চৌদ্দগ্রাম
প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
নেই প্রধান শিক্ষক। এসব শূণ্যপদে সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান
শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সহকারি শিক্ষকের পদশূন্য রয়েছে
৭৫টি। যার ফলে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
দেশে শিক্ষার ভিত্তি বলে বিবেচিত প্রাথমিক শিক্ষায় এমন শিক্ষক সংকটে ক্ষতির
মুখে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়,
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নে ১৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
রয়েছে। এরমধ্যে ১০২টি বিদ্যালয়ে বিভিন্ন মেয়াদে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী
শিক্ষকদেরকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদান একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন এই
শিক্ষকরা। তাঁদের ওপর সৃষ্টি হয়েছে অতিরিক্ত কাজের চাপ।
নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক না থাকলে কোনো শৃঙ্খলা
থাকে না। অনেক সহকারী শিক্ষকই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মানতে
অনীহা প্রকাশ করেন। শিক্ষককরা চলেন নিজের ইচ্ছেমতো। এতে ক্লাস পরিচালনায়
ব্যাঘাত ঘটে। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা থেকে’।
পৌরসভা
এলাকায় ২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। চৌদ্দগ্রাম বাজারে অবস্থিত
এম এ করিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর গত ৯
মাস পদটি শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সিনিয়র শিক্ষিকা
আয়েশা আক্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা
২২০ জন। শিক্ষক স্বল্পতায় বর্তমানে দুই শিফটে পাঠদান করা হচ্ছে।
পৌরসভার
অপরটি ১১৭নং চাটিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত
প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন সহকারী শিক্ষিকা পারভিন আক্তার। ২০২৪ এর
আগস্টে অবসরে গেছেন প্রধান শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে
দায়িত্ব পালন করছেন পারভিন আক্তার। তিনি জানান, বিদ্যালয়ে ১০৮জন শিক্ষার্থী
রয়েছে। বর্তমানে ২ শিফটে পাঠদান হচ্ছে। কিছুদিন আগে শিক্ষিকাদের মধ্যে
একজন মেটার্নেটি ছুটিতে, আরেকজন বিটিবিটি ট্রেনিংয়ে ছিলেন। তখন কোনোরকমে
চালিয়ে নিতে অন্য বিদ্যালয় থেকে ধারে শিক্ষক আনতে হয়েছে।
উপজেলার
কাশিনগর ইউনিয়ন হিলাল নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান
শিক্ষক সুনীল চন্দ্র শীল জানান, গত তিন বছর থেকেই এই বিদ্যালয় প্রধান
শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। একা দুই দিক সামলাতে হচ্ছে। একটা করতে গেলে
আরেকটা ঠিকমতো করা সম্ভব হয় না।
প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা
মুন্সিরহাট ইউনিয়নের খিরনশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক কবির
হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন গত দুই বছর থেকে।
তিনি বলেন, প্রশাসনিক কাজ করতে গিয়ে ক্লাস নিতে সমস্যা হয়।
প্রধান
শিক্ষক সংকট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা। পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামের
আবদুল হাই, রিয়াদ ও মোহসেন আলী নামের অভিভাবকরা বলেন, এমনিতে বাচ্চাদের
পড়াশোনার উন্নতি নেই, তারউপর শিক্ষক সংকটে মাঝেমধ্যে ক্লাস না হওয়ার কথা
শোনা যায়। পৌরসভার ছাটিতলা গ্রামের শিক্ষার্থী সাইফা ও আনিকার অভিভাবক
এমদাদ উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন শিক্ষক সংকটে ঠিকমতো পড়াশোনা হয়না। তাই
বাচ্চাদেরকে এনে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করিয়েছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: মনিরুজ্জামান বলেন, 'শূন্য পদে নিয়োগ
প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ইতিমধ্যে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া সার্কুলারের মাধ্যমে
জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রধান শিক্ষক শূন্য পদগুলো
অচিরেই পূরণ হবে।'
