মাসুদ পারভেজ।।
এবারের
এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ২৩ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউই পাস করেননি। ফেল
করেছেন সবাই। শতভাগ অকৃতকার্য ২৩ পরীক্ষার্থী হচ্ছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট
উপজেলার ইসলামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায়
কুমিল্লার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে শতভাগ ফেলের তালিকায়
একমাত্র বিদ্যালয় এ ইসলামপুর উচ্চবিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষার
ফলাফল ঘোষণার পর থেকে প্রান্তিক জনপথের এ বিদ্যালয়টিকে নিয়ে বোর্ডজুড়ে
আলোচনা চলছে। একইসঙ্গে সমালোচনাও করছেন নাঙ্গলকোর্ট উপজেলার বাসিন্দারা।
শতভাগ ফেল করায় পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও সমালোচনা করছেন বিদ্যালয়ের
শিক্ষক, ম্যানেজমেন্ট ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েছে।
এদিকে একই উপজেলার আরও
এক বিদ্যালয়ে গোত্রশাল উচ্চবিদ্যালয় থেকে অংশ নেয়া পরীক্ষর্থীদের মধ্যে
এবারের এসএসসি পাস করেছে একজন মাত্র শিক্ষার্থী। ১৪ জন পরীক্ষর্থী পরীক্ষায়
অংশ নিলেও পাস করেন একজন পরীক্ষার্থী। আর বাকী ১৩ পরীক্ষার্থীই ফেল
করেছেন। একই উপজেলার এ দুই উচ্চবিদ্যালয়ের ফলাফল জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড়
উঠেছে।
ফলাফলে এ ভয়াবহ বিপর্যয় কেন জানতে চাইলে গোত্রশাল উচ্চবিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষিকা শিমিন সুলতানা বলেন, তার বিদ্যালয়ে এবারের এসএসসি
পরীক্ষায় একজন মাত্র পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ১৪জন
পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। ফেল করার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন ১৩জনই গণিতে
খারাপ করেছেন। একই সঙ্গে এবারের ব্যাচে পরীক্ষার্থীরা এমনতিই মানের দিক
থেকেও খারাপ ছিল।
এছাড়াও গোত্রশাল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ
করে আরও বলেন, বিদ্যালয়ে এ শিক্ষার্থীরা অনুপুস্থিতি থাকতেন বেশিরভাগ সময়।
প্রায় সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে আনতে হতো স্কুলে। তিনিও ভয়ে চাপ প্রয়োগ
করতে পারতেন না। পরিস্থিতি বুঝে চুপ থাকতেন। এসএসসিতে অংশ নেয়ার আগে টেস্ট
পরীক্ষায় বাছাইয়ে তারা উর্ত্তীন্ন হয়নি। তারপরও অভিভাবকদের চাপে তাদেরকে
অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়েছে।
ইসলামপুর উচ্চবিদ্যালয়ে শতভাগ ফেল কেন?
জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে কথা বলতে
মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে সম্ভব হয়নি।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের
প্রধান শিক্ষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, গ্রামীণ এবং প্রান্তিক পর্যায়ের
বিদ্যালয়গুলো পরীক্ষার্থী বাছাইয়ে এখনও মান ধরে রাখতে পারছেন না। একই সঙ্গে
মানের বিষয়ে সঠিকভাবে গুরুত্বও দিচ্ছেন না। এখানে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকদেরও
দূর্বলতা রয়েছে। সামনে দুর্বলতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ঘুরে দাঁড়াতে
হবে।
বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম বলেন, এবার পাস ও
জিপিএ-৫ কমেছে কুমিল্লা বোর্ডে। গতবার এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ২৩
শতাংশ। জিপিএ-৫ ছিল ১২ হাজার ১০০ জন। তার দাবি, গণিতে খারাপ করার কারণেই
ফলাফলের এ বিপর্যয়। আরও শতভাগ বা তার কাচাকাছি মানে ফেল করেছে তাদের বিষয়ে
খোঁজ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য,কুমিল্লার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক
শিক্ষাবোর্ডে এবারের এসএসসির পাসের হার ৬৩.৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯
হাজার ৯০২ জন পরীক্ষার্থী। গেল বছরের সঙ্গে ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,
এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাস ও জিপিএ-৫ দুটিই কমেছে কুমিল্লা বোর্ডে।
গেল বছরের তুলনায় এবার এ বোর্ডের পাশের হার কমেছে ১৫.৬৩ শতাংশ। একই সঙ্গে
কমেছে ২১হাজার ৯৮টি জিপিএ-৫। তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন গণিতে বিপর্যয়ের
কারণে ফলাফলে ছন্দপতন ঘটেছে। এদিকে বোর্ডে ফলাফলের বিপর্যয়ের বছরেও পাসের
হার ও জিপিএ-৫ এগিয়ে মেয়েরা। শতভাগ পাস করেছে ২২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
একজনও পাস করেনি অর্থাৎ পাসের হার শূন্য এমন প্রতিষ্ঠান একটি। ওই স্কুল
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ইসলামপুর উচ্চবিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের ৩২ জনের সবাই
ফেল করেছেন।