মহান
আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন হযরত মোহাম্মদ(সা.)। তাকে আল্লাহ সমগ্র
বিশ্বের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেন। আল্লাহ তার প্রিয় হাবিব হযরত রসুল
(সা.)-এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে পবিত্র কুরআনে বহু আয়াত নাজিল করেন।
সেই আয়াতসমূহে আল্লাহ তার বন্ধুর প্রতি ‘আদব’ প্রদর্শনের নির্দেশনা প্রদান
করেন।
আরবি আদব শব্দের বাংলা অর্থ বিনয়, নম্রতা, সম্মান প্রদর্শন।
আল্লাহ-তায়ালা দয়াল রসুল (সা.)-এর প্রতি সর্বোচ্চ আদব প্রদর্শনের বিষয়ে
সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে
মুমিনগণ, তোমরা রসুলের আহ্বানকে তোমাদের একে অন্যকে আহ্বানের মতো গণ্য করো
না। আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে আড়ালে সরে
পড়ে। অতএব যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন সতর্ক হয় যে, তাদের
ওপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক আজাব তাদেরকে গ্রাস করবে (সুরা
নূর ২৪: আয়াত ৬৩)।’
এ আয়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, হজরত রসুল
(সা.)-কে শুধু নাম ধরে ‘ইয়া মোহাম্মাদ' বলা যাবে না; বরং বলা উচিত ‘ইয়া
রসুলাল্লাহ’ (হে আল্লাহর রসুল) বা ‘ইয়া নাবিয়াল্লাহ্’ (হে আল্লাহর নবি)
‘ইয়া হাবিবাল্লাহ’ (হে আল্লাহর হাবিব)।
হযরত যাহহাক (রহ.) হজরত ইবনে
আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘প্রাথমিক যুগে সাহাবায়ে কেরাম
রসুলুল্লাহ (সা.)-কে নাম নিয়ে অথবা উপনামে অর্থাৎ ‘হে মোহাম্মাদ (সা.)!’
এবং ‘হে আবুল কাসেম (স.)!’ বলে আহ্বান করতেন (যেমন তারা একে অন্যকে ডেকে
থাকেন)। কিন্তু আল্লাহ-তায়ালা তাদেরকে রসুলুল্লাহ্ (স.)-এর প্রতি সম্মান
করার জন্য এই বেয়াদবি হতে নিষেধ করে দেন।
তাদেরকে তিনি বলেন, তোমরা
রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাম ধরে ডেকো না। বরং 'ইয়া নাবিয়াল্লাহ্’ অর্থাৎ হে
আল্লাহ্ নবি (স.)!’ এবং ‘ইয়া রসুলাল্লাহ্’ অর্থাৎ হে আল্লাহর রসুল (সা.)!’
এই বলে ডাকবে। (তাহলে তার বুজুর্গি, মর্যাদা ও আদবের প্রতি লক্ষ রাখা হবে)
(তাফসিরে ইবনে কাছির ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৮ ও ৪৪৯)।’
মহান আল্লাহ হযরত
রসুল (সা.)-এর শানে মুমিনদের নির্দেশ করে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা উঁচু
করো না তোমাদের কণ্ঠস্বর নবির কণ্ঠস্বরের ওপর এবং তোমরা এমন উচ্চস্বরে তার
সঙ্গে কথা বলো না, যেমন তোমরা একে অন্যের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলে থাকো।
এতে তোমাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে যাবে, অথচ তোমরা টেরও পাবে না। নিশ্চয় যারা
নিজেদের কণ্ঠস্বর আল্লাহর রসুলের সামনে নিচু রাখে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে
তাকওয়ার জন্য বিশুদ্ধ করে দিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বিরাট
পুরস্কার। (সুরা আল হুজুরাত ৪৯: আয়াত ২ ও ৩)।’
এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর
হজরত আবু বকর (রা.) আরজ করেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ (স.), আল্লাহর কসম! এখন থেকে
মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সঙ্গে কানাকানির অনুরূপ কথাবার্তা বলব।’ (বায়হাকি)
হজরত ওমর (রা.) এরপর থেকে এত আস্তে কথা বলতেন যে, প্রায়ই পুনরায় জিজ্ঞাসা
করতে হতো। এমনিভাবে, হজরত সাবেত ইবনে কায়সের কণ্ঠস্বর স্বভাবগতভাবেই উঁচু
ছিল। এই আয়াত শুনে তিনি ভয়ে সংযত হলেন এবং কণ্ঠস্বর নিচু করলেন (তাফসিরে
মাআরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ১২৭৬)।
মুসলমানদের সতর্ক করার জন্য
আল্লাহ-তায়ালা আয়াত নাজিল করেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা (নবিকে সম্বোধন করে)
‘রা'ইনা' (আমাদের দিকে লক্ষ করুন) বলো না; বরং ‘উনজুরনা’ (আমাদের প্রতি
রহমতের নজরে তাকান) বলো এবং শুনতে থাকো। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি (সুরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ১০৪)।’
হজরত রসুল
(সা.)-কে হুজরা শরিফের বাইরে থেকে যারা অন্যান্য লোকের মতো চিৎকার করে
ডাকাডাকি করত, মহান আল্লাহ তাদেরকে নির্বোধ বিবেকহীন বলেছেন।
মহান
আল্লাহ বলেন, ‘হে রসুল (সা.) যারা হুজরার পেছন থেকে আপনাকে চিৎকার করে
ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ (সুরা আল হুজুরাত ৪৯: আয়াত ৪)।’
সুতরাং
দোজাহানের বাদশাহ হজরত রসুল (সা.)-এর প্রতি সর্বোচ্চ আদব প্রদর্শন করা
গোটা মানবজাতির জন্য ফরজ। এতে মহান আল্লাহ ও হজরত রসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি
অর্জন লাভ করা সম্ভব হবে।
লেখক: গবেষক, কদর রিসার্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স; সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, পিইউবি
