
আগস্ট থেকে নভেম্বর- এই চার মাস টানা রপ্তানি আয় কমেছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য কঠিন সতর্কবার্তা। দেশে শিল্প পণ্য উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। রপ্তানি মূল্য সেই হারে বাড়েনি। নতুন ক্রয়াদেশ পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। অনেক কারখানার পুরোনো অর্ডারও বাতিল হয়েছে। অনেকে শ্রমিকের বেতন-ভাতাসহ কারখানার নিয়মিত খরচ মেটাতে পুঁজি ভেঙে পথে বসেছেন। লোকসানের ভার নিতে না পেরে অনেকে বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। রপ্তানি খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতেও শুল্ক কর, ভ্যাটে ছাড় নেই। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো হয়নি। এলসি খোলাতেও কঠোরতা আছে। ডলারের উচ্চমূল্যে চাপে থাকা রপ্তানি খাত এখন বেহাল দশা। রপ্তানিতে মন্দাভাব সত্ত্বেও রপ্তানিকারকরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। তারা রপ্তানি আয় বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা বলেছেন। এর জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। রপ্তানি খাতের আয় বাড়াতে সরকারের কাছে নীতিগত সহায়তা ও প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন কারণে রপ্তানি খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান বের করা। এক্ষেত্রে সরকারকে কিছু ছাড় দিতে হবে। সহযোগিতা বাড়াতে হবে। ঠিকমতো পদক্ষেপ নিতে পারলে রপ্তানি বাড়বে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পণ্য রপ্তানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নভেম্বরে শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি খাতগুলোর মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ছাড়া বাকিগুলোর রপ্তানি আয় কমেছে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী গত নভেম্বরে ৩১৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ৫ শতাংশ কম।
রপ্তানি হ্রাসের পেছনের কারণ হিসেবে বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে দায়ী করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি আয় বাড়াতে হলে রপ্তানিমুখী কোন খাতের কী সমস্যা তা পৃথকভাবে চিহ্নিত করে সমাধানে যেতে হবে। বিশেষভাবে পণ্যের বহুমুখীকরণ, নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং রপ্তানি সহায়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নও জরুরি।
দেশে রপ্তানি আয় আয় কমেতে থাকলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। সরকারকে রপ্তানি আয় বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রপ্তানি জাত পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। সরবরাহ সক্ষমতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রসারণ ঘটাতে হবে। দেশের রপ্তানি খাতে গতি ফিরিয়ে আনতে হলে শুল্ক কর, ভ্যাটে ছাড় দিতে হবে। রাজস্ব অব্যাহতি বাড়াতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে হবে। বন্দরগুলোকে বাড়তি শুল্কমুক্ত করতে হবে। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। দেশের বেহাল রপ্তানি খাতকে পুনর্জীবিত করতে সরকার প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা বাড়াবে- এটাই প্রত্যাশা।
