রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১৩ আশ্বিন ১৪৩২
রবিবাসরীয়...
প্রকাশ: রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম আপডেট: ২৮.০৯.২০২৫ ১:৩৯ এএম |

রবিবাসরীয়...










রবিবারের নামচা



জিজেক সাহেবের লাকাঁগিরি, অথবা প্রাচ্য-বিষয়ক উন্নাসিকতা


রবিবাসরীয়...কায়সার হেলাল ।।

১.
এই লেখাটা মূলত গত সপ্তাহের রবিবারের নামচা’র দ্বিতীয় সংযোগ। গত কয়েকদিন একাডেমিক কাজের ফাঁকে ইউটিউবে স্লাভো জিজেকের কিছু ভিডিও দেখছিলাম এবং অনলাইনে তাঁর কিছু লেখাজোখার লিংক ঘাটাঘাটি করছিলাম। যেহেতু সমসাময়িক দর্শনে স্লাভো জিজেক উল্লেখযোগ্য কণ্ঠ, তাই প্রাচ্যের দর্শন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানতে গিয়ে ব্যাপক খানাখন্দে হোঁচট খাচ্ছিলাম। এমনিতে যারা হাল আমলের তাত্ত্বিক পাঠে মগ্ন তাঁরা জানেন যে তিনি লাকাঁর মনোবিশ্লেষণ, হেগেলের দ্বান্দ্বিকতা ও মার্ক্সীয় সমালোচনা মিলিয়ে মতাদর্শ বা Ideology নিয়ে দার্শনিক বিশ্লেষণ করেন; জনপ্রিয় সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র ও দৈনন্দিন ভাষার উদাহরণ এনে দেখান কীভাবে ইচ্ছা, আনন্দ ও ভয় ক্ষমতার কাঠামোকে টিকিয়ে রাখে। এ খাতে তাঁর ‘প্যারাল্যাক্স ভিউ’তে দৃষ্টিভঙ্গির ‘গ্যাপ’, ‘ইভেন্ট’-এ অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক বিচ্ছেদের সম্ভাবনা, আর ‘ভায়োলেন্স’-এ দৃশ্যমান ও কাঠামোগত সহিংসতার পার্থক্য বিশেষভাবে আলোচিত। তাঁর প্ররোচনামূলক লেখনভঙ্গি একদিকে পুঁজিবাদ, জাতীয়তাবাদ ও পরিচয়-রাজনীতির সমালোচনা তীব্র করে, অন্যদিকে বিতর্ক উস্কে দেয়। এই দ্বৈততাই তাঁকে প্রভাবশালী ও আলোচ্য করে তুলেছে।
যাই হোক, তিনি লাকাঁর শক্ত টেম্পলেট এবং একধরনের নাটকীয় বিতর্কিত রেটোরিক নিয়ে সবসময়ই সরব। কিন্তু ঘুরে ফিরে যেটা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় তা হলো, যখন তিনি আধুনিকতা, ভাঙ্গন ও শূন্যতার কথা বলেন, তখন তাঁর রাডার মূলত পাশ্চাত্য ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের ওপরই ফোকাস করে: বাখ, মাহলার, ওয়াগনার, শোয়েনবার্গ (গত রবিবারের নামচা দ্রষ্টব্য)। এই পছন্দ কোনো কোনো দিক থেকে স্বাভাবিক; জিজেকের লাকাঁবাদী কাঠামো ও হেগেলীয় ডায়ালেকটিক সেইসব ধ্বনির ভাঙ্গন-বিভ্রাটকে বিশ্লেষণ করতেও ভাল কাজ করে। কিন্তু একই সময়ে এটা একপ্রকার সীমাবদ্ধতাও বটে যা একটি কাঠামোগত দরজা বন্ধ করে দেয়, এবং এমন এক অদৃশ্য অভিসন্ধি জন্মায় যা প্রাচ্য-দর্শন ও ধর্ম, বিশেষ করে সুফি গান, ভারতবর্ষীয় দর্শন-ধর্ম-রাগসঙ্গীত, বঙ্গীয় সহজিয়া-বাউলিয়ানা বা চীনা সঙ্গীত-দর্শনের অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা ও অনুভব-ভিত্তিক জগৎকে সহজেই অদৃশ্য করে ফেলে। এই সীমাবদ্ধতার সূত্র ও প্রভাব সম্পর্কে যে বিশ্লেষণাত্মক পাঠ দরকার, তা তাঁর তত্ত্বচর্চা-ধারার নিজস্ব পদ্ধতিগত ফলাফল হিসেবে সেই অজ্ঞতাকেই তৈরি করে বলে যুক্তি দাঁড় করানো যায়। আবার এই বিষয়টি (এবং জিজেকের লাকাঁবাদী কাঠামোর পরিচিত বৈশিষ্ট্য) বিশদভাবে আলোচনার ভেতর দিয়ে জিজেকের প্রাচ্য-অজ্ঞতা কী সচেতন উপেক্ষা, নাকি তাঁর তাত্ত্বিক পদ্ধতির প্রতিক্রিয়া, সেই সূত্রও ধরতে পারবার জরুরত আছে।
