সমর্থকদের চোখে ছিল এক স্বপ্নের প্রহর; জয়, গর্ব, গর্জন। যেন এক জাতির হৃদস্পন্দন জড়ো হয়েছিল জাতীয় স্টেডিয়ামের কোলাহলে। তবে সেই স্বপ্নভরা সন্ধ্যায় নামল বিষাদের ঘন মেঘ। এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে কুয়াশার মতো ঢেকে গেল আশার আলো। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ গোলের পরাজয়ে স্তব্ধ হলো উন্মাদনার ঢেউ।

প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে প্রতিপক্ষের ছোবলে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে আরেকটি গোল যেন ছুরি চালায় বিশ্বাসের বুকে। হামজার অ্যাসিস্টে রাকিবের একমাত্র গোল এক চিলতে আলোর রেখা হয়ে এসেছিল বটে, কিন্তু তা ছিল সূর্যাস্তের আগুন রং—দর্শনীয়, তবে ক্ষণিক।

আরো পড়ুন:
মেসির ছায়ায় নয়, এখন আর্জেন্টিনার ফুটবল দল পুরোপুরি স্বনির্ভর

মেসির ছায়ায় নয়, এখন আর্জেন্টিনার ফুটবল দল পুরোপুরি স্বনির্ভর
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ফুটবল ম্যাচে বিশেষ নিরাপত্তা

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ফুটবল ম্যাচে বিশেষ নিরাপত্তা

শেষ বাঁশির সুরে স্টেডিয়ামের গর্জন রূপ নেয় নীরব এক দীর্ঘশ্বাসে। যা ছিল উল্লাসের আশ্রম, কিন্তু পরিণত হয় অতৃপ্ত আর্তনাদের উপাখ্যানে। হেরে যাওয়ার এ গল্প শুধু পয়েন্ট টেবিলের নয়, এ যেন এক জাতির হৃদয়ের ক্ষতচিহ্ন। যা সময়ের পাতায় লেখা থাকবে মৌন বেদনার ভাষায়।

এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের পরের ম্যাচে অক্টোবরে হংকংয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

৯০ মিনিট শেষে: বাংলাদেশ ১ - ২ সিঙ্গাপুর
৯০ মিনিট শেষে স্কোরলাইন বাংলাদেশ ১ ও সিঙ্গাপুর ২। যোগ করা সময় দেওয়া হয়েছে ৭ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে আরও একটি গোল পেলে ম্যাচে সমতা ফেরাতে পারবে বাংলাদেশ। যদিও ৬৭ মিনিটে গোল পাওয়ার পর সিঙ্গাপুরের ওপর চড়াও হয়ে খেলে বাংলাদেশ। একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে সফরকারীদের। টানা পাঁচটি কর্নার আদায় করে নেয়। কিন্তু গোল পায়নি লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।

একটি গোল শোধ দিলো বাংলাদেশ:
ম্যাচের ৬৭ মিনিটে একটি গোল শোধ দেয় বাংলাদেশ। এ সময় পাল্টা আক্রমণে হামজা চৌধুরী আলতো টোকায় বল বাড়িয়ে দেন সামনে থাকা রাকিব হোসেনকে। তিনি বল পেয়ে দুইজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে ফাঁকি দিয়ে সামনে এগিয়ে যান। তখন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক ইজওয়ান মাহবুদ সামনে এগিয়ে আসেন। তাঁর পায়ের ফাঁক গলিয়ে শট নেন রাকিব। সেটি আস্তে আস্তে গিয়ে গোললাইন অতিক্রম করে।

২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ:
ম্যাচের ৫৯ মিনিটে আরও একটি গোল হজম করল বাংলাদেশ। এ সময় ডি বক্সের মধ্যে ডানদিকে বল পেয়ে সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় গোলটি করেন ইকসান ফান্দি।

একাদশে এক পরিবর্তন এনে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ:
একাদশে এক পরিবর্তন এনে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। শুরুর একাদশে থাকা কাজেম শাহর পরিবর্তে শাহরিয়ার ইমন মাঠে নেমেছেন। এখন দেখার বিষয়, যে পরিকল্পনায় কাবরেরা এই পরিবর্তন এনেছেন, সেটা বাস্তবায়ন হয় কিনা এই ৪৫ মিনিটে।

