পূজা:
যে-ক্রিয়া পূর্বজন্মকৃত কর্মপ্রবাহ শান্ত করে, জন্ম-মৃত্যু নিবারিত করে এবং
সম্পূর্ণ ফলদান করে- সেই ক্রিয়াকেই পূজা বলে। অর্থাৎ সেবক ও ঈশ^রের ঐক্যই
হলো পূজা। তবে পূজার প্রকারভেদ রয়েছে।
প্রতিমা: পূজার জন্য ব্যবহৃত
বিভিন্ন প্রতীক, তা-ই প্রতিমা। কুলোতে, গৃহভিত্তিতে, পটে অর্থাৎ বস্ত্রের
ওপর বর্ণলেপাদি দ্বারা মূর্তি অঙ্কিত করে, ধাতু-কাষ্ঠ পাষাণাদি নির্মিত
ফলকে, হৃদয়ে রূপময়ী মূর্তি কল্পনা করে যে বিগ্রহ- তা-ই প্রতিমা।
শ্রীরামকৃষ্ণ
বলেছেন- ‘প্রতিমাপূজাতে দোষ কি, বেদান্তে বলে, যেখানে ‘অস্তি’ ‘ভাতি’ আর
‘প্রিয়’ সেখানেই তাঁর প্রকাশ। তাই তিনি ছাড়া আর কোন জিনিসই নাই।’ ঈশ^র লাভ
হলে আর প্রতিমাপূজার কি দরকার।’
আরও বলেছেন- ‘প্রতিমায় আবির্ভাব হতে গেলে তিনটি জিনিসের দরকার।
প্রথম: পূজারীর ভক্তি।
দ্বিতীয়: প্রতিমা সুন্দর হওয়া চাই।
তৃতীয়: গৃহস্বামীর ভক্তি।
মূলকথা:
প্রতিমা যদি যথাশাস্ত্র দেবতার অনুরূপ হয়, পূজার উপচারাদির যদি বিশেষ
ব্যবস্থা থাকে এবং সাধকের যদি একান্ত বিশ^াস থাকে তাহলে প্রতিমাতে দেবতা
সন্নিহিত হয়ে থাকেন।
পূজা কীভাবে করতে হবে
শ্রীভগবান বলেছেন- ‘ভক্তিপূর্বক যে আমাকে পত্র, পুষ্প, ফল ও জল অর্পণ করে, আমি তার সেই ভক্তি উপহার প্রীতির সঙ্গে গ্রহণ করি।
শ্রীদুর্গা পূজা:
যে পূজার মূল উপস্যা হলেন দেবী দুর্গা, সেই পূজাই দুর্গাপূজা।
‘দুর্গা
নামে উৎপত্তি হলো ‘দুর্গ’ শব্দের অর্থ দৈত্য, মহাবিস্ম, ভববন্ধ, কুকর্ম,
শোক, দু:খ, নরক, যমদণ্ড, জন্ম, মহাভয়, অতিরোগ, আ-কারের অর্থ হলো নাশক। অতএব
‘দুর্গা’ শব্দের অর্থ-এই সমস্ত দুর্গতিনাশিনী।
‘দুর্গা’ পূজাকে
মহাপূজাও বলা হয়। অর্থাৎ যে পূজায় মহাস্নান, পূজা, হোম ও বলিদান-এই চারটি
কর্ম আছে, তার নাম মহাপূজা। শারদীয়া দুর্গাপূজা হলো মহাপূজা।
মহাপূজার কাল:
দুই
ঋতু শরৎ ও বসন্ত দেবীপূজার জন্য বিশেষ প্রশস্ত। শাস্ত্রে বলা আছে নবরাত্র
ব্রত শরৎকালে বিশেষরূপে যথাবিধি করতে হয় এবং বসন্তকালেও তা প্রীতিপূর্বক
অনুষ্ঠান করা কর্তব্য।
শরৎ ও বসন্ত ঋতুদ্বয় প্রাণিদের পক্ষে অতি দু:খে
অতিবাহিত হয়। এই কারণে এই দুই ঋতু সমস্ত লোকের নিকট ‘যমদ্রংস্টা’ বলে
বিখ্যাত। বসন্ত ও শরৎ দুই ঋতুই অতি ভয়ংকর: এই সময়ে মানুষের বিধি পীড়া
উপস্থিত হওয়ায় অনেকেই কালকবলে নিপতিত হয়ে থাকে।
‘মহালয়া’ শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ
‘মহালয়া’ পদটি হলো ‘মহালয়’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গান্ত পদ। ‘মহালয়’ শব্দের নানা অর্থ করা হয়েছে।
১. মহা আলয় অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ আশ্রয়।
২. মহতের বা মহৎদের আলয় অর্থাৎ পরমস্থান বা যোগীদের আবাস।
৩. ‘মহা’ ‘লয়’ অর্থাৎ পরমলীন-মোক্ষ।
৪. এই মাহলয়া তিথি থেকে মহাপূজার শুভারম্ভ। এই অর্থেও মহালয়া পদটি তাৎপর্যপূর্ণ।
৫.
