তানভীর দিপু:
ঢাকা-চট্টগ্রাম
মহাসড়কের কুমিল্লার বেতলতলী এলাকায় বকুল ফুল গাছ কেটে নেয়ার ঘটনায় থানায়
একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের
নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা। শনিবার বিকালে নির্বাহী প্রকৌশলী
গোলাম মোস্তফা জানান, বেলতলী এলাকায় প্রায় ৫০টি গাছ এক ব্যক্তি কেটে
নিয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে
সদর দক্ষিণ থানায় এশটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় সদর দক্ষিণ থানার ওসি মোঃ সেলিম জানান, অভিযোগ পেয়েছি, মামলা প্রক্রিয়াধীন।
সম্প্রতি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বেলতলী এলাকায় অর্ধশতাধিক বকুল ফুল গাছ
বেলীগাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। এর আগে গত বছরের মাঝামাঝিতে একই
মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল থেকে ফাল্গুনকরা মাজার পর্যন্ত ৫০টি বকুল
ফুল গাছ বেলীফুল গাছ পুড়িয়ে ফেলার ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ এলাকার বেলতলীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সড়কদ্বীপ
(আইল্যান্ড) থেকে গাছ কাটা হয়েছে। যার বেশিরভাগই বকুল ফুল গাছ বেলী ফুল গাছ
বেলীফুল ছাড়াও ওই এলাকায় লাগানো তালগাছসহ বিভিন্ন ফুলগাছও কাটা হয়েছে।
গাছকাটা জায়গায় আবার লাগানো হয়েছে কলা, আম ও কাঁঠাল গাছ। বেলতলী এলাকায়
কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজমিরি হোসেন নামে এক ব্যক্তি এই
গাছগুলো কেটেছেন। ওই ব্যক্তি মহাসড়কের পাশের একটি টিনের ঘরে থাকেন, তবে ওই
ঘরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
বেলতলী এলাকায় গিয়ে কথা হয়, সড়ক ও জনপথ
বিভাগের কার্যসহকারী রুহুল আমিনের সাথে । তিনি জানান, খবর পেয়ে আমি সাথে
সাথে বেলতলী এসেছি। বেলতলী নির্মানাধীন মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে এসে
দেখেছি মোট ১৭টি গাছ কাটা হয়েছে। শুনেছি, আশেপাশে আরো বেশ কয়েকটি গাছ কাটা
হয়েছে। আমরা থানায় একটি অভিযোগ জানিয়েছি।
রুহুল আমিন আরো জানান, যেসব বকুল গাছ কাটা হয়েছে এসব গাছের বয়স অন্তত ১০ বছর। গাছগুলো কাটা অন্যায় হয়েছে।
বেলতলীর
বাসিন্দা আবদুল আউয়াল জানান, আজমিরি নামে এক ব্যক্তি এই গাছ কেটেছে। সে
বলে- মহাসড়কের মাঝখানের মালিকানা নাকি তার। আগে এলাকাটা কি সুন্দর লাগতো,
এখন একেবারে বিরানভূমি।
একই এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম জানান, যে ই গাছ কাটুক আইনের আওতায় আনতে হবে। না হয় আরো অনেকে গাছ কাটার সাহস পাবে।
বেলতলী
এলাকায় একটি পাম্পে কথা হয় ট্রাক চালক হৃদয় হাসানের সাথে। তিনি জানান,
আইল্যান্ডের গাছের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি ভোগ করে চালকরা । রাতের বেলা গাড়ী
চালানোর সড়কের মাঝ খানের এসব গাছের কারণে- বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের
লাইটের আলো চালকের চোখে পড়ে না। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়।
তিনি জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচিত নিয়ম মেনে আরো গাছ লাগানো। আর যারা গাছ কাটে তাদের শাস্তি দেয়া।
সড়ক
ও জনপথ বিভাগ জানায়, মহাসড়কটি ২০১৬ সালে চার লেনে রূপান্তর করার পর
সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি এক লেনের গাড়ির হেডলাইটের আলো যাতে অন্য লেনের
গাড়ির ওপর না পড়ে, সে জন্য বিভাজকের ওপর লাগানো হয়েছিল বিভিন্ন প্রজাতির
গাছ। মহাসড়কের বিভাজকটি কোথাও ফুল গাছে, আবার কোথাও অন্যান্য বৃক্ষে সাজানো
হয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত প্রায় ১৯২
কিলোমিটার এলাকার মধ্যে মহাসড়কের প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন
প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। তাঁর মধ্যে রয়েছে বকুল, কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ,
রাধাচূড়া, হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, পলাশসহ নানান ফুলের গাছ।
এ রকম ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। এ ছাড়া সড়কের পাশে এবং
বিভিন্ন স্থানে বিভাজকের ওপর লাগানো হয়েছে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি,
শিশু, আকাশমণি, নিম, একাশিয়া, হরীতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪০ হাজারের বেশি
গাছ। কুমিল্লার বেলতলী এলাকাটি বকুলগাছে সাজানো হয়।