৪৫ মিনিট শেষে: বাংলাদেশ ০ - ১ সিঙ্গাপুর:
১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। যদিও এই ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ অনেকগুলো আক্রমণ চালিয়েছে, একটি ফ্রি কিক ও একটি কর্নার পেয়েছে। কিন্তু সেগুলো থেকে গোল আদায় করতে পারেনি। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর ৪৫ মিনিটে দারুণ একটি সমন্বিত আক্রমণ চালিয়ে গোল আদায় করে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে।

প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে গোল খেল বাংলাদেশ:
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে গোল হজম করলো বাংলাদেশ। ম্যাচের ৪৫ মিনিটে আক্রমণে ওঠে সিঙ্গাপুর। বল ডি বক্সের মধ্য থেকে ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার পর সিঙ্গাপুরের জর্ডান এমাভিউয়ি বল বাড়িয়ে দেন ফারিস রামেলিকে। তিনি ক্রসে বক্সের মধ্যে বল দেন সং ইউয়িইয়াংকে। তিনি ভলিতে বল জালে পাঠান। প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও বলটি রুখতে পারেননি হামজা চৌধুরী।

প্রথমার্ধের ৩০ মিনিট শেষে জমে উঠেছে লড়াই, গোলের দেখা মেলেনি এখনো:
মাঠে চলছে টান টান উত্তেজনা, কিন্তু স্কোরবোর্ডে এখনো শূন্যই ঝুলছে। ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটে গোলের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছিল দুই দলই। সিঙ্গাপুরের অধিনায়ক বাঁ দিক থেকে ডি-বক্সে ঢুকে নেওয়া শটে জোরালো আঘাত করেছিলেন বাংলাদেশের গোলবারে, কিন্তু তরুণ গোলরক্ষক মিতুল মারমা চমৎকারভাবে বল ফিরিয়ে দিয়ে দলকে রক্ষা করেন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষে একটি নজরকাড়া সুযোগ এসেছিল শমিত সোমের নিখুঁত পাসে। ডান প্রান্ত থেকে বাড়ানো বলটি গোলমুখে পাঠানোর মতো অবস্থানে ছিলেন রাকিব, কিন্তু সময়মতো পা ছোঁয়াতে না পারায় গোলের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয় দলকে।

মাঠ ছেড়ে আবার ফিরলেন তারিক কাজী:
ম্যাচের ২৮ মিনিটে হাতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন তারিক কাজী। তার বদলি খেলোয়াড় ওয়ার্ম-আপও শুরু করেন। কিন্তু মাঠের বাইরে গিয়ে শুশ্রুষা নিয়ে আবার মাঠে ফেরেন তিনি।

ফাহামেদুলের হলুদ কার্ড:
ম্যাচের ২৩ মিনিটে সিঙ্গাপুরের খেলোয়াড়ের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে ধাক্কা দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন বাংলাদেশের ইতালি প্রবাসী ফুটবলার ফাহামেদুল ইসলাম।

২০ মিনিট শেষে ম্যাচ গোলশূন্য:
প্রথম ১০ মিনিটের পর পরের ১০ মিনিটেও কোনো গোলের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। অবশ্য গোলের দেখা পায়নি সিঙ্গাপুরও। যদিও তারা বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালিয়েছে। বাংলাদেশও একবার ভালো আক্রমণ করে গোল আদায় করে নিতে পারেনি।

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের একাদশ, শমিতের অভিষেক:
আগ্রহ, প্রতীক্ষা, উত্তেজনা আর প্রত্যাশার মেলবন্ধনে বাতাস যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা স্টেডিয়ামের। সময়ের কাঁটা ধীরে ধীরে এগোচ্ছে, আর মুহূর্তের হিসাব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে এসেছে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। সন্ধ্যা সাতটায় মাঠে নামবে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের মহারণে।

ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে বাংলাদেশের একাদশ। যেখানে আলোচিত সদস্য হিসেবে প্রথমবারের মতো জায়গা পেয়েছেন কানাডায় বসবাসরত মিডফিল্ডার শমিত সোম। আজ তার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে হচ্ছে প্রথম পদচারণা, যা যেন নতুন স্বপ্নের সূচনা। তার সঙ্গে মাঠ মাতাবেন মিতুল মারমা, সাদ উদ্দিন, শাকিল আহাদ তপু, তপু বর্মন, তারিক কাজী, হামজা চৌধুরী, মোহাম্মদ হৃদয়, সৈয়দ শাহ কাজেম, ফাহামেদুল ইসলাম ও রাকিব।