স্লাভো জিজেক যখন ‘প্রাচ্য দর্শন’ শব্দটি উচ্চারণ করেন, তিনি আসলে সমসাময়িক পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় ধ্যান বা তথাকথিত মাইন্ডফুলনেসকেন্দ্রিক বৌদ্ধ/তাওবাদী চর্চাকে নিশানা করেন। তাঁর যুক্তি হল এটি এমন এক মানসিক ‘ইনার ডিস্ট্যান্স’ শেখায় যাতে মানুষ বাজারের দ্রুতগামী খেলায় পুরোপুরি অংশ নিয়েও ভেতরে ভেতরে ভাবতে পারে যে আসলে সে জড়িয়ে নেই; ফলে এই থেরাপিউটিক শান্তি ষধঃব পধঢ়রঃধষরংস বা সাম্প্রতিক পুঁজিবাদের নিখুঁত আদর্শ-সম্পূরক হয়ে ওঠে। এই থিসিসটি তিনি ২০০১ সালের আলোচিত প্রবন্ধ ‘ঋৎড়স ডবংঃবৎহ গধৎীরংস ঃড় ডবংঃবৎহ ইঁফফযরংস’-এ সরাসরি হাজির করেছিলেন, যেখানে ‘বিভিন্ন প্রকারের তাও’-কেও একই অভিযোজনের অংশ হিসেবে পড়া হয়। ‘বিভিন্ন প্রকারের তাও’ বলতে জিজেক যে জিনিসগুলিকে ইঙ্গিত করেন সেগুলো হচ্ছে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে থাকা ‘ঞধড় ড়ভ খবধফবৎংযরঢ়/গধহধমবসবহঃ/ইঁংরহবংং’ টাইপ পরামর্শ-সাহিত্য, পপ-আধ্যাত্মিকতা, কর্পোরেট মাইন্ডফুলনেস, ইত্যাদি, যেগুলো তাওবাদকে ‘লাইফ হ্যাক’ বা স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট টুলে নামিয়ে আনে। তাঁর বড় যুক্তি হচ্ছে এভাবে ‘ইনার পিস’-এর প্রতিশ্রুতি মানুষকে মুক্তবাজারী সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে, তাই এটি ‘গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের হেজিমনিক আইডিওলজি।’ এই বক্তব্য তাঁর ‘ঙহ ইবষরবভ’থেকে নেয়া। এখানে তিনি অ্যালভিন টফলারের টার্ম ‘ফিউচার শক’ ও সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ঋবঃরংযরংস প্রবন্ধ দ্বারা অনুপ্রাণিত ‘ভবঃরংযরংঃরপফরংধাড়ধিষ’ ধারণা টেনে দেখান কীভাবে মানসিকভাবে দূরত্ব রেখে পুঁজিবাদী সিস্টেমের সঙ্গেই খাপ খাওয়া যায়। ছোট করে বললে ফিউচার শক মানে দাঁড়ায় দ্রুত বদলের ধাক্কায় মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয় এবং ফেটিশিস্টিক ডিসঅ্যাভাওয়াল মানে ‘জানি, তবু যেন জানি না’ টাইপ দ্বৈত অবস্থান। তাঁর ভাষায়, ইউরোপীয় প্রযুক্তি ও পুঁজি যখন বিশ্বজুড়ে জিতে যাচ্ছে, তখন এশিয়ার আধ্যাত্মিকতাই ইউরোপের মতাদর্শিক পরিসরে নতুন হেজেমনিরূপে উত্থিত এবং এই বিনিময়ই হলো আমাদের সময়ের নির্মম পরিহাস।
