মিয়ানমারের
ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ)
লড়াই বিরতিহীনভাবে চলছে। এ কারণে টানা গুলিবর্ষণ, মর্টার শেল নিক্ষেপসহ
বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি
উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় এমন শব্দ শোনা যাচ্ছে।
মিয়ানমার
থেকে ছোড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে এপারে বাংলাদেশের বসতঘরে। গতকাল
সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের দুটি বসতঘরে মর্টার
শেল এবং আরও পাঁচটি ঘরে গুলি এসে আঘাত হেনেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও
নিরাপদ আশ্রয়ে সীমান্ত এলাকা ছেড়েছেন কিছু লোক। দুপুরে বান্দরবানের জেলা
প্রশাসক মো. শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তবর্তী এলাকা
থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য তিন দিন আগে থেকে বলা হচ্ছে।
আজ আবারও ওই সব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
কক্সবাজারের
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ
করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে তাঁদের সরিয়ে আনা হবে।
ঘুমধুম ইউপির ৫
নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার
দিকে ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজারসংলগ্ন ছৈয়দ নুরের বসতঘরে একটি মর্টার শেল এসে
পড়েছে। এতে ঘরটির জানালা ভেঙে গেছে ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। একই সময়ে ঘুমধুম
উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়িতে আরও একটি
মর্টার শেল এসে পড়েছে। এ সময় লাগাতার গুলি এসে পড়েছে এপারে। ঘুমধুম
সীমান্তের নজরুল ইসলামের বাড়ি, রহমতবিল-সংলগ্ন আবদুল মান্নানের বাড়িসহ
পাঁচটি বাড়িতে গুলির আঘাত লেগেছে।
এর আগে সোমবার ঘুমধুম ইউনিয়নের
জলপাইতলী গ্রামে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হন এক
বাংলাদেশিসহ দুজন। এর পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এলাকার
লোকজন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।
উখিয়ার পালংখালী
ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সোমবার রাত থেকে দুই পক্ষের
লড়াইয়ের ভয়াবহতা বেড়ে গেছে। এত কম্পন আমরা আর দেখিনি। একেকটি গোলা
নিক্ষেপের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছেন
লোকজন।’ তিনি জানান, ঘুমধুমের মধ্যমপাড়া, জলপাইতলী, ম-লপাড়া, নয়াপাড়া,
কোনারপাড়া, পশ্চিম কুল, বেতবুনিয়া বাজারপাড়া, পাশের পালংখালী ইউনিয়নের
উখিয়ার ঘাট, পূর্ব ফাঁড়ির বিল, নলবনিয়া, আঞ্জুমানপাড়া, বালুখালী ও দক্ষিণ
বালুখালী এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছে। কোনোভাবেই বিস্ফোরণ বন্ধ হচ্ছে না। এ
পরিস্থিতিতে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে আসছেন অনেকেই। তাঁদের স্থানীয়
লোকজন আটক করে বিজিবির কাছে সোপর্দ করছেন। এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকা
ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
ঘুমধুম ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য
মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার
বাইশ পারি তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া থেকে ২০টি পরিবার, ভাজাবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া থেকে
৩০টি পরিবার, তুমব্রু কোনারপাড়া থেকে ৩০টি পরিবার, ঘুমধুম পূর্ব পাড়া থেকে
২০টি পরিবার, তুমব্রু হিন্দুপাড়া থেকে ১০টি পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে
পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।’
ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা কয়েক দিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী।
এমন
পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য
ছাড়াও পালিয়ে আসছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস কর্মী ও আহত সাধারণ
নাগরিকেরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের
(বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ
তথ্যমতে, ২২৯ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে পালংখালী সীমান্ত দিয়ে
এসেছেন ১১৪ জন। এখানে শুধু বিজিপি সদস্য নন, সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস
সদস্য ও আহত মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিক আছেন। এ মুহূর্তে কতজন আহত আছেন, তা
জানাতে পারেননি তিনি।