৪ জুন একই মাঠে ভুটানের বিপক্ষে খেলা একাদশে তিনটি পরিবর্তন এসেছে। সেই ম্যাচে ডিফেন্ডার তাজ ও দুই মিডফিল্ডার জামাল ও সোহেল রানা নেই আজকের ম্যাচের শুরুর একাদশে। তাদের পরিবর্তে জায়গা পেয়েছেন ডিফেন্ডার শাকিল আহাদ তপু ও দুই মিডফিল্ডার শমিত সোম ও হৃদয়।

শমিতের অভিষেক:
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জন্য শমিত সোমের আগমন শুধু একটি নামের যোগ নয়; এটি নতুন এক আশার উজ্জ্বল আলো। ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার আজকের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশের জার্সিতে।

ঢাকায় এসে দলের সঙ্গে মাত্র কয়েকদিন অনুশীলন করলেও, তার খেলার ছন্দ ও গতি প্রশংসার যোগ্য হয়েছে। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেছেন, “শমিত আমাদের সঙ্গে মিশে গিয়েছে, তার উপস্থিতি দলের খেলার মানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।”

নিজে শমিত বলেন, “বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামা আমার জীবনের গর্ব। আমি আত্মবিশ্বাসী, আমাদের খেলা সবাইকে গর্বিত করবে।”

পরিসংখ্যানের দিকে এক ঝলক:
বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর ফুটবল ইতিহাসে খুব বেশিবার একে অপরের মুখোমুখি হয়নি। মোট ৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দল দুটি। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের জয় ২টি ও বাংলাদেশের জয় ১টি এবং ড্র ১টি।

সর্বশেষ মুখোমুখি: ২০১৫ সালের ৩০ মে, যেখানে সিঙ্গাপুর বাংলাদেশকে ২-১ গোলে পরাজিত করে।

বাংলাদেশের প্রথম জয়: ১৯৭৩ সালের ১৫ আগস্ট কুয়ালালামপুরে মারদেকা কাপে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছিল।

চার ম্যাচের বিবরণ:
১৫ আগস্ট ১৯৭৩: বাংলাদেশ ১ - ০ সিঙ্গাপুর (নওশেরুজ্জামান),

২ আগস্ট ১৯৭৩: বাংলাদেশ ১ - ১ সিঙ্গাপুর (সালাউদ্দিন) - মারদেকা কাপ,

২৩ আগস্ট ২০০৭: বাংলাদেশ ১ - ২ সিঙ্গাপুর (জুমরাতুল ইসলাম মিঠু) - মারদেকা কাপ,

৩০ মে ২০১৫: বাংলাদেশ ১ - ২ সিঙ্গাপুর (নাসিরউদ্দিন চৌধুরী) - প্রীতি ম্যাচ।

অর্থাৎ, অফিসিয়াল রেকর্ড অনুযায়ী, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচেই ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছে। জয়হীন বাংলাদেশের সামনে এবার ঘরের মাঠে পুরোনো হিসাব মেটানোর দারুণ সুযোগ।

বর্তমান পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা:
ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে সিঙ্গাপুর (১৬১) বাংলাদেশের (১৮৩) চেয়ে এগিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক ফর্মে বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো করছে। চলতি বাছাইপর্বে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে এক পয়েন্ট অর্জন করেছে। যা দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, সিঙ্গাপুর তাদের প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘরের মাঠে দর্শকদের সামনে খেলা বাংলাদেশের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে দলটি একটি সুসংহত ইউনিট হিসেবে খেলছে এবং আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণভাগও বেশ মজবুত হয়েছে। এশিয়ান কাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিতে হলে এই ম্যাচটি উভয় দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ ফুটবল দল কি পারবে বহু বছর পর ফুটবল উন্মাদনায় মাতোয়ারা হওয়া দেশবাসীকে জয় উপহার দিতে, নাকি সিঙ্গাপুর তাদের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখবে? উত্তর মিলবে আজ সন্ধ্যা ৭টায়।