথে পাল্লা দিয়ে সালমানপুরে গড়ে উঠা ম্যাজিক প্যারাডাইস নজর
কেড়েছে সবার। সেখানের কৃত্রিম ডাইনোসর, পাহারী পরিবেশ, বিভিন্ন রাইড এর
সাথে বাড়তির মাত্রা যোগ করেছে ওয়াটার জোন। যে কারণে আলোচনার শীর্ষ থাকা
ম্যাজিক প্যারাডাইসে পদর্শনার্থীদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এছাড়া
শহরের বাহিরে ময়নামতি সেনা নিবাস এলাকার রূপসাগর, গোমতি নদীর পাড়ে পালপাড়া
ব্রীজ এলাকা, লালমাই লেক লেন, নূরজাহান পার্ক, সদর দক্ষিণের লালবাগ এলাকার
ইকোপার্ক ও নতুন করে গড়ে উঠা চান্দিনার ‘আপন বাড়ি’ ইকোপার্কে ছিল হাজার
হাজার দর্শনার্থীদের পদচারণা।
ভ্রমনে আসা মাঈসা ইসলাম জানান, এবারের
ঈদের ছুটি লম্বা। তাই কোন দিকে না তাকিয়ে ছুটে এসেছি নরসিংদী থেকে। স্বামী,
সন্তানদের সাথে যুক্ত আছে ননদ ও দেবরাও। বলতে গেলে পুরো পরিবারই চলে এসেছি
ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার কোটবাড়ি ও শালবিন বিহার দেখতে। এখানে আসার পর
ম্যাজিক প্যারাডাইস ছিল আমাদের অতিরিক্ত আনন্দের কারণ।
ম্যাজিক
প্যারাডাইসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুদাব্বির হোসেন নাছির জানান, ঈদের দিন ও
ঈদের পরের দিন পর্যকট ছিল চোখে পড়ার মতো। তারপর থেকে কিছুটা কমতে শুরু
করে। আমাদের এখানে দর্শণার্থীরা সুযোগ সুবিধা বেশি পাওয়ায় আসেও বেশি। তীব্র
তাপদাহে আমাদের ওয়াটার জোন দর্শণার্থীদের দৃষ্টি কেড়েছে।
চান্দিনার
‘আপন বাড়ি’ ইকোপার্কের ম্যানেজার খন্দকার মিনহাজুল হাসান জানান, আমরা দুই
বছর আগে এই পার্কটি উদ্বোধন করেছি। এরই মধ্যে দর্শনার্থীদের ব্যাপক সাড়াও
পেয়েছি। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি বহিরাগতরাও আসছে আমাদের এই বিনোদন স্পটে।
কুমিল্লা ময়নামতি যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান শাহিন আলম জানান, গত ৪ দিনে
শালবন বিহার ও যাদুঘরে অন্তত ৩২ হাজারের বেশি দর্শণার্থীদের মাঝে টিকেট
বিক্রি হয়েছে। শিশু- কিশোর, ছাত্র-ছাত্র ও বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন অন্তত
সহ¯্রাধিক দর্শণার্থী ছাড়াই প্রায় ৯ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
গ্রীষ্মের এমন তাপদাহ না থাকলে হয়তো আরও বেশি দর্শণার্থী ভিড় জমাতো এই
বিনোদন স্পটে।
এদিকে, ঈদকে ঘিরে প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারী। তাতেও বেশি খুশি ভ্রমন পিপাষুরা।