গ্যাসসংকটের কারণে মানুষের স্বাভাবিক
জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীর অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে দিনের
বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকছে না। মধ্যরাতে গ্যাস কয়েক ঘণ্টার জন্য এলেও তা
প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সময়মতো গ্যাস না থাকায় কর্মজীবী মানুষের সমস্যা
বেশি হচ্ছে। অনেক এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় গ্যাসসংকটে ঠিকমতো রান্নাবান্না
চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মাঝারি ও ছোট হোটেল-রেস্তোরাঁর
ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিল্পকারখানার অবস্থা আরও ভয়াবহ।
গ্যাসসংকটের কারণে শিল্প খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
টেক্সটাইল, সিরামিকস ও
খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে চাহিদামতো গ্যাসের
সরবরাহ নেই। এতে কিছু কারখানা আংশিক উৎপাদনে নেমে এসেছে। আবার কিছু
কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সময়মতো পণ্য সরবরাহ
করতে না পারায় এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের অর্ডার বাতিল হয়েছে। শিল্প
খাতের সংশ্লিষ্টতা দাবি করছেন, গ্যাসসংকটের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে
পুরো শিল্প খাতে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে দৈনিক প্রায়
৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সরবরাহ করা যাচ্ছে প্রায়
২৬০ থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট। মোট চাহিদার ৬২ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে
জ্বালানি বিভাগ। মোট গ্যাসের ১২ শতাংশ ব্যবহার হয় আবাসিক খাতে। বাকি অংশ
শিল্প, সার, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে মোট গ্যাসের
প্রায় ১০ শতাংশ চুরি ও অপচয় হচ্ছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড
ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বলছে, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দিতে না পারায় এ সংকট
তৈরি হয়েছে। শিল্প, বিদ্যুৎ এবং আবাসিক- সবখানেই চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু
সরবরাহের সক্ষমতা তেমন বাড়েনি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড
ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সরকার একদিকে গ্যাসের দাম
বাড়িয়েছে, অন্যদিকে শিল্প খাতে গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। নিরবচ্ছিন্ন
সরবরাহের কথা বলে দুই বছর আগে শিল্পে গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৯ শতাংশ
পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। গত বছরও দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পরও
শিল্পে গ্যাসসংকট কাটেনি। এতে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গ্যাসসংকটের
কারণে ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও হুমকির মুখে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের
উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সময়মতো পণ্য বিক্রি করে আয় করতে পারছেন না
ব্যবসায়ীরা। মাস শেষে কারখানার খরচ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ অন্যান্য
খরচ মেটাতে সমস্যা হচ্ছে। গ্যাসসংকটের কারণে বিনিয়োগকারীদের কাছে খারাপ
বার্তা যাচ্ছে। এতে করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
অব্যবস্থাপনা, পুরোনো পাইপলাইন ও গ্যাস আমদানিতে দেরি- এসব কারণে গ্যাসসংকট
প্রকট হচ্ছে। গ্রীষ্মকালেও যখন রান্নার সময় এমন সংকট, তখন শীতকালে
পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
গ্যাসসংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। তাই
জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় নাগরিকদের
দুর্ভোগ ও ক্ষোভ আরও বাড়বে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে
সংকট দূর করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আশা করছি, সরকার দ্রুত সমস্যার
সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।