মহালয়াতে পরলোকগত পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য ভাদ্রমাসের
কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ তিথি থেকে একপক্ষকাল প্রতিদিন তিল তর্পন করতে হয়। যদি
সম্ভব না হয় তবে অনেকে শুধু মহালয়ার দিনই তা করে থাকেন।
দুর্গাপূজার উৎস
দুর্গাপূজাকে
বলা হয় শারদোৎসব। কোথাও বলা হয় বিজয়োৎসব, কোথাও বা মহাপূজা, কেউ বলেন
অকালবোধন, কারো কারো মতে কলিকালের অশ^মেধ যজ্ঞ। দুর্গাপূজার উৎসব সম্বন্ধে
নানা মত প্রচলিত।
শারদীয়া দুর্গাপূজা সপ্তকল্প
শারদীয়া দুর্গাপূজার সাতটি কল্প বা বিধি আছে।
১. কৃষ্ণনবম্যাদি কল্প: ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা নবমীতে দেবীর বোধন করতে হয়। তারপর আশি^নের শুক্লা নবমী পর্যন্ত একপক্ষব্যাপী পূজা করতে হয়।
২.
প্রতিপদাদি কল্প: আশি^নের শুক্লা প্রতিপদ থেকে আরম্ভ করে নবমী পর্যন্ত
নয়দিন পূজা করতে হয়। প্রতিপদে দেবীকে কেশসংস্কার, দ্বিতীয়াতে কেশবন্ধন
পট্টডোর, তৃতীয়ায় পদরঞ্জনের জন্য অলক্তক, ললাটে সিঁদুর, দর্শনের জন্য
দর্পন, চতুর্থীতে মধুপর্ক, পঞ্চমীতে অনুরু চন্দন প্রভৃতি অঙ্গরাগদ্রব্য ও
অলংকার দিতে হয়।
৩. ষষ্ট্যাদি কল্প: সন্ধ্যাকালে বিল্বশাখায় দেবীর বোধন,
আমন্ত্রণ ও অধিবাস, এই তিনকল্প ঘটে পূজা। সপ্তমী থেকে তিনদিন মৃন্ময়ী
প্রতিমায় পূজা করতে হয়।
৪. সপ্তম্যাদি কল্প: পূর্বে প্রতিমার পাশে নবপত্রিকা স্থাপন, সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত তিনদিন পূজা।
৫. মহাষ্টম্যাদি কল্প: অষ্টমী ও নবমী এই দু’দিন পূজা এবং দশমীতে বিসর্জন।
৬. মহাস্টমী কল্প: কেবল অষ্টমীতে পূজা এবং সেদিনই বিসর্জন।
৭.
মহানবমী কল্প: কেবল সেদিনই পূজা ও বিসর্জন। (উল্লেখ্য অষ্টম্যাদি, কেবল
অষ্টমী ও কেবল নবমী- এই তিন কল্পে ঘটস্থাপন করে পূজা করতে হয়।)
কল্পারম্ভ হলো কল্প বা বিধির অর্থাৎ বিধেয় পূজানুষ্ঠানের আরম্ভ।
শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠ
শারদীয় দুর্গাপূজার অপরিহার্য অঙ্গ হলো ‘দেবীমাহাত্ম্য’ বা শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠ।
বোধন ও অকালবোধন
বোধন
হলো শারদীয়া দুর্গাপূজার একটি অবশ্যকর্তব্য অঙ্গ। শরৎকালে অনুষ্ঠিত এই
বোধন ‘অকালবোধন’। বোধন অর্থাৎ জাগরণ। দেবী যেন নিদ্রিতা রয়েছেন, পূজার জন্য
তাঁকে নিদ্রা থেকে জাগরিত করা হচ্ছে এই ক্রিয়ার দ্বারা। অকালবোধন সম্বন্ধে
প্রসিদ্ধি আছে, রাবণবধের জন্য রামচন্দ্র দেবীর কৃপালাভ করার উদ্দেশ্যে
শরৎকালে তাঁর পূজা করেছিলেন। সে সময় দেবী নিদ্রিতা ছিলেন।
দুর্গাপূজা
কালে ‘কুমারীপূজা’ ও ‘সন্ধিপূজা’ অনুষ্ঠিত হয়। জীবন্ত নারীর মধ্যে (১ বছর
থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত) জগন্মাতার আবির্ভাবকে অনুভব করাই কুমারী পূজার
উদ্দেশ্য।
দুর্গাপূজার মহাস্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও মহানবমী তিথির
প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিট ধরে এই সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময়টা
হলো সন্ধিক্ষণ। কথিত আছে মহামায়া দুর্গা সন্তুষ্ট হয়ে এই সন্ধিক্ষণেই
রাবণবধের অনুকূলে বরদান করেছিলেন।
দশমীতে দেবীর বিসর্জন। এটাকে বলা হয়
দেবীপ্রতিমার নিরজ্জন। এই বিসর্জন হলো হৃদয়ে দেবীকে ধারণ অর্থাৎ নিজের
হৃদয়ে এনে সংস্থাপিত করাই হলো বিসর্জন।
সন্ধ্যায় প্রতিমা নিরঞ্জনের পর
সকলের শ্রীদুর্গাশরণ, শান্তিবারি গ্রহণ, পারস্পরিক প্রণাম-শ্রদ্ধা-শুভেচ্ছা
বিনিময় ও মিষ্টিমুখের মাধ্যমে হয় মহাপূজার পরিসমাপ্তি।
[ ‘উদ্বোধন’
আশি^ন ১৪২৮ (৯ম সংখ্যা) প্রকাশিত স্বামী জ্ঞানব্রতানন্দ মহারাজের
‘দুর্গাপূজা: কিছু তত্ত্ব ও তথ্য’ প্রবন্ধ থেকে সংক্ষিপ্ত করে লেখা হয়েছে।
