মানুষের উদ্বেগের প্রধান কারণ এখন নিরাপত্তার অভাব। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, লুটতরাজের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। খুনাখুনি এখন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মব ভায়োলেন্স নামক নতুন উৎপাত সমাজে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে প্রায়শই ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা অনেক বেড়েছে।
কিশোর গ্যাং নামের অরাজকতা বড় ভোগান্তির কারণ হয়েছে। বেড়েছে অপহরণ ও জিম্মি করে অর্থ আদায়ের ঘটনা। সব ঘটনায় মামলা হয় না, তার পরও দ্রুত বাড়ছে থানাগুলোতে মামলার সংখ্যা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, চুরি, ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতি—এই সাত ধরনের অপরাধ বেড়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৩ মাসে এসব অপরাধমূলক ঘটনায় সারা দেশে ৩৯ হাজার ৯৩৬টি মামলা হয়েছে। এই হিসাবে প্রতি মাসে মামলার সংখ্যা তিন হাজার ৭২টি। পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধবিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এসব অপরাধে গত আগস্ট মাসেই দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫ হাজার ৬৫৬টি মামলা হয়েছে।
এসব মামলার মধ্যে আগের কিছু হত্যা মামলা যোগ হয়েছে।
মামলা ও পত্রিকান্তরে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হত্যার পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলা অন্যান্য মামলার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। চাঁদাবাজির অভিযোগও অনেক বেশি। ক্রমবর্ধমান চাঁদাবাজির কারণে মানুষ রীতিমতো অতিষ্ঠ। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানেই মানুষ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধীদের বেপরোয়া আচরণের পেছনে প্রতিহিংসার রাজনীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি অনেকাংশে দায়ী। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে সমাজে আরো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশে অপহরণসংক্রান্ত অপরাধের হারও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। গত এক বছরে এই হার বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৭১৫ জন। গত বছর এই একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৩৪০। অপহরণের দিক থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এই এক মাসেই অপহরণের শিকার হয়েছেন ১০৯ জন।
স্বৈরাচার উৎখাতের আন্দোলনের সময় দেশের অনেক থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও জেলখানায় হামলা হয়। প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়। সেসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো অপরাধীদের হাতে আছে। এ ছাড়া চোরাচালান হয়ে আসছে আগ্নেয়াস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। বরাবরই দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। এবারও তেমন আশঙ্কা রয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম অবশ্য বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে দেশের সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। আমরাও আশা করছি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।