তবে জিজেক কেবল থেরাপি-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ান না; তিনি দার্শনিকভাবে হেগেলীয় ‘নেগেটিভিটি’, অর্থ্যাৎ, বিরোধ, ফাঁটল আর অস্বস্তির সঙ্গে নির্মমভাবে মুখোমুখি হওয়া দরকার বলেও মনে করেন। ‘অনংড়ষঁঃবজবপড়রষ’-এ তিনি ইঙ্গিত করেন: ‘শূন্যতা’ যে শান্তি এনে দেয়, সেই ধারণাই প্রশ্নসাপেক্ষ। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বলে, ‘শূন্যতার মধ্যেও শান্তি নেই।’ অর্থ্যাৎ, পুঁজিবাদী বাস্তবতার নির্মমতা এড়ানো হয়তো ঐসব ধ্যান-থেরাপি দিয়ে সাময়িকভাবে সম্ভব, কিন্তু সত্যিকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন থেমে যাবেই। এই কনট্রাস্টে বৌদ্ধ ‘শূন্যতা/এনলাইটেনমেন্ট’-এর সঙ্গে তাঁর নেগেটিভিটির টানাপোড়েন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। খ্রিস্টধর্ম পাঠেও এই বিরোধকে তিনি আরও ধারালো করেন। ‘ঞযব চঁঢ়ঢ়বঃ ধহফ ঃযব উধিৎভ’-এ ‘ডযবহ ঊধংঃ গববঃং ডবংঃ’ অধ্যায়ে জিজেক দেখান, প্রাচ্যধর্মীয় প্রশান্তির বিপরীতে খ্রিস্টীয় ‘ইভেন্ট’ বা অবতার/ক্রুশবিদ্ধতা/পুনরুত্থানের মতো বিষয়গুলো ভাঙ্গন, ব্যাঘাত, কিংবা অসম্পূর্ণতার স্বীকার যা রাজনৈতিক নতুনত্বের সম্ভাবনা খোলে। ‘অনংড়ষঁঃবজবপড়রষ’-এ এই সুরই অন্যভাবে বলে যে খ্রিস্টীয় ইভেন্ট যেন বৌদ্ধ নির্বাণের স্ট্রাকচারাল অবভার্স (ংঃৎঁপঃঁৎধষ ড়নাবৎংব) যা শূন্যতার স্থিরতা ভেঙ্গে দেওয়া সেই একই ঝাঁকুনি।
অবশ্য এই অবস্থানের পাল্টা পাঠও আছে। আন্তর্জাতিক জিজেক স্টাডিজে প্রকাশিত নিবন্ধসমূহ দেখায় যে জিজেক ‘ওয়েস্টার্ন বৌদ্ধধর্ম’ বলতে যা মনে করেন তা ঐতিহ্যগত বৌদ্ধ দর্শনের পূর্ণতা ধরতে পারে না। শূন্যতা, অনাত্ম বা প্রতিত্যসমুৎপাদের দর্শনকে শুধুই থেরাপিউটিক নিদান বা পুঁজিবাদের ক্ষত আড়াল করবার সাময়িক মলম হিসেবে দেখা অতিসরল হতে পারে। কেউ কেউ বরং এটাও দেখান যে মহাযান বৌদ্ধ অন্টোলজি আর জিজেকের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের মধ্যে সম্পর্কের বিপরীতমুখী জটিল অনুরণনও আছে। সুক্ষ্মভাবে পাঠ করলে ধরা পড়ে যে জিজেক মূল দরকারি দুইটি জিনিসের উপর আলোকপাত করেন। এক, তিনি কর্পোরেটবন্ধু মাইন্ডফুলনেস-ইন্ডাস্ট্রিকে ‘নিরপেক্ষ মানসিক স্বাস্থ্য’ বলে অব্যবহার্য করে দেন না; বরং দেখান, এটি কীভাবে নৈতিক ও রাজনৈতিক দায় এড়িয়ে নেওয়ার মতাদর্শ হয়ে উঠতে পারে। দুই, তিনি দর্শনের প্রশ্নকে আবার রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রশ্নে বেঁধে দেন। মানে শুধু অন্তরের শান্তি নয়, প্রয়োজন কাঠামো বদলের সাহস। তবে সমানভাবে দরকারি যে জিনিসটি মনে রাখা দরকার তা হল বৌদ্ধ/তাওবাদী ঐতিহ্য একরৈখিক নয়; সেখানে কঠোর যুক্তিবিদ্যা থেকে নৈতিক অনুশীলন- সবই আছে। তাই জিজেকের সমালোচনাকে বুঝতে হলে ‘পশ্চিমা বৌদ্ধধর্ম’-এর কর্পোরেট-থেরাপি সংস্করণ আর ঐতিহাসিক দর্শন প্রবাহ- এই দুই মেরুর সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন বোঝাপড়া দরকার।
২.
