
গত
২১.১২.২৫ইং রোজ রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলন
কক্ষে ‘ওয়াশ ইন এডুকেশন এন্ড হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ সার্ভেÑ২০২৪’ শীর্ষক
জরীপ প্রকাশ করা হয়। জরীপ অনুসারে, নিরাপদে মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
নিশ্চিত করতে পেরেছে মাত্র ৩৩.৯ শতাংশ স্কুল এবং ৪৫.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা
প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাকেন্দ্র ও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে
মানববর্জ্য পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে অথবা ঝুঁকিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে। এতে
রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। জরিপের একটি বড় চিত্র হলো, উন্নত পানির উৎসে
প্রবেশগম্যতা তুলনামূলক বেশি, ৯৫.৪ শতাংশ স্কুল এবং ৮৭.৫ শতাংশ
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের উন্নত পানির উৎসে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বলে
জানিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক পরিভাষায়, পানি সেবা তখনই মৌলিক বলে গণ্য হয়,
যখন সেই উন্নতি পানির উৎস প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনের ভেতরে থাকে এবং সহজে
ব্যবহারযোগ্য হয়। এই সংকট পূরণ করতে পারছে ৮৬.১ শতাংশ স্কুল এবং ৭০.৫ শতাংশ
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)
জরিপটি আরও বলছে, জরিপে দেশের আটটি বিভাগ, ৬৪ টি জেলা তথ্য সংগ্রহ করা
হয়েছে। যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং
বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। প্রতিনিধিত্বমূলক তথ্য নিশ্চিত
করার জন্য ওয়াটশন সূত্র অনুসারে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ২০২৪ সালের ২৬
জুন থেকে ১৭ই জুলাই পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে স্যানিটেশন খাতে বরাদ্দ অত্যন্ত সীমিত। জরিপ বলছে, ওয়াশ খাতে
বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১১.১ শতাংশ স্কুলে এবং ৩৪.৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা
প্রতিষ্ঠানে উন্নত পানির উৎসের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার মত পর্যাপ্ত
আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় বিদ্যমান সুবিধার টেকসইতা ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে টয়লেটের সংখ্যা
তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও এর ব্যবহারযোগ্যতা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং
পানি-সাবান সুবিধা অনেকক্ষেত্রে অনুপস্থিত। দেশের ৯০.৬ শতাংশ স্কুল এবং
৯৮.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অন্ততঃ একটি টয়লেট আছে। তবে মৌলিক
হাতধোঁয়া সুবিধা, যেখানে পানি ও সাবান ব্যবহারযোগ্যভাবে থাকে Ñএই সেবা
নিশ্চিত করতে পারছে মাত্র ৫১.৭ শতাংশ স্কুল এবং ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা
প্রতিষ্ঠান।
নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য সহায়তায় সেবা মান অত্যন্ত সীমিত।
জরিপে দেখা গেছে দেশের স্কুলগুলোর মাত্র ২০.৭ শতাংশে কিশোরীদের জন্য পৃথক ও
নিরাপদ টয়লেট রয়েছে মাত্র ৬.৯ শতাংশে যেথায় স্কুলে মাসিক স্বাস্থ্যসেবার
মৌলিক সুবিধা আছে। ফলে কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হয়।
তাদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য
বাড়ে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি রয়েছে। স্কুলগুলোর ৭৮.৩
শতাংশ উপযুক্ত কঠিন বর্জ্য নিস্পত্তির দাবি করলেও স্বাস্থ্যসেবা
প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ২৫.৪ শতাংশ। বিপজ্জনক চিকিৎসা বর্জ্যরে
নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় মৌলিক মানদন্ড পূরণ করতে পারে এমন স্বাস্থ্যসেবা
প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অত্যন্ত কম। জরিপে দেখা যায়, ৪১.৬ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা
প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য পোড়ায়। এই প্রক্রিয়া পরিবেশদূষণ ছাড়াও
রোগ সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রতিনিধিত্তমূলক তথ্য নিশ্চিত করার জন্য
আধুনিক সূত্র অনুসারে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ২০২৪ সালের ২৬ জুন থেকে
১৭ জুলাই পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের তথ্যে সেনিটেশন ডাটাও সংগৃহিত হয়। প্রতিবেদনে
আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে যৌথভাবে স্যানিটেশন, পানি
সরবরাহ ও হাতধোঁয়া সুবিধা হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে ৩.২ শতাংশ
এবং গ্রামে ০.৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে এসব সুবিধা আছে। পানিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে
সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী বিভাগ ৮১.৯ শতাংশ এবং সবচেয়ে পিছিয়ে ময়মনসিংহ
বিভাগ ৬১.৯ শতাংশ।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে
স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। বিবিএস
জরিপের তথ্যসমূহকে একত্রিত করলে যে চিত্রটি ভেসে উঠে তা হচ্ছে দেশের ৭১.৪
শতাংশ স্কুলে প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নাই।
মাত্র ২৮.৬ শতাংশ স্কুলে উন্নতমানের টয়লেট আছে। নিরাপদ মানব বর্জ্য
ব্যবস্থাপনায়ও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিরক্ষামূলক
ব্যবস্থার বিষয়ে অবগত প্রতিষ্ঠানের হারও খুব কম। প্রতিবেদনটি সরকারের নীতি
নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের
পরিবেশ উন্নয়নে জাতিকে সর্বোত্তম নির্দেশনা দিবে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
