বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫
২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ঔপনিবেশিক আমলে কুমিল্লায় শিকারচিত্র
কুমিল্লায় কোথায় হরিণ, শূকর, চিতাবাঘ ও হাতি শিকার করতেন ইউরোপীয় শিকারিরা?
আবুল কাশেম হৃদয়, গবেষক
প্রকাশ: বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫, ২:১৬ এএম |

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল ইউরোপীয় শিকারিদের জন্য হয়ে উঠেছিল এক বহুমাত্রিক শিকারভূমি। ইউরোপীয়রা প্রকৃতিকে কেবল উপভোগ বা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিষয় হিসেবে দেখেনি, বরং এটিকে একধরনের সাহসিকতা ও কর্তৃত্ব প্রদর্শনের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করত।


ঔপনিবেশিক আমলে কুমিল্লায় শিকারচিত্র
চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরা অঞ্চলের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্বে নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল থমাস এইচ. লিউইন তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ A Fly on the Wheel-এ উল্লেখ করেছেন, কুমিল্লার দাউদকান্দি অঞ্চলে একসময় হরিণ শিকার ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি এর তুলনা করেন ইংল্যান্ডের ক্রিক বা লিলবোর্ন অঞ্চলের শিয়াল শিকারের সঙ্গে। মেঘনা ও গোমতীর তীরবর্তী নদীবিধৌত বালুময় ভূমিতে হরিণ ও বুনো শুকর আশ্রয় নিত। এই অঞ্চল হরিণ শিকারের জন্য ছিল অভিজাত ইউরোপীয়দের কাছে ‘ফ্যাশনেবল হান্টিং’-এর আদর্শ স্থান, যেখানে বিনোদন, দুঃসাহসিকতা ও সামাজিক অবস্থান প্রকাশ একসঙ্গে মিশে থাকত।

১৮৮৫ সালের ২৩ মে The Sunday Review পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধেও লেফটেন্যান্ট কর্নেল থমাস এইচ. লিউইন তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে এ অঞ্চলে শিকারের জনপ্রিয়তার উল্লেখ করে বলা হয়েছে ত্রিপুরা ছিল ব্রিটিশদের কাছে এক ভিন্নতর অভিজ্ঞতার নাম। 

লিউইন তাঁর লেখায় ত্রিপুরা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অজানা গিরিখাত, ঘন অরণ্য ও বিচিত্র জনজাতির কথা বলেন। তিনি জানান, ১৮৬০ সালের আগ পর্যন্ত এই অঞ্চল ইউরোপীয়দের কাছে প্রায় সম্পূর্ণ অজানা ছিল। শিকার কিংবা প্রশাসনিক প্রয়োজনেও এখানে মাঝে মাঝে ঢাকার হাতি বিভাগ থেকে কর্মকর্তারা আসতেন, কিন্তু সপ্তাহব্যাপী অভিযানের পর অনেক সময় তারা খালি হাতে বা আহত হয়ে ফিরতেন। এই অঞ্চলের মাহুত ও স্থানীয় আদিবাসীরা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে, চতুরতার সঙ্গে বুনো হাতি ফাঁদে ফেলতে পারতেন।

১৮৯৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর The Englishman Overland পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাউদকান্দিকে শূকর শিকারের জন্য খ্যাত “শিকার কেন্দ্র” হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সেখানকার শূকর পশ্চিম বাংলার তুলনায় লম্বা, দ্রুতগামী ও আক্রমণাত্মক ছিল, এবং তাদের দাঁত ছিল বড় ও শক্তিশালী। এই শিকারের ঝুঁকি ও উত্তেজনা একে কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এক ধরনের ‘মার্শাল স্পোর্ট’ বা যুদ্ধধর্মী খেলা হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, যেখানে শিকারি নিজের শারীরিক সক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ পেত।

১৯১২ সালের ২৩ মে The Englishman Overland পত্রিকায় প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে জানা যায়, ত্রিপুরা অঞ্চলের ময়নামতিতে রাজা ত্রিপুরার ফাঁকা বাংলোর আশপাশে বনে একদল ব্রিটিশ পুলিশ ও রেলওয়ে কর্মচারীর শিকার অভিযান ঘটনার আকার নেয়। পিকনিকের অংশ হিসেবে তারা বনে প্রবেশ করেন এবং একপর্যায়ে সন্দেহ করা হয়, জঙ্গলের ভেতরে একটি চিতাবাঘ লুকিয়ে আছে। যদিও পরে দেখা যায়, সেটি ছিল একটি বৃদ্ধ হায়েনা।
সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীতকাল শেষ হওয়ার আগে, গরম শুরুর প্রাক্কালে খেলোয়াড়দের একটি দল শিকারে বের হয়। সেই স্থানে চিতাবাঘের উপস্থিতি অস্বাভাবিক ছিল না। তবে দলের কেবল একজন সদস্য ছোট গুলিভর্তি বন্দুক আনায় উদ্বেগ দেখা দেয়। একজন বলেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দুক বাড়িতে রেখে এসেছেন, যাতে নির্দ্বিধায় ঢালু জায়গায় যাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত কুকুরগুলো পশুটিকে খোলা জায়গায় বের করে আনলে দেখা যায়, সেটি চিতাবাঘ নয় বরং একটি হায়েনা—সম্ভবত হায়েনাদের বংশের সবচেয়ে বৃদ্ধটি! এই উত্তেজনাপূর্ণ ধাওয়ার মধ্য দিয়ে শিকারের ঘটনাটি শেষ হয়।


তথ্য সূত্র: 
১. দি সানডে রিভিউ, ২৩ মে ১৮৮৫ 
২. ইংলিশম্যান্স ওভারল্যান্ড মেইল, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮৯৬
৩. ইংলিশম্যান্স ওভারল্যান্ড মেইল, ২৩ মে ১৯১২ 












সর্বশেষ সংবাদ
চামড়া নিয়ে এবারও বিপাকে কুমিল্লার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা
২৪ ঘন্টার ব্যাবধানে৯ জনের মরদেহ উদ্ধারকুমিল্লায়
চাচা শ্বশুরের ছোড়া গরমপানিতে ঝলসে গেলো গৃহবধূর শরীর
বাক প্রতিবন্ধী দুই মেয়েকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যার চেষ্টা ; দুই মেয়ের মৃত্যু
নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থার সমাপ্তি ঘটবে- ডাঃ তাহের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
লালমাইয়ে বিএনপি নেতা মোবাশ্বরের গাড়ি ভাংচুর, ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
চাচা শ্বশুরের ছোড়া গরমপানিতে ঝলসে গেলো গৃহবধূর শরীর
২৪ ঘন্টার ব্যাবধানে৯ জনের মরদেহ উদ্ধারকুমিল্লায়
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ যাত্রা-চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয়
চামড়া নিয়ে এবারও বিপাকে কুমিল্লার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২