জিজেকের বিশ্লেষণের শক্তি কোথায়? তিনি লাকাঁর তিনটি রেজিস্টার- ইমাজিনারি, সিম্বলিক, এবং রিয়াল’কে ব্যবহার করে আধুনিকতার অভিজ্ঞতাকে সুপরিকল্পিতভাবে পড়ে দেখান। শোয়েনবার্গের এটোনাল ভাঙ্গন তাঁর কাছে কেবল সঙ্গীত নয়; তা বাস্তবতার পতনের একটা চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা, যেখানে রূপ গলে যায়, অর্থ দ্রবীভূত হয়, আর আমরা এমন এক শূন্যতার সম্মুখীন হই যা কাজ করবার প্রবল শক্তি হয়ে ওঠে। এই প্রস্তাবনা শক্তিশালী এবং অনেক ক্ষেত্রেই অর্থ খোঁজার যোগ্য। আধুনিকতা যে কোনো পুনরুত্থান কাহিনি না বলে বরং বিভাজন, অস্তিত্বগত সংকট ও রাজনৈতিক আকষ্মিকতার মধ্য দিয়ে বিদ্যমান- এই অনুমান জিজেক সুদৃঢ়ভাবে তুলে ধরেন। এই একই রীতি ধরে তিনি সিনেমা-বিশ্লেষণে দ্য ম্যাট্রিক্স ও দ্য থার্টিন্থ ফ্লোর-কে আনেন যেখানে ভিজ্যুয়াল ভাঙ্গন ও অনিশ্চয়তার অভিজ্ঞতা লাকাঁর রিয়াল-এর আঘাতকে ফিল্মি ভাষায় প্রকাশ করে, এবং দর্শক সেখানে ঐতিহ্যগত অর্থ হারানো, অস্তিত্বের সন্দেহ ও শূন্যতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন (গত রবিবারের নামচা দ্রষ্টব্য)।
তবে সমস্যা শুরু হয় যেখানে জিজেক লাকাঁর আইডিয়াগুলোকে সারা বিশ্বের সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারের উপরে একরকম সার্বজনীন মান হিসেবে প্রজ্বলিত করতে চান, অথচ তিনি প্রাচ্য-ধারার অভ্যন্তরীণ শক্তি ও পদ্ধতিকে আমলেই নেন নি। প্রাচ্যে সঙ্গীত মানে কোনো ‘কমান্ড-অন’ ইমেজ বা পারফর্ম্যান্স নয়; সেখানে শূন্যতা বা বিমূর্ততার অভিজ্ঞতা অন্য ধরনের। ভারতবর্ষীয় রাগে আলাপ-তাল-ধূনের দীর্ঘ প্রসারণ একটি সত্যানুভব তৈরি করে, সুফি কাওয়ালিতে পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে এক ধরণের বাসনা-লোপী চেতনার সম্মুখীন হন শ্রোতা। বৌদ্ধ ধ্যানপ্রথায় শূন্যতা কোনো ব্যর্থতার চিহ্ন নয়, বরং মুক্তির পথ। প্রাচ্যের দর্শন বহু আগেই শূন্যতা, ভারসাম্য ও সহাবস্থানের ভিন্ন রূপ চিনেছে। সাংখ্য বলেছে জগত পুরুষ ও প্রকৃতির যুগল খেলার ফল। জৈন দর্শন শিখিয়েছে অহিংসা ও অপরিগ্রহের নীতি, যাতে সহাবস্থান সম্ভব হয়। আর সহজিয়া-বাউল-ফকিরেরা শূন্যতাকে দেখেছেন প্রেম, দেহ, সুর ও শ্বাসের মিলন ও অনুশীলনে অর্জিত ‘মনের মানুষ’ হিসেবে। এখানে শূন্যতা মানে বিলীন হয়ে যাওয়া, তবে সেই বিলীনতা ভিন্নতাকে অস্বীকার করে নয়, বরং ভিন্নতার ভেতর ঐক্যের স্বাদ এনে দেয়। জিজেক এখানে যদি লাকাঁর রিয়াল-এর আঘাতের সঙ্গে এসব তুরীয় অভিজ্ঞতার সংশ্লেষ ঘটাতে পারতেন তবে দেখতেন যে প্রাচ্যের শূন্যতা ট্র্যাজেডি-ভিত্তিক হতেই পারে না; উল্টো বলা যায় এই অভিজ্ঞতা প্রকৃত অর্থে তৎপরতা, সম্ভাবনা, এবং অন্তর্দৃষ্টি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু তিনি তা করেন না, অথবা করলেও খুব একটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে নয়। ফলে তাঁর বিশ্লেষণে প্রাচ্য একপাক্ষিকভাবে ‘অপর’ বা ‘অপ্রতীয়মান’ হিসেবে থেকে যায়; এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণরুপে এডওয়ার্ড সাঈদের ঙৎরবহঃধষরংস বা প্রাচ্যবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি করে। অর্থ্যাৎ, পশ্চিম নিজেই অন্যকে সংজ্ঞায়িত করবার মধ্য দিয়ে যে বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত করে থাকে তা আদতে জগতের অপরপার্শ্বের কন্ঠরোধের আয়োজন।
