রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১৩ আশ্বিন ১৪৩২
ইসরায়েল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধে দোষী
মার্টিন শ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৮ এএম আপডেট: ২৩.০৯.২০২৫ ১:১০ এএম |


 ইসরায়েল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধে দোষী জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এ গণহত্যা আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। গাজায় ইসরায়েলের সহিংসতা ছিল চরম আকারের। গাজায় ইসরায়েলের প্রথম আক্রমণটি আধুনিক যুগে এসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ছিল। অনেকেই বিশ্বাস করেন যুদ্ধের নৃশংসতার কারণে বেসামরিক ক্ষতিও অনেক বেশি হয়। 
২০২৩ সালের শেষের দিকে বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ওঈঔ) গাজায় গণহত্যার বিষয়টি শনাক্ত করার পরও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই এটি স্বীকার করতে চায়নি। ইহুদি-গণহত্যা বিষয়ক আমেরিকান ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ওমর বার্তোভ বলেন, এ ধারণাটি ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক সিদ্ধান্ত ছিল এবং যতক্ষণ সম্ভব আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি’। কিন্তু এখন যেহেতু গাজা গণহত্যা সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এখনো যারা ‘অসম্মত’ রয়েছে তাদের সম্পর্কে আমরা কী বলব?
গণহত্যা একটি আইনি শব্দ। যদিও এটিকে গণহত্যা কনভেনশনে বেশ সহজভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আইসিজে রায়গুলো এর ব্যাখ্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। কিছু পর্যবেক্ষকের এখনো এর আইনি প্রয়োগ সম্পর্কে প্রযুক্তিগত আপত্তি রয়েছে।
যারা গাজা গণহত্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন তাদের বেশির ভাগই মূলত কারিগরি বিষয় নিয়ে চিন্তিত নন। যারা আগে বলতেন: ‘ইসরায়েল যা করছে তা নিয়ে আমি চিন্তিত কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে, এটি গণহত্যা’, তারা এখন একমত যে, এটি গণহত্যা। অন্তত তারা গণহত্যার এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক না করে ইতিহাসবিদদের ওপর নির্ভর করতে পারেন। 
এখন যেসব রাজনীতিবিদ এবং ভাষ্যকার গাজার গণহত্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে চলেছেন তাদের বেশির ভাগেরই ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে অবাক হওয়ার কথা নয়। ‘গণহত্যার মতবিরোধ’ আসলেই প্রযুক্তিগত কিনা- নাকি এটি বর্ণিত নৃশংসতাকে অস্বীকার করার সমান, তা পরীক্ষা করা বেশ সহজ।
যদি একজন সত্যনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক গত দুই বছরে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের পরিমাপ করে থাকেন, তাহলে তাদের সহজেই একমত হওয়া উচিত যে, এটি মানবতাবিরোধী বড় অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধে দোষী।
গণহত্যা অস্বীকারকারী ব্যক্তি যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে অস্বীকার করতে পারে। কিন্তু গণহত্যার পদ্ধতি হিসেবে গাজাবাসীকে অনাহারে মারা, বেসামরিক জনগণের ওপর ইচ্ছাকৃত আক্রমণ এবং হত্যা, নিপীড়ন ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ড- আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ওঈঈ) অস্বীকার করতে পারে না। তাহলে আইসিসির ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। 
গাজার ‘গণহত্যা’ অস্বীকার করা এখন ইসরায়েলের নৃশংসতার সম্পূর্ণ ভয়াবহতা অস্বীকার করার মতো। তাই গাজায় গণহত্যার অভিযোগ সম্পর্কে আমাদের অস্বীকার করার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। তাহলে ইসরায়েলের অপরাধগুলো একত্রিত হয়ে আরও বাড়বে। সবাইকে তার সামগ্রিক নীতি দেখতে বাধ্য করবে। এ কারণেই ইহুদি আইনজীবী রাফায়েল লেমকিন প্রথমে যুক্তি দিয়েছিলেন, আমাদের গণহত্যার মতো অপরাধের প্রয়োজন ছিল।
নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার সময় আইসিসি বলেছিল, তালিকাভুক্ত বিচ্ছিন্ন অপরাধগুলো ছিল ‘বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত আক্রমণের’ অংশ।
ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের দিকে এভাবে তাকালে আমরা গাজায় নৃশংসতার চিত্র দেখতে পাই। জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে যে, গাজায় ফিলিস্তিনি সমাজকে ধ্বংস করতে অনেক বড় অপরাধ করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের ইচ্ছাকৃত নীতির অংশ।
