
বাংলাদেশের
হয়ে চার ম্যাচ খেলে এখনও জয়ের আনন্দে ডানা মেলা হয়নি শোমিত সোমের। এশিয়ান
কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডেও বাংলাদেশ খেলেছে চারটি ম্যাচ; কিন্তু জয়ের
খাতায় পড়েনি আচঁড়। অধরা জয়ের খোঁজে তাই বাংলাদেশের মতো শোমিতও। শনিবার
অনুশীলনে নামার আগে কানাডা প্রবাসী এই মিডফিল্ডার আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণে
বললেন, ভারতের বিপক্ষে আসছে ম্যাচে একবিন্দুতে মিলতে পারে তার ও দলের
চাওয়া।
সেজন্য মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। একের পর এক ম্যাচে
শেষ দিকে মনোযোগ হারিয়ে গোল হজমের ধারা থেকে বেরিয়ে আসাও প্রয়োজনীয়।
শোমিতের বিশ্বাস, মঙ্গলবার জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে সব কাজ ঠিকঠাক
করতে পারবেন তারা।
“হ্যাঁ, মিডফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যাপারে আমরা
আত্মবিশ্বাসী। আমি মনে করি, পুরো দল, গোলকিপার, ডিফেন্স, মিডফিল্ড,
স্ট্রাইকিং-সব পজিশনের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস আছে যে, আমরা ম্যাচটা
নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, জিততে পারব। বিগত ম্যাচগুলোতে আমাদের পারফরম্যান্স
ভালো হয়েছে, কিন্তু জয়টা পাচ্ছি না। জয়টা আমাদের পাওয়া উচিত। আশা করি, আমরা
এবার সেটা পাব।”
“ফুটবলে এমন হয় (শেষ দিকে মনোযোগ হারানো), তাই না?
আমরা কেবল ভাগ্যেকে পক্ষে পাচ্ছি না। এমনকি নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে ওরা যে
কর্নার কিক পেয়েছে, ওইটা আসলে মনে হয় অফসাইডও ছিল, তাই না? কিন্তু ফুটবলে
এগুলো হয়। জানি না, কী কারণে আমরা মনোযোগ হারাচ্ছি, কিন্তু আশা করি,
ভাগ্যকে সামনে পাশে পাব, মনোযোগ হারাব না এবং আমরা যেন ওভাবে গোল হজম না
করি। মূল বিষয় হলো, আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে শেষ বাঁশি বাজার আগ
পর্যন্ত।”
বাছাই ও অন্যান্য ম্যাচ মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে শেষ দিকে
জামাল-সোহেলদের মনোযোগ হারানোর ঘটনা আছে একাধিক। বাছাইয়েই হংকংয়ের বিপক্ষে
ম্যাচের অন্তিম সময়ে গোল হজম করে ৪-৩ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। সবশেষ
নেপালের বিপক্ষে যোগ করা সময়ের গোলে সম্ভাব্য জয় হয় হাতছাড়া।
ভারতের বিপক্ষেও এমন অতীত আছে বাংলাদেশের। ২০১৯ সালে কলকাতার সল্টলেকে বাংলাদেশ ফিরেছিল ৮৮তম মিনিটে গোল খেয়ে ১-১ ড্র করে।
ভারতের
বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের গল্পও বেশ পুরান। সবশেষ ২০০৩ সালে সাফ
চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে ২-১ ব্যবধানে
হেসেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। সবশেষ দুই দলের দেখা গত মার্চে, শিলংয়ে।
ম্যাচটি গোলশুন্য ড্র করে বাছাই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে খেলেননি
শোমিত, তবে দূরে বসে দেখেছেন সতীর্থদের খেলা। এবার তিনি প্রথম খেলবেন
ভারতের বিপক্ষে। প্রতিপক্ষের ফাঁক-ফোকর খুঁজে পাওয়ার কথাও জানালেন শোমিত।
“ভারত
ভালো দল, কিন্তু তাদেরও দুর্বলতা আছে। ওদের মিডফিল্ড লাইন ও ডিফেন্স
লাইনের মাঝে ফাঁক থাকে, জায়গা থাকতে পারে। আপনারা দেখেছেন, নেপাল যেভাবে
ডিফেন্ড করেছে, ভারত মনে হয় এত ভালোভাবে ডিফেন্ড করতে পারবে না, স্ট্রাকচার
ওইভাবে রাখতে পারবে না। আমরা ওই জায়গাতে সুযোগটা নিতে পারব।”
“জানি,
ভারত ভালো দল, আমরাও ভালো দল। এই ম্যাচটার অনেক অর্থ আছে, তাই না? যে
দ্বৈরথটা আমাদের মধ্যে আছে, ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, কিন্তু আমরা
প্রস্তুত থাকব। আশা করি, আমরা জিততে পারব। আমরা ভালো খেলতে পারি, ভালো
পারফরম্যান্স দিতে পারি। যে জয়টা খুঁজছি আমরা, এই মঙ্গলবারের ম্যাচে সেটা
আশা করি পাব।”
নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে হামজা দ্বিতীয়ার্ধে মাঠ
ছাড়ার পর ছন্দপতন হয় বাংলাদেশের। হামজা, শোমিত, জায়ানদের মতো প্রবাসীদের
সাথে রাকিব-সোহেলরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছুটতে পারছেন না-আছে এমন আলোচনাও।
শোমিত অবশ্য একমত নন। ২৮ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার প্রবাসী-স্থানীয়দের মাঝে
বিভেদের দেয়াল না তুলে বরং ঐক্যের সুরই বাজালেন।
“এই অভিযোগের সাথে আমি
একমত নই। আমাদের দলটা ১১ জনের, দেশি-বিদেশি কোনো ব্যাপারই নয়, তাই না?
কিভাবে জিতব, সেটা বুঝতে আমাদের সবাইকে একসাথে থাকতে হবে। দেশি বনাম বিদেশি
খেলোয়াড়-আমরা কোনোদিন এভাবে চিন্তা করিনি। এভাবে বাংলাদেশ জিততে পারবে না।
আমাদের সবসময় একসাথে থাকতে হবে।”