এই পর্যায়ে লাকাঁর ‘ঞযব ঁহপড়হংপরড়ঁং রং ংঃৎঁপঃঁৎবফ ষরশব ধ ষধহমঁধমব’ বা ‘অচেতন ভাষার মতো গঠিত’ সূত্রটি তাৎপর্য পায়। লাকাঁ বলেছিলেন, অচেতন কেবল অগোচর আবেগ নয়; তার একটি কাঠামো আছে, একটি ভাষা আছে যা মেটাফোর ও মেটোনিমির মাধ্যমে কাজ করে। জিজেক এই ভাষাকাঠামোর উপর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ প্রয়োগ করে দেখান কিভাবে অভ্যন্তরীণ অ-জ্ঞান (ঞযব ঁহপড়হংপরড়ঁং) আইডিয়োলজির মুখোশ ধারণ করে এবং নির্দিষ্ট সামাজিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যদি লাকাঁর ভাষার মেটাফোরিক রিডিংকে মিলিয়ে আমরা প্রাচ্য-সঙ্গীত বা প্রাচ্যবাদী দর্শনের নিজস্ব অর্গানিক ‘ভাষা’ দেখতে না পাই, তবে প্রাচ্যপাঠ কেন্দ্রীক সমস্যা গাঢ় হয়। লাকাঁর টেমপ্লেট দিয়ে প্রাচ্যকে পড়লে প্রাচ্যবাদী অচেতনের স্বাতন্ত্র্য হারায়। আর মায়া, শূন্যতা, ব্রহ্ম-অনুভবের আলাদা ভাষাগুলি ‘পাতলা অনুবাদ’-এ বদলে যেতে বাধ্য হয়। সেই অনুবাদের অসফলতা, ভাষাগত পরিণতি ও জ্ঞান-ক্ষমতার সম্পর্ক এখানে মুখ্য রাজনৈতিক প্রশ্নে পরিণত হয়।
অন্তত দুটি দিকে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। প্রথমত, জিজেকের পদ্ধতি (লাকাঁ-হেগেলীয় পদ্ধতি ও অ্যান্টাগনিস্টিক পাঠ) যা পশ্চিমকে বুঝবার পাশাপাশি আধুনিকতাবাদের ভাঙ্গন, চেতন-অচেতনের রাজনীতি, আইডিয়োলজির কামনা-প্রবণতা ইত্যাদি বিষদভাবে নজরে আনে। কিন্তু দ্বিতীয়ত, একই পদ্ধতি প্রাচ্য-ধারার অনুভবভিত্তিক বাস্তবতাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ দেয়; এতে আমরা হয়তো এক ধরনের তথাকথিত ‘জ্ঞানের সার্বজনীনতা’ পাই, যদিও প্রকৃত প্রস্তাবে তা আঞ্চলিক, ঐতিহ্যগত ও ভাষাগত ভিন্নতাকে আড়াল করে। এটাই জিজেকের উন্নাসিকতার গঠনগত সূত্র যা কোনো ব্যক্তিগত অপ্রস্তুতি নয়; বলা যায় এটা তাঁর তাত্ত্বিক কৌশলের সীমাবদ্ধতা। ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো দেখিয়েছিলেন, জ্ঞান কখনো নিরপেক্ষ নয়; বরং ক্ষমতার সঙ্গে গাঁথা। পাশ্চাত্য যে প্রাচ্যকে রহস্যময়, আবেগপ্রবণ বা অযৌক্তিক হিসেবে নির্মাণ করেছে, তা আসলে উপনিবেশবাদী শাসনের কৌশল। জিজেক যখন প্রাচ্যের সঙ্গীত বা দর্শনের অনুভবকে অনুবাদ করতে ব্যর্থ হন, তখন সেই একই ক্ষমতার ডিসকোর্সই পুনরুৎপাদিত হয়। অথচ রবীন্দ্রনাথ মনে করিয়ে দিয়েছেন, প্রাচ্যের কাব্য ও সঙ্গীতে মহাজাগতিক ঐক্যের সুরই প্রধান। শূন্যতা তাঁর কাছে আতঙ্ক নয়, বরং সৌন্দর্যের অসীম অনুভূতি। প্রাচ্যের ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধির দিকপাল কলিম খান তাঁর ভাষাতত্ত্বে দেখিয়েছেন, বাংলা