মানুষের
জীবনে তার কৃতকর্মের বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। নেক আমল ও ইবাদত যেমন মানুষের
জীবনকে সুন্দর ও কল্যাণকর করে, তেমনি মানুষের পাপ ও অবাধ্যতার কারণে কখনো
কখনো দুনিয়ায়ই তাদের জীবনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ
হয়েছে, ‘তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের
অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৩০)
এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মানুষের কৃতকর্মের প্রভাব তার জীবনে পড়ে।
ইবাদতবিমুখতা
ও গুনাহের কারণে মানুষের ওপর বিভিন্ন বিপদ-আপদ আসতে পারে। বিভিন্ন রকম
দুরারোগ্য ব্যাধি, দুর্ঘটনা, মৃত্যু, যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলা এবং শত্রুর আধিপত্য
তৈরি হতে পারে।
পাপের কারণে মহান আল্লাহ বিভিন্ন জাতিকে ধ্বংস পর্যন্ত
করে দিয়েছেন। যেমন-হুদ (আ.)-এর জাতিকে বিধ্বংসী ঝড় দিয়ে, সালেহ (আ.)-এর
জাতিকে প্রচণ্ড শব্দ দিয়ে, নুহ (আ.)-এর জাতিকে পানিতে ডুবিয়ে, ফেরাউনের
জাতিকেও পানিতে ডুবিয়ে শাস্তি দিয়েছেন।
মানুষের প্রাত্যহিক জীবনেও গুনাহের বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
উপকারী
ইলম থেকে বঞ্চিত হয় : উপকারী ইলম হলো মানুষের অন্তরে জ্বলে ওঠা আল্লাহ
প্রদত্ত নূর, যা পাপের কারণে নিভে যায়। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেছেন, ‘আমি
ওয়াকিকে আমার দুর্বল মুখস্থ শক্তির কথা বললাম; তিনি বললেন : গুনাহ ত্যাগ
করো, কারণ জ্ঞান হলো আল্লাহর নূর, আর পাপীর অন্তরে সেই নূর থাকে না।’ (আল
বয়ান ফি মাজহাবিল ইমাম আশ-শাফেয়ি, পৃষ্ঠা-৫৩)
আল্লাহর সঙ্গে দূরত্ব : পাপ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
ফলে
তাদের নূর চলে যায়। একটা পর্যায়ে তারা হেদায়েত লাভের শক্তিও হারিয়ে ফেলে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘কখনো নয়, বরং তারা যা অর্জন করত তা-ই
তাদের অন্তর ঢেকে দিয়েছে।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১৪)
জীবন থেকে
বরকত উঠে যায় : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার
অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব।
তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর হতাশা দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করব না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৭)
অন্তরের
বোধশক্তি হারিয়ে যায় : আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, মুমিন তো তার গুনাহকে এমন
ভয়াবহ মনে করে যে সে যেন একটি পাহাড়ের গোড়ায় বসে আছে আর সেটি তার ওপর
নিপতিত হচ্ছে বলে সে আশঙ্কা করছে। আর ফাসিক-ফাজির ব্যক্তি তার গুনাহকে মনে
করে যে, একটি মাছি যেন তার নাকে বসেছে আর সেটিকে সে হাতেই ইশারা করল আর উড়ে
গেল। (আল জামিউল কাবির, হাদিস : ২৪৯৭)
ঈমান দুর্বল হয়ে যায় : গুনাহ
মানুষের ঈমানের শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। কিছু পাপ তো মানুষকে ঈমানের গণ্ডি
থেকে বের করা দেয়। (নাউজুবিল্লাহ) হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা
(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যভিচারী মুমিন
অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোনো মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না।
কোন চোর মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোনো লুটতরাজকারী মুমিন অবস্থায় এরূপ
লুটতরাজ করে না যে যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে
থাকে। (বুখারি, হাদিস : ২৪৭৫)
নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হয় : কখনো কখনো
গুনাহের কারণে মানুষ প্রাপ্য নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ
হয়েছে, ‘আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদ, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সব
দিক থেকে তার রিজিক তাতে বিপুলভাবে আসত। অতঃপর সে (জনপদ) আল্লাহর নিয়ামত
অস্বীকার করল। তখন তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক
পরালেন।’ (সুরা : নাহাল, আয়াত : ২৪৭৫)
এককথায় বলতে গেলে পাপ মানুষের
ইহকাল-পরকালে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে।
তাই মুমিনের উচিত, পাপ থেকে বিরত থাকা এবং খাঁটি মনে তাওবা করা।
