সোমবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
১ পৌষ ১৪৩২
ইতিহাস সংরক্ষণের বিকল্প নেই
প্রকাশ: সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৩২ এএম |

 ইতিহাস সংরক্ষণের বিকল্প নেই
১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র ইতিহাসের আরেকটি কালো দিন। গহন-গভীর বিষাদাক্রান্ত দিন। তারিখটি একদিকে যেমন কলঙ্কে মলিন, তেমনি দেশমাতৃকার সেরা মানুষদের আত্মোৎসর্গের মহিমায় উজ্জ্বল দিন। কলঙ্ক একারণে যে, এই দিনে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী, চিন্তক, ভাবুকদের বড়ো একটা অংশকে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করে। যাদের এভাবে হত্যা করা হয় তারা ছিলেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন। ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন’, রবীন্দ্রনাথের এই বাণীকে অমোঘ মনে করে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন। তাদের আত্মত্যাগ তাই অবিস্মরণীয় মহিমায় আজও সমুজ্জ্বল। 
ঘটনা কাল ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর। পাকিস্তানি দখলদার হানাদার বাহিনীকে বিতাড়নের জন্য তখন এ দেশের মানুষ মরণপন যুদ্ধ করছে। ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশজুড়ে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। নয় মাস পেরিয়ে গেছে। মুক্তির চূড়ান্ত মুহূর্ত আসন্ন। একদিকে উৎকণ্ঠা, আরেক দিকে বিজয়ের আলোকিত প্রহরের অপেক্ষায় বাংলাদেশের মানুষ। এরকম মুহূর্তেই বিশ্বাসঘাতকদের শেষ ছোবলে নীলকণ্ঠ হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অনেকে। 
পাকিস্তানি বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এ-দেশীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক-মুহূর্তে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা বুঝতে পারে, স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের পথে। যুদ্ধে যেহেতু পাকিস্তানের সহায়ক গোষ্ঠী হিসেবে তাদেরও পরাজয় নিশ্চিত, তাই প্রতিশোধ নিতে হবে এদেশের মুক্তিকামী শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। জাতি হিসেবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যাতে প্রজ্ঞায়-বোধে-জ্ঞানে-গরিমায় মাথা উঁচু করে চলতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে। তারা পরিকল্পিতভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। নিজের বাড়ি থেকে, পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে তাদের অজ্ঞাত স্থানে ধরে নিয়ে যায়। আজকে যাকে ‘গুম’ বলা হয়, এর শুরু প্রকৃতপক্ষে সেই অবরুদ্ধ বাংলাদেশে। 
ঘাতকরা সেদিন দেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। কারো কারো ছিন্নভিন্ন মরদেহ পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় সেই সময়ের মূল ঢাকার অদূরে রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে। তবে বেশির ভাগেরই লাশ বা লাশের চিহ্ন আজও মেলেনি। ঠিক কবে তাদের মেরে ফেলা হয়েছিল, আজও স্বজনরা তা জানেন না। জানার কোনো উপায়ও নেই। সেদিন এভাবেই দেশের অসংখ্য মেধাবী ও সৃষ্টিশীল লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকৌশলীদের পাকিস্তানি বাহিনীর এ-দেশীয় দোসররা হত্যা করেছিল। পরে তাদের কারো কারো লাশ স্তূপিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় রায়েরবাজার, মিরপুর এবং দেশের বিভিন্ন গণকবরে। গণকবরের সূচনাও ঘটেছিল এভাবে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সবই ছিল আসলে স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য ও নেতৃত্বশূন্য করার নীলনকশা। মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের কোনো বিকল্প হয় না, আজও বাংলাদেশ তাদের অভাব পূরণ করতে পারেনি। সেই সব বুদ্ধিজীবীদের পরিবর্তে আজ দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী, স্বাধীনতা-বিরোধী বুদ্ধিজীবী নামধারী কিছু মানুষের আস্ফালন। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে বাংলাদেশের গতিপথকে ঘুরিয়ে দিতে চায়। মুছে দিতে চায় সব অর্জন। কখনও কখনও আলাবদর আলশামসের উত্তরসূরিদের স্বাধীনতার কৃতিত্ব নিতেও দেখা যায়।
বুদ্ধিজীবীদেরকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় অবহেলাও অমার্জনীয় হয়ে উঠেছে। চব্বিশের অভ্যুত্থানের পরে দেশের প্রায় প্রতিটি স্মারক, যে-স্মারকগুলো গড়ে তোলা হয়েছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র তাতে বাধা দেয়নি, রক্ষা করেনি; এমনকি বিনষ্ট করার পরে পুনরায় প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। নাগরিকরা অবিমৃশ্যকারিতার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্র কি তা পারে? রাষ্ট্রের জাতিগত স্মারক রক্ষা করার দায় থাকে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমনটা দেখা যায় না। আমরা আশা করছি সরকার অবিলম্বে এসব স্মারক পুনঃনির্মাণ করবে। ইতিহাসবিদরা বলেন, স্মৃতি ভুলিয়ে দিলে জাতির ইতিহাসও বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশের মানুষ অজেয় লড়াকু জাতি। একাত্তরে তারা লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই ইতিহাসকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।
বাঙালি জাতি অকুতোভয় শহিদদের পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অবদানের কথা আমরা যেন ভুলে না যাই। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে জাতি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছে, সেই জাতি মাথা উঁচু করে থাকবে; তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অবদানকে স্মরণ করবে। রক্ষা করবে তার অবিস্মরণীয় ইতিহাস। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় র‌্যাবের নিরাপত্তা জোরদার
কুমিল্লার ১১টি আসনে মাঠে আছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
কুমিল্লায় যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল জাতিকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র- হাজী ইয়াছিন
সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে ওসমান হাদিকে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
জামায়াতে যোগ দিলেন ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারীসহ একাধিক নেতাকর্মী
ধৈর্য ধরুন, আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে: হাজী ইয়াছিন
কুমিল্লায় মনিরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
কুমিল্লার ১১টি আসনে মাঠে আছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
বুড়িচংয়ে রেলপথ থেকে অজ্ঞাত যুবকের ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২