ভাষার বহুস্বর ও আন্তঃসম্পর্ক পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদের সরলরৈখিক কাঠামোর সঙ্গে মেলে না। ভারতীয় রাজনৈতিক মনোবিশ্লেষক আশিষ নন্দী বলেছেন, উপনিবেশ আমাদের কেবল রাজনৈতিকভাবে দাস করেনি, কল্পনাতেও পশ্চিমকে কেন্দ্রে বসিয়েছে। আর সাবঅল্টার্ন ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী স্পষ্ট বলেছেন, ইউরোপকে ‘প্রাদেশিকীকরণ’ (চৎড়ারহপরধষরুরহম ঊঁৎড়ঢ়ব) না করলে মানবতার বহুবিধ ইতিহাস বোঝা সম্ভব নয়। অর্থ্যাৎ, মূল কথা হল প্রাচ্যের ভাব বুঝতে না পারবার দায় কেবল জিজেকের নয়, প্রাচ্যের মানুষের উপনিবেশবাদী মনন ও বিশ্ব-দরবারে উল্লেখযোগ্য আকারে প্রাচ্যবাদী জ্ঞান উৎপাদন না করতে পারবার ব্যর্থতাও দায়ী। বিপ্লবী চিন্তক ও লেখক ফ্রাঞ্জ ফানোঁও এই পর্যায়ে ভীষণ প্রাসঙ্গিক। ইষধপশ ঝশরহ, ডযরঃব গধংশং-এ তিনি দেখিয়েছেন, উপনিবেশিত মানুষ নিজের অস্তিত্বকেই দেখে উপনিবেশকের চোখ দিয়ে। আর ঞযব ডৎবঃপযবফ ড়ভ ঃযব ঊধৎঃয-এ তিনি বলেছেন, উপনিবেশ মানুষকে ভেতর থেকে দাসে পরিণত করে। প্রাচ্যের মৌলবাদী বাস্তবতা আসলে তারই রূপান্তর। এখানে মানুষ ধর্মীয় মুখোশ পরে ভেবেছে সে স্বাধীন, অথচ বাস্তবে নতুন ছদ্মবেশে পুঁজিবাদের দাস, ঠিক যেমন উপনিবেশিত মানুষ সাদা চামড়ার মুখোশ পরে নিজের কালো চামড়াকে ঘৃণা করে। ফানোঁর ভাষায়, এটি এক প্রকার ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ।’ একদিক দিয়ে অবশ্য পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সংকট ভিন্ন পোশাকে হলেও মূলত একই সূত্রে বাঁধা। পাশ্চাত্যে এটি নগ্ন ভোগবাদ, প্রাচ্যে এটি ধর্মীয় মৌলবাদ। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষ নিজের চেতনার ভেতরে বন্দি। পার্থক্য শুধু এই যে পশ্চিমে পুঁজিবাদ সরাসরি, প্রাচ্যে সে ধর্মের ক্যামোফ্লাজ পরে প্রবেশ করেছে। ফলে জিজেকের হেগেল-মার্ক্স ও লাকাঁবাদী মন সমকালীন প্রাচ্যকে পরিপূর্ণরুপে পাঠ করতে পারে না। যদিও প্রাচ্যের ঝলমলে অভিজাত অতীতকেও পাঠ করতে পারতেন তিনি, কিন্তু সেক্ষেত্রেও বড় বাঁধা- কলিম খানের ভাষ্যে যদি বলি- তা হল প্রাচ্যের ইতিহাসের ইশারাভাষা ধরতে না পারবার সমস্যা।
আমরা এখানে একটি তৃতীয় পন্থাও চিন্তা করতে পারি: লাকাঁ-জিজেকীয় ফ্রেমকে অপর এক ধরনের রিডিং-টুল হিসেবে ব্যবহার করে প্রাচ্য ধারণাকে ‘অন্তর্ভুক্ত’ করা যায় কি না। অর্থ্যাৎ, লাকাঁর রেজিস্টারকে প্রাচ্যের নিজস্ব ভাষা, রীতিনীতি ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের সঙ্গে সংলাপ করিয়ে দেখা। সেখানে সম্ভাব্য ফল হবে দ্বৈত পরিবর্তন যেখানে লাকাঁনীয় বিশ্লেষণ প্রাচ্যের অভিজ্ঞতাকে আরও সূক্ষ্মভাবে ধরবে, এবং প্রাচ্যের পালাবদলে লাকাঁর তত্ত্বও নমনীয় হবে। শূন্যতা আর রিয়াল-এর মধ্যে নতুন এক সংহতিও গড়ে উঠতে পারে। যদিও এটি সহজ কাজ নয়; কিন্তু যদি আমরা সত্যিই বিশ্বজনীন দার্শনিক অনুসন্ধান চাই, তবে পাশ্চাত্য-কেন্দ্রিক পদ্ধতির বাইরে এই ধরণের আন্তঃসংলাপই করতে হবে।
৩.