মহারাজনী ও উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমতি নেয়া হয়নি বলে ক্ষমা
প্রার্থী]
মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়নি
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ
প্রভাব পড়ছে আমাদের দেশের ওপর। প্রতি বছর কোনো না কোনো দুর্যোগে
ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের
উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ুগত কারণে আঘাত হানছে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। এতে
বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির
সংকটসহ নানা সমস্যা।
মানুষ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিকূল পরিবেশে
ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে এলেও একটি সময় তারা
অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনে তৈরি
হচ্ছে নতুন সংকট। প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আঘাত হানা দুর্যোগে যে
পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সে অনুযায়ী বরাদ্দ আসছে না জলবায়ু মোকাবিলায়।
অন্যদিকে জলবায়ু অর্থায়ন প্রশমন ও অভিযোজন খাতে সমানভাবে বণ্টন না হওয়ায়
দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নানামুখী
পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও কোনো সমাধান মিলছে না।
জলবায়ু তহবিলের অর্থে যেসব
প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনে কোনো
পরিবর্তন আনছে না। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, জলবায়ু তহবিলের অর্থ দিয়ে
সড়কবাতি স্থাপন, পার্ক তৈরি, পুকুরের ঘাট বাঁধানোসহ নানা ধরনের কাজ করা
হয়েছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপন্ন মানুষের সহায়তায় বা তাদের ভাগ্য
পরিবর্তনে কোনো কাজে আসছে না। এ জন্য জলবায়ু তহবিলের অর্থ পরিকল্পিতভাবে
জলবায়ু ভুক্তভোগীদের জন্য ব্যয় করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে পুনরায়
স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারে সেসব দিকে খেয়াল রেখে প্রকল্প হাতে নিতে
হবে।
পৃথিবীর ধনী এবং বড় বড় রাষ্ট্রগুলো নিজস্ব শিল্প ও অর্থনীতি
শক্তিশালী করতে অধিক পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বা
বিলাসিতাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য যে কার্বন বা ফুয়েল ব্যবহার করে তার সবচেয়ে
বেশি প্রভাব পড়ে যেসব দেশের ওপর তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্ব
উষ্ণায়নের জন্য চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া সবচেয়ে বেশি দায়ী। একটি
পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীর সমগ্র নির্গমনের এক-চতুর্থাংশই আসছে চীন থেকে।
প্রতি
বছর চীন মোট ১১ হাজার ৫৩৫ মেগা টন কার্বন নির্গমন করে। কিন্তু দেখা গেছে,
বছরের পর বছর জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো কনভেনশনের সদস্য দেশগুলোর
বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী দেশগুলো নানাভাবে
নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থাৎ অতিরিক্ত মাত্রায়
কার্বন নির্গমনের ফলে পৃথিবীর যেসব রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের
ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। আর কখনো দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। আবার এসব
ধনী রাষ্ট্র অনেক সময় ক্ষতিপূরণের নামে উচ্চ সুদে ঋণ দিচ্ছে। যে ঋণ দরিদ্র
দেশগুলোর জন্য একটি বড় বোঝা তৈরি করছে। এতে অনেক দেশের অর্থনীতি
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড.
