দেশের
মাটিতে চলতে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এরই মধ্যে মাঠের কাঁশফুলের শুভ্রতায় শরতের
ঘনঘটায় শারদীয় দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন। দেবী বন্ধনায় সারা দেশের ন্যায়
কুমিল্লার প্রতিটি পূজা মন্ডপেও চলছে উৎসবের আমেজ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে আনন্দমুখর এবং পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন।
অন্যান্য যে কোন বছরের চেয়ে এবার
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকতর নজরদারীতে রয়েছে পূজা মন্ডপগুলো। পূজা মন্ডপের
যে কোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভূমিকা নিয়েছে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ
থেকে শুরু করে র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা। আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনীর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু
করে শিক্ষকরাও দায়িত্ব পালন করছেন। যে কোন বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে প্রশাসনের
পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও রয়েছে সক্রিয় ভূমিকায়। মন্দির কমিটির পক্ষ
থেকে রয়েছে কার্ডধারী স্বেচ্ছাসেবক টিম।
জানা যায়- এবার কুমিল্লা
মহানগরীসহ ১৭টি উপজেলার ৭৯৭ পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
এর মধ্যে ১৬০টি পূজা মন্ডপকে অধিক গুরুত্বপূূর্ণ এবং ৩৬০টি পূজা মন্ডপকে
গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অধিক গুরুত্বপূর্ণ
মন্ডপগুলোতে সার্বক্ষনিক অবস্থান নিয়েছে পুলিশের টিম। ওইসব গুরুত্বপূর্ণ ও
অধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপগুলোর চারপাশে সাদা পোশাকে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনীর বাড়তি নজরদারী এবং বিভিন্ন বাহিনীর টহলটিম।
জেলার ৭৯৭টি পূজা
মন্ডপে প্রায় ৭ হাজার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে রয়েছে। এর মধ্যে
পাঁচ সহস্রাধিক আনসার, সহস্রাধিক পুলিশ, ছয় শতাধিক বিজিবি, দুই শতাধিক
সেনাবাহিনী। তাদের সাথে মাঠে থাকবে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)
এর ৩টি টহল টিম। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে পুলিশের ডিবি,
ডিএসবি এবং র্যাবের একাধিক টিম। জেলা সদরসহ সকল পূজা মন্ডপে সার্বক্ষনিক
নজরদারিতে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা।
জেলা শহরসহ উপজেলা পর্যায়ে করা হয়েছে মনিটরিং সেল।
কুমিল্লা আনসার
ভিডিপি’র জেলা কমান্ড্যান্ট মো. রাশেদুজ্জামান বিভিএমএস জানান- সনাতন
ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সারা দেশের
ন্যায় আমরা কুমিল্লাতেও প্রতিটি পূজা মন্ডপে ৯ দিন যাবৎ নিরাপত্তা নিশ্চিতে
কাজ করে যাচ্ছি। পুরো জেলার ৭৯৭ পূজা মন্ডপে ৫ হাজার ৯৬জন আনসার ভিডিপি
সদস্য কাজ করছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে স্থায়ী ভাবে আনসার সদস্যরা
সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের টহলটিমও মাঠে থাকবে। যে কোন
পরিস্থিতি মোকাবেলায় আনসার সদস্যরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
র্যাব-১১,
সিপিসি-২ কুমিল্লার কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম জানান- কুমিল্লার পূজা
মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের ৩টি টহল টিমের পাশাপাশি সাদা
পোশাকেও মাঠে রয়েছে র্যাব সদস্যরা। পূজা মন্ডপ ঘিরে কোন দুস্কৃতিকারীদের
ছাড় দেয়া হবে না। কোন বিশৃঙ্খলার সংবাদ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিবে র্যাব।
বিজিবি’র
কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন (১০ বিজিবি) সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল রেজাউল করিম
জানান- কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৫২টি পূজা মন্ডপ রয়েছে। ওইসব পূজা
মন্ডপগুলোতে অধিক নিরাপত্তায় কাজ করবে বিজিবি। এছাড়াও জেলা জুড়ে বিজিবির
টহল টিম কাজ করবে। এবারের পূজায় ২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। অবাধ,
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব
শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপনে কাজ করবে বিজিবি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন
কমিটির কুমিল্লা জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্মল পাল
ট্রাস্টি জানান- অতীতের যে কোন সময়ে চেয়ে এবারের শারদীয় দুর্গা পূজায়
প্রশাসনের কঠোর নজরদারি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমরা আশা করছি অত্যন্ত
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। এসময় তিনি
সকলকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান।