
দিনের
শুরুর আক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই দিন শেষে আর থাকেনি। মাহমুদুল হাসান জয় কিংবা
মুমিনুল হকের থেকে যে বড় রানের প্রত্যাশায় ছিল দল তা নাজমুল হোসেন শান্তর
সেঞ্চুরিতে মিটে গেছে। তবে বোলাররা দিনের শেষ দিকে যা করলেন তা রীতিমত পুরো
দলকেই চাঙ্গা করে তুলেছে। সিলেট টেস্টের নাটাই এখন বাংলাদেশের হাতে।
আয়ারল্যান্ডের
করা ২৮০ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ৫৮৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ৩০১
রানের লিড পেয়ে সফরকারীদের উপর চেপে বসে শেষ সেশনে। বৃহস্পতিবার তৃতীয়
দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তুলে নেয় ৫ উইকেট।
স্কোরবোর্ডে রান
কেবল ৮৬। এখনও ২১৫ রানে পিছিয়ে থাকা আয়ারল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে হারের
অপেক্ষায়। বাংলাদেশ অপেক্ষায় বিরাট এক জয়ের। অস্বাভাবিক কিছু না হলে
আগামীকাল শুক্রবার চতুর্থ দিনেই ম্যাচের ফল বের হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের
জন্য আজকের দিনটি ছিল রেকর্ডময়। দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ দলীয় রান তুলেন
নাজমুল, লিটন, মুশফিকুররা। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মাহমুদুল
হাসান জয় ও মুমিনুল হক শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন। ২ রান করে যোগ করেন দুইজন। জয়
১৭১ ও মুমিনুল ৮২ রান করে আউট হন।
৯৯তম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামা
মুশফিকুর ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে অন্যপ্রান্তে নাজমুল ছিলেন
দুর্দান্ত। দারুণ ব্যাটিং ধারাবাহিকতায় ফিফটি তোলার পর সেঞ্চুরির দিকে
এগিয়ে যান। লিটনের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৯৮ রানের। মনে হচ্ছিল ফিফটি ছুঁয়ে
ফেলা লিটন তার আগে সেঞ্চুরি তুলে নেবেন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত আক্রমণাত্মক
খেলতে গিয়ে ৬০ রানে থেমে যায় তার ইনিংস।
নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটের
ইতিহাসে এবারই প্রথম, প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজন পেয়েছেন ফিফটি রানের
ইনিংসের স্বাদ। সঙ্গী হারানোর পর শান্ত পথ ভোলেননি। অনায়েস ব্যাটিংয়ে তুলে
নেন নিজের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি। সঙ্গে ঘরের মাঠ ও অধিনায়ক হিসেবে ১০০০
টেস্ট রানের মাইলফলকও পেরিয়ে যান। তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ওই রানেই থামে তার ইনিংস।
এরপর
মিরাজের ১৭, হাসান মুরাদের ১৬ ও হাসান মাহমুদের ১৩ রানে বাংলাদেশের রান
৬০০'র কাছাকাছি যায়। মনে হচ্ছিল ২০১৩ সালের পর দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের
টেস্টের রান ছয়শ পেরিয়ে যাবে। কিন্তু শান্ত লিড তিনশ ছোঁয়ার পরপরই ইনিংস
ঘোষণা করেন। তাতে লাভ অবশ্য বাংলাদেশেরই হয়েছে।
বাড়তি সময় বোলিংয়ের
সুযোগ পেয়েছে। ২৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে সফরকারীদের ৫ উইকেট নিতে পেরেছে।
আগামীকাল ৫ উইকেট নিতে পারলেই ম্যাচটা একদিন আগে বাগিয়ে নিতে পারবে
স্বাগতিকরা। স্পিনার হাসান মুরাদ ২টি এবং তাইজুল ও নাহিদ ১টি করে উইকেট
নেন। এছাড়া ১টি রান আউট করেছেন শান্ত।
বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর,
স্পিনারদের বল বেশ ঘুরছে। তাইজুল, মুরাদ ও মিরাজের আক্রমণ চতুর্থ দিন
সামলানো শুধু কঠিনই হবে না, কঠোরতম হতে পারে।
যে রেকর্ডের কথা দিনের
শুরুতেই বলা, দেশের মাটিতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় রান করেছে বাংলাদেশ।
সেটাও সবচেয়ে দ্রুততম। এর আগে একবারই ৫০০ ছুঁয়েছিল ১২১.২ ওভারে। আজ ১১৭.৩
ওভারেই করে ফেলে ৫০০ রান। এছাড়া রান রেটও ছিল দুর্দান্ত। এই ইনিংসের রান
রেট ৪.১৬। এর আগে একবারই রান রেট ৪ ছুঁয়েছিল। ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের
বিপক্ষে ছিল ৪.০৮। বাংলাদেশের প্রাপ্তির ভিড়ে আয়ারল্যান্ডের বড় অর্জন
ম্যাথু হামফ্রিজের ৫ উইকেট। উইকেটের পূর্ণ ব্যবহার করে অফস্পিনার পেয়েছেন
ফাইফারের স্বাদ।