সালেহউদ্দিন আহমেদের তথ্য মতে, জলবায়ু ও পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের
প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। সেখানে ১-২ বিলিয়ন ডলার আনতেই বেশ বেগ পেতে
হয়। সুতরাং সহজেই বোঝা যাচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়
যে অর্থ আসে তা খুবই সামান্য। আবার এই সামান্য অর্থ থেকে যদি অন্য প্রকল্প
হাতে নেওয়া হয় তা হলে নিশ্চয় তা ভুক্তভোগীদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে
দাঁড়াবে। বিগত দিনে যে কাজ বারবার হয়ে আসছে। যার জন্য ভুক্তভোগী মানুষের
পুনর্বাসন বা জীবনমানের উন্নয়ন হয়নি। তাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে
দাঁড়িয়েছে।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জলবায়ু তহবিলের টাকায় অধিকাংশ
প্রকল্প দেওয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার পৌরসভাগুলোকে। পৌর এলাকার ড্রেনেজ
ব্যবস্থা, রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনে নানা পরিকল্পনা, পাবলিক টয়লেট নির্মাণসহ
সড়ক সংস্কারের কাজে এই টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। দেশের অনেক জায়গায় এই
তহবিলের টাকা দিয়ে পার্ক নির্মাণের খবরও পত্রপত্রিকার পাতায় উঠে এসেছে। অথচ
জলবায়ু অভিযোজন নামে বাস্তবায়ন করা এসব প্রকল্পে যারা জলবায়ু ভুক্তভোগী
তারা কোনো সুফল পাচ্ছে না। আমরা দেখেছি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সরাসরি
ক্ষতিগ্রস্ত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূল বা উত্তরের চরাঞ্চলে
সমস্যা-সংকটের শেষ নেই।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির
তীব্র সংকট ভুগছে। বছরের পর বছর চলে গেলেও তাদের সুপেয় পানির জন্য যেসব
পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই
বেড়িবাঁধ, যেখানে সরকারের দুটি মেগা প্রকল্প চলমান থাকলেও বাস্তবায়নে রয়েছে
নানা প্রতিবন্ধকতা। কাজও চলছে ধীরগতিতে। এ ছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে
সলুইসগেট অকেজো হয়ে পড়ায় উপকূলীয় জনপদে বছরের অর্ধেক সময়জুড়ে তৈরি হচ্ছে
জলাবদ্ধতা। বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়া জনপদের অনেক পরিবার বাস্তুভিটা
হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে।
তাদের পুনর্বাসনেও সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ
নিতে দেখা যায়নি। এদিকে জলবায়ু ভুক্তভোগী মানুষের দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা
নিরসন না করে জলবায়ু তহবিলের টাকা চলে যাচ্ছে অন্যান্য প্রকল্পে। যেহেতু
জলবায়ু তহবিলটি গঠন করা হয়েছিল অভিযোজনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে, সেহেতু সরকারের
উচিত হবে সিংহভাগ বরাদ্দ এই খাতে দেওয়া। বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সুপেয় পানি
নিশ্চিত, লবণসহিষ্ণু ফসলের বীজ উৎপাদন, ভাসমান সবজি চাষের মতো প্রকল্প হাতে
নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করা। কারণ জলবায়ু তহবিলের
অর্থ যদি যথোপযুক্তভাবে ব্যয় করা না হয় তা হলে উপকূলের মানুষের জীবন-জীবিকা
মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।
আর এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের দেশের
অর্থনীতির ওপর এসেও পড়বে। আমরা আশা রাখি, সরকার জলবায়ু ভুক্তভোগীদের কথা
মাথায় রেখে আগামীতে প্রকল্প হাতে নেবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর বরাদ্দকৃত
টাকা প্রশমন ও অভিযোজন খাতে সমানভাবে বণ্টন করার বিষয়ে আরও সচেতন হবে।
যেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
পাশাপাশি পরিকল্পনা গ্রহণের সময় জলবায়ু তহবিলের টাকা যাতে জলবায়ু সংশ্লিষ্ট
প্রকল্পে ঠিকমতো বরাদ্দ দেওয়া হয় সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।