
জাতীয়
নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
তুলেছেন। এরপরই ক্রীড়াঙ্গনে নিপীড়ন নিয়ে চলছে আলোচনা। আজ (শনিবার) জাতীয়
স্টেডিয়ামের সামনে নিপীড়নমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন এবং নিপীড়কদের শাস্তির দাবিতে
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ হয়।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ও
সংগঠক কামরুন নাহার ডানা বিগত সময়ের মতো এবারো আন্দোলনের নেতৃত্বে। তিনি
বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সর্বক্ষেত্রে নারীরা সাফল্য আনছে। এরপরও
ক্রীড়াঙ্গন নারীদের জন্য নিরাপদ হবে না কেন? যারা নিপীড়ক রয়েছে, তাদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যেন কেউ ভবিষ্যতে এ রকম কাজ করার সাহস না পায়।
নিপীড়নের শাস্তি না হলে নারীরা আর ক্রীড়াঙ্গনে আসবে না।’
আজকের প্রতিবাদ
সমাবেশ থেকে ডানা কয়েকটি সুপারিশ ও দাবি রেখেছেন ক্রীড়া নীতি-নির্ধারকদের
কাছে, ‘নারী দলের সঙ্গে অবশ্যই নারী কাউকে ম্যানেজার করতে হবে। অনেক খেলায়
নারী দলে পুরুষ ম্যানেজার করেছে এটা কখনোই কাম্য নয়। ফেডারেশনগুলোতে
কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নারী রাখতে হবে।’
আজকের মানববন্ধনে তারকা শুটাররা বেশি
এসেছিলেন। বর্তমানে দেশের অন্যতম নারী শুটার কামরুন নাহার কলি। তিনি বেশ
মানসিক পীড়নের মধ্যে রয়েছেন। এজন্য যুগ্ম সম্পাদক জিএম হায়দার সাজ্জাদকে
দায়ী করে বলেন, ‘শুটিং স্কোর করে আমি দলে থাকব। এরপরও তিনি আমাকে প্রায়ই
মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। সুযোগ পেলেই অকারণে বকাবকি করেন, আবার তার অফিস
কক্ষেও যেতে বলেন। ’
কলির স্বামী আবিদুর রহমানও শুটার। তিনি শুটার
হয়েছেনই স্ত্রীর জন্য। নিজে শুটার হয়েও স্ত্রী কলিকে মানসিক পীড়নের জন্য
ব্যথিত, ‘যুগ্ম সম্পাদক কলির সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। একজন শুটারের সঙ্গে
বাজে আচরণ করলে তিনি খেলায় মনোযোগ রাখবেন কীভাবে? তার কক্ষে নারী শুটাররা
থাকেন প্রায়ই, যা অস্বস্তির ও বিব্রতকর।’
সাবেক জাতীয় তারকা শুটার ও কোচ
শারমিন আক্তার রত্না জিএম হায়দার সাজ্জাদকে নিয়ে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন।
আজ প্রতিবাদ সমাবেশ ও সমাবেশ পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে আবারো তিনি বলেন,
‘নারী শুটারদের আপত্তিকর মন্তব্য, কুপ্রস্তাবসহ অনেক কিছুর অভিযোগ রয়েছে
তার ওপর। আমরা এজন্য তাকে ফেডারেশনের কমিটিতে না রাখার অনুরোধ করেছিলাম
উপদেষ্টাকে। সার্চ কমিটি এ রকম বিতর্কিত কাউকে দেয়নি, অথচ উপদেষ্টার সহকারী
সাইফুল তাকে কমিটিতে ঢুকিয়েছে।’
জাহানারার পরপরই নারী শুটার এমাও যৌন
হয়রানির অভিযোগ আনেন। সেটাও যুগ্ম সম্পাদক জিএম হায়দারের বিরুদ্ধে। আজ
প্রতিবাদ সমাবেশে এমা তার হয়রানির ঘটনা তুলে ধরেন। তখন পাশে থাকা এমার মা
বলেন, ‘আমার মেয়ে যা বলছে, সত্যি এবং আমার সামনেই এমন কথোপকথন হয়েছে।’
আজকের প্রতিবাদ সমাবেশে শুটিং ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক হায়দারের ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনও ছিল।
শুটিং
ছাড়াও ব্যাডমিন্টন ও আরো অনেক খেলায় নারী নিপীড়নের ঘটনা শোনা যায়। আজকের
সমাবেশে সব ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়েছে। জাতীয় স্টেডিয়ামে
আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন সাবেক ক্রিকেটার ও কোয়াবের সাবেক সাধারণ
সম্পাদক দেবব্রত পাল। তিনি বলেন, ‘বিসিবি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সেটার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা চাই। নারীদের জন্য সুন্দর ক্রীড়াঙ্গন গড়তে
জেলা-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। নিপীড়কের ক্রীড়াঙ্গনে
কোনো ঠাঁই নেই।’
ক্রিকেট ক্লাব সংগঠক সাব্বির আহমেদ রুবেল বলেন,
‘ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উঠেছিল, এরপরও তৎকালীন
বোর্ড সভাপতি কেন সেটি আমলে নিয়ে পদক্ষেপ নেননি, সেটারও জবাবদিহিতা
প্রয়োজন।’
আজকের অনুষ্ঠানে ক্রীড়াঙ্গনে নারী-পুরুষ সাবেক
ক্রীড়াবিদ, সংগঠকের পাশাপাশি মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদকও উপস্থিত
ছিলেন। এই প্রতিবাদের ধারাবাহিকতাস্বরূপ সামনে প্রধান উপদেষ্টাকে
স্মারকলিপি, স্বাক্ষর অভিযানসহ আরো অনেক কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে
সংশ্লিষ্টদের।