এতসব বকবকের ভীড়ে আসল কথাটা বলতে ভুলে গিয়েছি। এই লেখাটা শুরু করবার পেছনে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের অবদান আছে। কীভাবে? যখন স্লাভো জিজেকের প্রাচ্য বিষয়ে আলাপ খুঁজছিলাম তখন মার্কেজের ‘ত্রামোন্তানা’ গল্পের একটি লাইন মনে পড়েছিল। মূলত এই লাইনটিই এই দীর্ঘ লেখার পেছনে একপ্রকার জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। এই গল্পটায় মার্কেজ ক্যারিবিয়ান মানুষের লোকবিশ্বাস, আচার, ও সংস্কারের সঙ্গে নর্ডিক অঞ্চলের মানুষের যুক্তিবাদী মননের দ্বন্দ্ব দেখিয়েছেন দারুণ দ্রষ্টার মত। ‘ক্যারিবিয়ানদের স্থির বিশ্বাসের মর্ম কী স্ক্যান্ডিনেভিয়ার যুক্তিবাদী মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব? গ্রীষ্মের দাপটে ও কড়া কাতালান মদের ঘোরে আচ্ছন্ন মানুষের মনে জন্ম নেয় যাবতীয় আদিম ইচ্ছা।’- এই হল সেই লাইনটি, অমিতাভ রায়ের অনুবাদে। যদিও মূল স্প্যানিশে এবং ইংরেজি অনুবাদে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পরিবর্তে নর্ডিক লেখা আছে তবে সেটা বড় সমস্যা না, কেননা নর্ডিক অঞ্চলের ভেতরেই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর অবস্থান। যাই হোক, মার্কেজ এই বাক্য দ্বারা কী বোঝাচ্ছেন? তিনি দেখাচ্ছেন যে এরা (নর্ডিক ও ক্যারিবিয়ানরা) একে অপরের হৃদয়ের ভাষা বোঝে না। ক্যারিবীয়রা যেটাকে ‘অভিজ্ঞতার সত্য’ বলে জানে, সেটি নর্ডিক হৃদয়হীন যুক্তিবাদীরা আত্মস্থ করতে জানে না, বরং উদযাপন-উৎসবের নামে উন্মত্ত-মদ্যপ হয়, কিন্তু ‘মূল’ জিনিসটা ধরতে পারে না। 
জিজেকদের দশাও একই বলে মনে হয় আমার। জ্ঞান তৈরি করতে গেলে সেই জ্ঞানের ভেতরে যে ভাষা, অভ্যাস, অনুবাদশক্তি কাজ করে, তাদের সঙ্গে যে সতর্কতামূলক আচরণ করা প্রয়োজন তা পশ্চিম এখনো সমঝে উঠতে পারে নি। বিশ্ব-সংস্কৃতির ভেতর থেকে যখন কোনো এক ধারাকে ‘সুপ্রিম’ বলে ধরে নেওয়া হয়, তখন সেটি অন্য ঐতিহ্যকে দমিয়ে দেয়, ফলে লোকজ যে নীরব শক্তি সেটাই হারিয়ে যায়। জিজেকের লাকাঁগিরি আমাদের অনেক দরকারী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে- এ কথা সত্য। কিন্তু সেটাকে যদি আমরা বিশ্বদর্শন বিশ্লেষণের একমাত্র সরঞ্জাম বানিয়ে ফেলি তাহলে যা হবে সেটা হল প্রাচ্যের সার্বিক অনুভব-কেন্দ্রীক বা ব্যক্তি অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক জ্ঞানের অস্বীকার। অথচ প্রাচ্যজ্ঞানে রয়েছে আরেকরকম মুক্তি, আরেকরকম রাজনীতি, যা আমাদের আধুনিকতার ভাঙ্গনের অভিজ্ঞতাকে বদলে দিতে পারে। অন্যভাবে বললে, জিজেক সাহেব লাকাঁগিরি করেন; তিনি ফ্রয়েডগিরিও করেন, কারন লাঁকা টানলে ফ্রয়েড আসবেন, এটাই বাস্তব। পাশাপাশি অবশ্য তিনি হেগেলগিরিও করেন। হেগেল টানলে মার্ক্সও আসবেন। মার্ক্সের তাত্ত্বিক কাঠামোকে বলবৎ রেখে জিজেক সাহেব উত্তরাধুনিকতার আলাপ দেন। ফলতঃ জিজেক একজন পোস্টমডার্ন কমিউনিস্ট। অপরদিকে প্রাচ্যের ‘গভীর নির্জন পথে’র মানুষেরা গুরুবাদী। গুরুপদে আত্মসমর্পণ করে ব্রহ্মসাধনায় রত থাকেন এঁরা। আর 'অপর' বা 'ঞযব ঙঃযবৎ'কে চিহ্নিত করে এঁরা নিজের ভেতর ব্রহ্মের (নাকি গুরুর?) অধিষ্ঠান ঘটান এবং পরস্পরে একাত্ম হন, অতঃপর বিলীন (ফানা/বাকা/নির্বাণ অর্থে) হয়ে যান।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫; চীন
লেখকঃ চিকিৎসক। অনকোলজি গবেষক। চিন্তক।
সূত্রঃ

[1] From Western Marxism to Western Buddhism - Žižek.uk
[2]: On Belief - dn721903.ca.archive.org
[3]: The Puppet and the Dwarf: The Perverse Core of Christianity (Book)
[4]: Is Žižek a Mahāyāna Buddhist? śūnyatā and li v ŽižekÕs materialism - zizekstudies.org
[5]: Absolute Recoil (Book)


গ্রন্থ আলোচনা


স্মৃতির গ্রন্থ

গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া ।।

