
আজ ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় ও উজ্জ্বলতম দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। প্রতিবছর দিনটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে এই দিনে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৯১ হাজার ৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, যা সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে স্বাধীনতার জন্য একই কাতারে নামিয়েছিল, যা ছিল এই জনপদের জন্য এক বিশাল নবজাগরণ। স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
এ দেশে সংগ্রামের ধারায় রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আসে ছয় দফা আন্দোলন। ছয় দফার আন্দোলন স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলন দমন করতে তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান মার্শাল ‘ল’ জারি করেন। এতে আন্দোলন স্ফূলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৬৯ সালে এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। ক্ষমতার আসনে বসেন আরেক জেনারেল ইয়াহিয়া খান। তিনি ক্ষমতায় বসেই ঘোষণা করেন, শিগগিরই তিনি ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দেবেন। অতঃপর ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা করে ইয়াহিয়ার সরকার। বাঙালি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রহসনের আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে। এর পর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করে। সমগ্র বাংলাদেশ পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। শুরু হয় মুক্তির জন্য যুদ্ধ, বেঁচে থাকার লড়াই। টানা ৯ মাসের যুদ্ধে বিজয়ী হয় বাঙালি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছরের সূর্য দেখার অপেক্ষায়।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ঠিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী ইতিহাস ধারণ করতে হবে। বর্তমান প্রজন্মের ত্যাগের ইতিহাস মুছে ফেললে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে হবে বর্তমান প্রজন্মকে। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। তারা বিগত সরকারের শাসন-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলন করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশ নতুন করে মেরামত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
এই মেরামত যেন অবশ্যই টেকসই হয় এবং কোনো ক্ষেত্রেই কারও সঙ্গে বৈষম্য না হয়, সেদিকটায় সচেষ্ট থেকে কাজ করবে। বিজয়ের এই দিনে প্রত্যাশা রাখি, প্রতিটি মানুষ যাতে স্বাধীনতার গ্লানি মুছে ফেলে ত্যাগের মহিমায় উৎসারিত হয়ে স্বাধীনতার লাল সূর্য বুকে ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র হোক, যেখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে। মুক্তিযুদ্ধের মৌল আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রকে সামনের দিকে পরিচালিত করার সময় এসেছে। আমরা যেন ভুলে না যাই ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগ এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের অর্জন এই স্বাধীনতা।
