দেশে ধানের ফলন ভালো। তার পরও চালের দাম কমছে না। বেশ কিছুদিন ধরে বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরও বলছে, গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট চালের প্রায় ৫৫ শতাংশ বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়। ফলন ভালো হলে বাজারে সরবরাহ বাড়ে। ফলে বাজারে দাম কমে। এ বছর বোরো ধান রেকর্ড ২ কোটি ২৬ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৫ লাখ টন বেশি।
রেকর্ড পরিমাণ বোরো ধান উৎপাদন হলেও কৃষক ও ভোক্তা কেউই এর সুফল পাননি। সরকার বাধ্য হয়ে বাজার স্থিতিশীল করতে গত ১০ আগস্ট ভারত থেকে ৪ লাখ ৬১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাল আমদানির জন্য ২৪৫ প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বন্দর দিয়ে চাল আমদানি করে। এর পরও চালের দামে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। রাইস মিলমালিক, পাইকারি থেকে শুরু করে খুচরা চাল বিক্রেতারা বলছেন, করপোরেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে চালের বাজার। তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ জন্য বোরো ধানের ভরা মৌসুমে চাল আমদানি করার পরও কমছে না দাম। তাই করপোরেট হাউসগুলোতে দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, গত অর্থবছরে বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে ২২৬ লাখ মেট্রিক টন। আগের বছরের একই সময়ে ২১০ লাখ ৬৮ হাজার ১৬ লাখ টনের বেশি বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। তার পরও বন্যায় যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য সরকার চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।
যারা চালের দাম বাড়াচ্ছেন, সেই করপোরেট মিলমালিকদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। কয়েক বছর থেকে মেঘনা কোম্পানির ফ্রেশ, আকিজ, এসিআই রূপচাঁদার করপোরেট কোম্পানি বা বিভিন্ন গ্রুপ চালের ব্যবসায় নেমেছে। এমনকি ভারতের কোম্পানিও চালের ব্যবসা করছে। মুষ্টিমেয় কিছু করপোরেট বা গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা বেশি করে ধান কিনে গোডাউনে রাখছেন। তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ জন্য দাম কমছে না। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দাম কমাতে হলে রাইস মিলে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
গোডাউনে অভিযান করলেই ধরা পড়বে হাজার হাজার বস্তা ধান-চালের মজুত। কিন্তু সেটা না হয়ে হচ্ছে উল্টো চিত্র। দেখা যায়, দাম হঠাৎ বাড়লেই ভোক্তা অধিদপ্তর খুচরা বাজারে অভিযান চালায়। তাদের জরিমানা করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ধান কিনে মজুত করছেন তারা। নতুন ধান ওঠামাত্রই হাজার হাজার বস্তা ধান কিনে মিলমালিকরা গোডাউনে রাখেন। কৃষকের ধান শেষ হলে বেশি দরে এই চাল বিক্রি করেন। তাই সরকারকে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে করপোরেটদের গোডাউন বা মিলে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার এ ব্যাপারে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সেটিই প্রত্যাশা।