প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে সময় বাকি পাঁচ মাসেরও কম। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। তফসিল ঘোষণা করার জন্য হাতে সময় আছে আড়াই মাসের মতো। এই সময়টি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বড় দলগুলোর প্রতিটি আসনে অনেক প্রার্থী থাকে। সেখান থেকে যোগ্য প্রার্থী বের করে আনা খুবই কঠিন কাজ। এই সময়ে কয়েকটি দল এমন কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে, যে দাবিগুলো পূরণ করতে গেলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সাতটি দল পিআর পদ্ধতি চালু, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদসহ নির্বাচনসহ কিছু অভিন্ন দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মসূচি পালন করেছে। শুক্রবারও তাদের কর্মসূচি ছিল।বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভ সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণা উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু বিশেষ মহলের প্ররোচনায় সেখানে জন-আকাক্সক্ষাবিরোধী অনেক বিষয় যোগ হয়।
আমরা তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছিলাম। যদি নির্বাচনের আগে তা সংশোধন না হয়, তবে দেশ ভয়াবহ সংকটে পড়তে পারে।’
দলগুলোর মধ্যে সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা)। খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে। নেজামে ইসলাম পার্টি পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বাদে অন্য ছয়টি দলের। অভিন্ন দাবিগুলোর বাইরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি রয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের।
এমন পরিস্থিতিতে ঘোষিত সময় ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে জনমনেও সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরাও নানা প্রশ্ন তুলছেন। আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ চলাকালে প্রায় একই ইস্যু ও সময়ে রাজপথে কর্মসূচি ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বলা হয়, এটি নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা, এর মাধ্যমে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দলের একই সঙ্গে মাঠে নামাতে অনেকের সন্দেহ, এসবের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, কিছু মহল এখনো ভোট পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, বড় একটি দল খেলায় নেমেছে।’ তিনি বলেন, যেসব সংস্কার প্রস্তাব এসেছে সেসব আগামী নির্বাচনের আগেই সব কেন বাস্তবায়ন করতে হবে? সংস্কারের জন্য কেন এত সময় নেওয়া হবে? জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সময় উঠল না কেন—এসব প্রশ্ন অনেকের।
দেড় দশক পর একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের প্রত্যাশায় রয়েছে দেশের মানুষ। আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো জনপ্রত্যাশাকে মূল্য দিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে।