শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা: ধৈর্য ও সংযমের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আধিপত্যবাদবিরোধী প্লাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েসবাইকে ধৈর্য ধারণ ও সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহ্বান জানান।তিনি বলেন, ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্বে নেবে রাষ্ট্র।
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের কাছ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির মৃত্যুর খবর পাওয়ার তথ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই অমর সৈনিককে মহান রাব্বুল আলামিন শহীদ হিসেবে কবুল করুন-এই দোয়া করি।”
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদি পরে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গড়ে তুলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আলোচনায় আসেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতেও নিয়মিত আমন্ত্রণ পেতে থাকেন তিনি। তার যুক্তিতর্কের অনেক ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাসখানেক আগে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ওসমান হাদি। তিনি গত নভেম্বরে নিজের ফেসবুক পেজে বলেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাকে ফোনকল করে এবং মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই পোস্টে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ ক্যাডাররা তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। তবে প্রাণনাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ইনসাফের লড়াই থেকে পিছিয়ে যাবেন না তিনি।
১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় প্রচারে যাওয়া ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসী। রিকশায় থাকা হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর দেখে সেখান থেকে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যায় সরকার।
তার চিকিৎসা দেখভালের জন্য প্রতিনিধিও পাঠানো হয় সরকার থেকে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বুধবার রাতে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাদির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ জানান।
এদিকে, ওসমান হাদিকে গুলিতে জড়িত মূল সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ। তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।
তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। তাদের মধ্যে ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা হাসি বেগম (৬০), স্ত্রী সাহেদা পারভিন সামিয়া ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু রয়েছেন।
শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক:
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর সবাইকে ধৈর্য ধারণ ও সংযমের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্বে নেবে রাষ্ট্র।
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের কাছ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির মৃত্যুর খবর পাওয়ার তথ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই অমর সৈনিককে মহান রাব্বুল আলামিন শহীদ হিসেবে কবুল করুন-এই দোয়া করি।”
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন হাদির মারা যাওয়ার খবর আসে। এর ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে জাতির উদ্দেশে জরুরি ভাষণ দিতে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।
হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তার প্রয়ান দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরে এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
তার শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবারের সদস্য, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তিনি এ হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস হিসেবে তুলে ধরেন। বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না।”
হাদি শুধু প্রতিবাদ নয়, দেশপ্রেম, ধৈর্য ও দৃঢ়তার অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বলে তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা সবার প্রতি সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান। বলেন, “দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি–আপনারা ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিয়ে যে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অবিচল পদক্ষেপে এগিয়ে যাই। এটাই হবে শহীদ হাদির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।”