সেলিনা বাহার জামান,পথে চলে যেতে যেতে। ১৯৫০ এর দশকে যে সব তরুণ-তরুণীরা ঢাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জীবনকে এগিয়ে নিয়েছেন তাদের মধ্যে সেলিনা বাহার,প্রতিভা মুৎসুদদী,লিলি চৌধুরী,সনজিদা খাতুন,ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ ছিলেন অন্যতম। আলোচ্য গ্রন্থটি সেলিনা বাহার জামানের স্মৃতি কথা।বাঙলাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হাবিবুল্লাহ বাহার হলেন সেলিনা বাহারের পিতা। ভয়েস আমেরিকার সঙবাদ পাঠক ইকবাল বাহার চৌধুরী হলেন তার অনুজ। সেলিনা বাহারের পরিবার কলকাতা থেকে ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে ঢাকায় চলে আসে। পিতা হাবিবুল্লাহ ছিলেন মন্ত্রী। মা আনোয়ারা বাহার ছিলেন শিক্ষিকা। আত্মীয় স্বজনেরা ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত ও নানা পেশায় নিয়োজিত। সেলিনা বাহারের ফুফু ছিলেন বেগম রোকেয়ার অনুসারী শামসুন্নাহার মাহমুদ।
লেখিকা তার শৈশব ও কলেজ জীবনের শিক্ষকদের নিষ্ঠা ও অবদান অবনত চিত্তে স্মরণ করেছেন। তিনি তার স্মৃতি কথায় বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, ছায়ানট, রোকেয়া হল প্রতিষ্ঠার স্মৃতি বর্ণনা করেছেন এই গ্রন্থে।
ঢাকায় রবীন্দ্র জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন,ঢাকা টেলিভিশনের যাত্রা,বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে স্মৃতি লিখেছেন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য তিনি যুক্তরাজ্যে যান এবঙ ফিরে এসে ইডেন কলেজে ই যোগ দেন। সে সময়ে যে সব নারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন তাদের প্রায় সবার কথাই সেলিনা বাহার  তার এই গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। ১৯৫০ ,১৯৬০ এর দশকের নানা রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তথ্যাদিতে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থ। এটির ভূমিকা লিখেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান (বর্তমানে প্রয়াত)।
গ্রন্থটি পাঠকদের কাছে আকর্ষণীয় ও সুখপাঠ্য হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়।
সাহিত্য প্রকাশ ,ঢাকা।


'আরাধ্য মৃত্যু'

জুবাইদা নূর খান ।।

গাছের মগডালে উপড়ে ফেলা শিকড় দোলে কংকালের মতো।
ইকেরাসের মতো পাখনা লাগানোর শখ যে তার আজীবন।
সূর্যের আলিঙ্গনে পুড়ে যাওয়ার ভয় তো মামুলি।
মোমের মতন গলে পড়া কালচে রক্ত বিন্দুতে নরকের কীট গুলো পিংপং বলের মতন লাফায় আমাজনের গহীন সুরঙ্গে।
ফেনিল সমুদ্রে আকাশের তারকাদের নন্দিত বাসর ঘরে কামদেবীর সুইসাইড নোট।
আর,জরা জঠরে পুঁজের পিন্ড শকুনির  মতো খামচে ধরে মাতৃত্বের বোবা আকুতিভরা স্বরনালীকে।
মিষ্টির দোকানে পসরা সাজানো বিষের শিশি।
লাইন ধরে দাঁড়ানো ক্রেতাদের সামলানো যে বড় ই দায়।
পৃথিবীর সকল বিষ বিজ্ঞানীরা আজ অন্তরীন।
আরও চাই! আরও চাই! আরও আরও বিষ চাই।
কোথায় পাবে এতো এতো বিষ তারা?
রেটল স্ন্যাক আর গোখরা!  সে তো কবেই বিলীন!
অশ্বত্থ গাছের ডালে ডালে কোটি কোটি  সাপুড়ের নীল দেহ মুক্তির আনন্দে দাঁত কেলিয়ে হাসে।
বেঁচে থাকা অথর্ব গুলো টিথোনাসের মতন মৃত্যু দেবীকে খুঁজে ফিরে ফেরারি আসামীর মতন।
আহা! আরাধ্য মৃত্যু!













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব ঘটতে পারে: তারেক রহমান
ইসলাম কোনো কোটা রাজনীতি নয় : সালাহ উদ্দিন আহমেদ
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সুমন সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম
বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী ভুটান
কুমিল্লায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ৭৯৭ পূজা মণ্ডপ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন আজ
কুমিল্লা মহানগরে ‘আপ বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা
সাব্বির হত্যা মামলা কুমিল্লায় দুই আ’লীগ নেতা গ্রেপ্তার
মুরাদনগরে কুকুরের কামড়ে আহত ৫০
৫ দফা দাবিতে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২