ইসরায়েলের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি সর্বজনীন বাধ্যবাধকতা আসে। গণহত্যা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী ১৫৩টি রাষ্ট্রের ওপর নৈতিক বাধ্যবাধকতা আসে- ইসরায়েলের অপরাধকে ‘প্রতিরোধ এবং শাস্তি’ দেওয়ার। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের অভিযানের বিরোধিতাকারী এ রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য খুব কমই জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে।
যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিজেতে তার মামলার জন্য কৃতিত্বের দাবিদার। ২০২৪ সালে আইসিজের বিচারকরা গাজায় মানবিক সাহায্য অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের ওপর তিনটি আদেশ জারি করেছিলেন। আইসিজের আদালতের এ আদেশের পরও ইসরায়েল তা অনুসরণ করেনি।
বেশির ভাগ পশ্চিমা সরকার গণহত্যার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে। যদিও তারা দেরিতে ইসরায়েলের সমালোচনা করে। মতবিরোধ করা কোনো ভালো দিক হতে পারে না। যদি তারা গাজায় ইসরায়েলের সহিংসতা বন্ধে গুরুতর কোনো কিছু করতে না পারে তাহলে এমন বিরোধিতা করে কী লাভ? 
এ রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখে। ইসরায়েলকে নীরবে তারা সমর্থন দেয়। এভাবে মৌন সম্মতির কারণে সেসব রাষ্ট্রের নেতাদের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যায় জড়িত থাকা এবং এমনকি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। 
যুক্তরাজ্য বিশেষ করে পশ্চিমাদের ‘অসম্মতির’ নৈতিক শূন্যতা প্রকাশ করে। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্যের লেবার সরকার বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলো ‘এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি’ যে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যার মতো জঘন্য কাজ করছে। 
এ ধরনের বিভ্রান্তি এখন সবার সম্মুখে। যদিও কেউ কেউ গাজা গণহত্যাকে অস্বীকার করছে। যারা অস্বীকার করছে তারা ইসরায়েলের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেবে না, তবে এটি সরাসরি অস্বীকার করারও সাহস পাবে না। বরং, তারা স্থায়ীভাবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো এড়াতে চায়। তারা মনে করে এটি আন্তর্জাতিক আদালতের বিষয়। এমনকি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো গাজা গণহত্যার বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলাকে তারা উপহাস মনে করে। বাস্তবে মন্ত্রীরা আইনি জটিলতাগুলো খুব ভালোভাবেই বোঝেন। ২০২৪ সালে আইনমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি যিনি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন পরে তার মন্তব্যের জন্য তিনি বিব্রত হয়েছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল রিচার্ড হামার, যিনি নিজেকে আন্তর্জাতিক আইনের সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করেন, তিনি দাবি করেন সরকারের নীতি হিসেবে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে আইনের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু আইসিজে গাজায় গণহত্যার বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করার ২০ মাস পরও গণহত্যা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। 
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ১১ বছর আগে আইসিজেতে আরেকটি গণহত্যার মামলা করেছিলেন। তিনি গাজায় গণহত্যার মামলাটি খুব ভালো করেই বোঝেন। সেই কারণেই গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও তিনি কখনো তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
গাজার শহরগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। গাজায় বেঁচে থাকা মানুষদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গণহত্যা সমর্থন এবং বিরোধিতাকারীদের কাউকে আর দেখা যায় না। দুই বছর পরে এসেও যারা ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে ‘অসম্মত’, তারা ইসরায়েলের নৃশংসতায় জড়িত থাকার চেয়েও কোনো অংশে কম নয়। 
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য 
মিডেল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব ঘটতে পারে: তারেক রহমান
ইসলাম কোনো কোটা রাজনীতি নয় : সালাহ উদ্দিন আহমেদ
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সুমন সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম
বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী ভুটান
কুমিল্লায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ৭৯৭ পূজা মণ্ডপ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন আজ
কুমিল্লা মহানগরে ‘আপ বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা
সাব্বির হত্যা মামলা কুমিল্লায় দুই আ’লীগ নেতা গ্রেপ্তার
মুরাদনগরে কুকুরের কামড়ে আহত ৫০
৫ দফা দাবিতে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২