মাসুদ পারভেজ।।
টানা
বর্ষণে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে কুমিল্লার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কখনও হালকা
আবার কখনও ভারি ধরণের অবিরাম বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুর,
ছিন্নমূল, রিকশাচালক, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষসহ সড়কের পাশ ধরে বসা
ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। এদিকে টানা এ বর্ষণে জেলা শহরের কোথাও হাঁটু পানি,
কোথাও ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা।
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে,
গেল ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৬.৫ মিলিমিটার। আগামী
আরও দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টিপাতের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা
রয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লায় এ দুই-তিনদিন ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে অতি ভারি বর্ষণ
সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন জেলা আবহাওয়া অফিস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা
বৃষ্টির কারণে কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগতিতে পানি জমেছে। ফলে
অনেক সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে
মানুষকে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে
রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণির লোকজন। এছাড়াও ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল কলেজের
পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষরা। টানা বৃষ্টির এ বিরুপ আবহাওয়ার সুয়োগ
নিয়েছেন কুমিল্লা নগরীর সিএনজি চালিত অটোরিকশা, রিকশা ও ব্যাটারি চালিত
অটোরিকশা চালকরা। এ গণপরিবহনের চালকরা নির্দিষ্ট ভাড়ার বাহিরে গিয়ে
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রী ও নগরবাসী।
এদিকে, টানা
বৃষ্টিতে হাটু পানি জমেছে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়া থেকে রাণীর বাজার
সড়কের নজরুল এভিনিউ এলাকায়, কুমিল্লা নগরীর চেম্বার অফ কমার্স থেকে অশোকতলা
হয়ে ছায়াবিতান পর্যন্ত। এছাড়া কুমিল্লার টমছম ব্রিজ থেকে ইপিজেড সড়কসহ
নগরীর আরও বেশকিছু সড়কে। এসব সড়কে নিয়মিত পানি জমে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত ও
খানাখন্দ। সৃষ্ট গর্তে পানি জমে বিপদজনক হয়ে পড়েছে ওই সড়কগুলোর বিভিন্ন
অংশ। নানান সময় যাত্রীদের নিয়ে রিকশা ও অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার ভিডিও চিত্র
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। চালাচলে অনুপযোগী এসব সড়কে যাতায়াত
করতে গিয়ে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন শতশত মানুষ।
কুমিল্লা ইপিজেডের
কারখানা শ্রমিক, লিপি, নুরুন নাহার ও মেসবাহ উদ্দিন জানান, টমছম থেকে
ইপিজেড পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে চালাচল করতে গিয়ে শরীরের হাড়গোড় ব্যথা হয়ে
যাচ্ছে। এক প্রকার বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সড়কটি দিয়ে। বিভিন্ন সময়
অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে এ সড়কে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের পথ
তৈরি করে সড়ক সংস্কারের দাবি তাদের।
এদিকে তারেক রহমান নামে এক
অটোরিকশা চালক জানান, বর্ষা আসলেই এ শহরে ড্রেন ও সড়কের কাজ করা শুরু হয়।
তার প্রমাণ হচ্ছে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকা। করভবন থেকে কান্দিরপাড় পর্যন্ত
জায়গাটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে একপ্রকার নাভিশ্বাস উঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি
হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন পানি নিষ্কাশনের পথ তৈরি করতে গিয়ে উল্টো
দুর্ভোগের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন।
অন্যদিকে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের কুমিল্লার ১০৪ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত
ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন দ্রুতগতির যানবাহন।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কে সৃষ্ট গর্ত ও খানাখন্দের কারণে ছোট ছোট
দুর্ঘটনায় যানজটের তৈরি হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে
পুলিশ কুমিল্লা রিজিউনের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, বর্ষায় টানা
বৃষ্টিতে মহাসড়কজুড়ে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে
দ্রুতগতির যানবাহনগুলো ছোট ছোট দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মহাসড়কের যানজটের সৃষ্টি
হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গর্ত ও খানাখন্দগুলো ভরাট না করলে পরিস্থিতি আরও
খারাপের দিকে যাবে।
বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসের বিষয়ে কুমিল্লা আবহাওয়া
অধিদপ্তরের অফিসার ইনচার্জ ছৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৫৬.৫
মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সামনে এর পরিমান আরও বাড়বে। আগামী
দুই-তিনদিন চলমান বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে ঝড়োহাওয়ার সঙ্গে
অতিভারি বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে কুমিল্লায়।