বাজার
অস্থির হয়ে উঠছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই
চলেছে। নিম্ন আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য হারিয়ে
দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণ বা পণ্যমূল্য যৌক্তিক রাখার
জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর তেমন কোনো ভূমিকাই চোখে পড়ে না।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঈদের পর থেকেই চালসহ বেশ কিছু
নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। গত এক মাসে সব ধরনের চাল, আলু, দেশি পেঁয়াজ,
টমেটো, বেগুন, করলা ও সোনালি মুরগি-এই সাত পণ্যের দাম খুচরা পর্যায়ে
সর্বোচ্চ ১৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পণ্যের দাম নতুন করে বাড়লেও আয় না
বাড়ায় ক্রেতারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। বোরো মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে।
দেশে
বর্তমানে পর্যাপ্ত চালের মজুদ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে চালের
মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অথচ চালের দাম বাড়ছেই। বিশেষ
করে মিনিকেট হিসেবে পরিচিত সরু চালের দাম খুচরায় কেজিতে একলাফে আট থেকে ১০
টাকা বেড়েছে।
মোটা চালের দামও কেজিতে নতুন করে তিন থেকে পাঁচ টাকা
বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। এখন কৃষকের হাতে বিক্রি করার মতো ধানের মজুদ নেই
বললেই চলে। সবই কিনে নিয়েছেন চাতালের মালিক, আড়তদার ও বড় বড় করপোরেট
ব্যবসায়ীরা। তাই ধান-চালের মজুদ মূলত তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। এই অবস্থায়
বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাঁদের কারসাজি যুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করছেন
বাজার বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান কালের কণ্ঠকে
বলেন, ‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
সঠিকভাবে বাজার তদারক করতে হবে। মজুদ যারা করেছে, তাদের শনাক্ত করে
ব্যবস্থা নিতে হবে। খোলাবাজারে সরকারকে চাল বিক্রির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে
হবে। চালের বাজারটাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তাহলেই চালের বাজার
স্বাভাবিক হবে।’
আমাদের বাজারে শীতকালেই সবজির সরবরাহ বেশি থাকে। তখন
দামও কম থাকে। গ্রীষ্ম বা বর্ষায় নানা কারণে সবজির দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
কিন্তু হঠাৎ মুরগির দাম কিংবা আলু-পেঁয়াজের দাম লাফ দিয়ে বেড়ে যাওয়া খুব
একটা স্বাভাবিক নয়। বিশেষজ্ঞরা এ জন্য বাজার মনিটরিং কিংবা দাম যৌক্তিক
রাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতিকে দায়ী করেন। পাশাপাশি
চাঁদাবাজিসহ পণ্য পরিবহন সমস্যাগ্রস্ত হচ্ছে কি না তাও নজরদারিতে রাখতে
হবে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের তুলনায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি
কিছুটা কমলেও বাজারে চাল ও সবজির চড়া দামে স্বল্প আয়ের মানুষ আবার নতুন করে
চাপে পড়ছে। যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যেতে
পারে। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ
সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়ে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিসিবির
মাধ্যমে বাজারে হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং পণ্যমূল্য
সহনীয় রাখতে নিয়মিত ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।