
অন্তর্বর্তী সরকারের
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত মঙ্গলবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি
পুনর্ব্যক্ত করেন। নির্বাচন সত্যিকার অর্থে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক,
শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানান। রাজনৈতিক দলের
ভোটপ্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে এমন একটি সুষ্ঠু,
গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন যাতে দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক
প্রক্রিয়ার প্রতি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন ও
গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে
যাচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা কোন ধরনের রাষ্ট্র প্রত্যাশা করি
তা নির্ভর করবে গণভোটের ফলাফলের ওপর। এ ভোটের মাধ্যমে ঠিক হবে নতুন
বাংলাদেশের চরিত্র, কাঠামো ও অগ্রযাত্রার গতিপথ। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও
গণভোটকে সামনে রেখে প্রশাসনকে আরও কার্যকর, নিরপেক্ষ ও নির্বাচনি পরিবেশের
উপযোগী করতে সরকার মাঠ প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনে বেশ কিছু রদবদল করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, এ পরিবর্তনগুলো কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগপ্রসূত
নয়। এগুলো করা হয়েছে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং পেশাগত সক্ষমতার ভিত্তিতে। লক্ষ্য
একটাই, দেশের প্রতিটি ভোটার যেন ভোট দিতে পারেন নিরাপদ পরিবেশে, ভয়মুক্ত
মনে এবং সর্বোচ্চ স্বাধীনতায়। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে আরও কোনো
পদক্ষেপ প্রয়োজন, তা কমিশন অবশ্যই গ্রহণ করবে বলে তিনি জানান।
মুক্তিযুদ্ধে
বিজয়ের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার যে নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল, বিগত বছরগুলোতে তা
স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদে ম্লান হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে
আবারও একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম গণতান্ত্রিক
রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে বলে তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার করেছে।
নাগরিক অনুমোদন পেলেই এটি কার্যকর হবে। গণভোটের হা-না ভোটের মাধ্যমে
সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেবে সাধারণ জনগণ। প্রধান উপদেষ্টা তার
ভাষণে বলেন, ভোটের ওপর নির্ভর করছে আপনার আমার সবার ভবিষ্যৎ। ভোট রক্ষা করা
দেশ রক্ষা করার সমান দায়িত্ব। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম বড় পদক্ষেপ
বিচার বিভাগের প্রশাসনিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে বিচার বিভাগকে
স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামো দিয়ে পৃথক সচিবালয় গঠন করা হয়েছে। এ পদক্ষেপ
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সংস্কারের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। এখন
থেকে আর রাজনৈতিক কোনো চাপ বা প্রভাবের মাধ্যমে বিচারিক স্বাধীনতা যাতে
ব্যাহত না হয়, সে নিশ্চয়তাও আরও জোরদার হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে
উল্লেখ করেন।
নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
আমরা লক্ষ করছি, তফশিল ঘোষণার পরের দিনই রাজধানীতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র
ওসমান হাদির ওপর হত্যাচেষ্টা হয়েছে। এখনো তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
রয়েছেন। এ ঘটনা ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা রাজনীতিকদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে।
অনেকেই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের
প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানো, নির্বাচনে সবার জন্য সমান
অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। আমরা আশা করি, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অবাধ,
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে এবং দেশ আবার গণতন্ত্রের পথে
পুনর্যাত্রা শুরু করবে।
