মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২
অরক্ষিত কুমিল্লার ইটাল্লা গ্রামের মন্তের মুড়া
অসম্পূর্ণ খননে নষ্ট হচ্ছে প্রত্নসম্পদ
তানভীর দিপু ও শাহীন আলম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ১:৩৩ এএম |


অসম্পূর্ণ খননে নষ্ট হচ্ছে প্রত্নসম্পদ ২০২১-২২ অর্থবছরে কুমিল্লার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মন্তের মুড়ায় খনন কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। খননে বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। যেমন, পোড়ামাটির অলংকৃত ইট, তেলের প্রদীপ, ছোট পাত্র, পিরিচ এবং নলাকার পাত্রের অংশবিশেষসহ নানান অমূল্য প্রত্নবস্তু। প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, পাঁচথুবীর ঢিবিগুলো ছিল বৌদ্ধস্তুপের কিছু প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষ। এটিকে মন্তের মুড়া বা মহন্ত রাজার বাড়ি হিসেবে চেনেন স্থানীয়রা। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে এটির খনন কাজ শুরু হলেও এর কয়েক মাস পরেই খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত প্রত্নক্ষেত্রটির খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। এই প্রত্নক্ষেত্রটি খননে দুই দফায় ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। খনন কাজে এত টাকা ব্যয় হওয়ার পরও বর্তমানে মন্তের মুড়া ধংসস্তুপের মত অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। 
এদিকে মন্তের মুড়া খনন কাজ অসম্পূর্ণ  রেখেই নতুন করে খনন শুরু করা হয়েছে সদর দক্ষিণ এলাকার ধর্মপুরের বালাগাজীর মুড়ায়। সেটিরও অসম্পূর্ণ খনন রেখে শেষ হয়ে যাবে জুন মাসে। এটিরও অসম্পূর্ণ খনন করে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। সেখানে ব্যয় করা অর্থও মন্তের মুড়ার মত কোন কাজে আসবে না। 
জেলা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্য মতে, মন্তের মুড়ার ভেতরে প্রবেশ পথেই রয়েছে ৪ পিলারবিশিষ্ট হলরুম। এরপর মূল মন্দিরে প্রবেশ পথ। দেখা মিলবে ৩টি ভিন্ন ভিন্ন সময়কালের মন্দির। রথশৈলির আদলে নির্মিত মন্দিরগুলোর সীমানা প্রাচীর। দেওয়ালে জ্যামিতিক নকশার অলঙ্করণ। খননে উঠে আসে ব্রোনজের বৌদ্ধ মূর্তি। নরম পাথরের তৈরি দুর্গা মূর্তি ছাড়াও পোড়ামাটির অলংকৃত ইট, তেলের প্রদীপ, ছোট পাত্র, পিরিচ এবং নলাকার পাত্রের অংশবিশেষসহ নানা প্রত্নবস্তু। মন্তের মুড়া ছাড়াও কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবীতে রয়েছে বৈষ্ণব মুড়া, বসন্ত মুড়া, চন্ডী মুড়া ও শিল মুড়া নামে আরও ৪টি পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ। সেগুলো খনন ও সংরক্ষণে চলমান রয়েছে গবেষণা।   
মন্তেরমুড়া ছাড়াও ১৯৭৫ সালে কুমিল্লা-কালিরবাজার রাস্তা নির্মাণ করার সময় একটি বিহারের দূর্গের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। সেখানে অসংখ্য প্রত্মর্কীতির ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে এ প্রত্নর্কীতির রক্ষার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ প্রত্নর্কীতির অসংখ্য ইট ও প্রাচীন ইমারতের মালমসলা জঙ্গলে আবৃত হয়ে লালমাই- ময়নামতি পাহাড়ে স্তুূপীকৃত হয়ে যায়। 
জেলা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ১৯৫৫ সালে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি জরিপে কুমিল্লায় মোট ৫৪টি প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের জন্য নিদিষ্ট করা হয়। এর মধ্যে ২০ টি প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ খনন করে সংরক্ষণ করা হয়। বাকি ৩৪ টির বেশিরভাগই এখনও অরক্ষিত ও অসম্পূর্ণ খনন অবস্থায় পড়ে আছে। 
কুমিল্লার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, কুমিল্লা প্রত্নসমৃদ্ধ এলাকা। অধিদপ্তর যত্নের সাথে নিয়মিত খনন কাজ করলে কুমিল্লার প্রাচীন ইতিহাস তুলে ধরতে পারতেন। বিচ্ছিন্নভাবে খনন কাজ না করলে সেটি সম্ভব নয়। একটি প্রত্নক্ষেত্র ধরে সেটির সম্পূর্ণ খনন ও আলামত সংগ্রহ করা উচিত। এরপর সংরক্ষণ এবং প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পূর্ণভাবে জনসাধারণের প্রদর্শনের উপযুক্ত করা গেলে ওই প্রত্নক্ষেত্রটি ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। কারণ আমরা দেখেছি মন্তের মুড়া প্রথম বছর খননের পর সেটিতে গরু ছাগল চরে এবং বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।   
কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, প্রত্নতত্ত্বক্ষেত্র খনন শুরু করলে দুই তিন বছরের প্রকল্প নিয়েই করা উচিত। এই সময়ের মধ্যে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ, প্রতিবেদন প্রকাশ ও ক্ষেত্রটি যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে। প্রত্নতত্ত্বক্ষেত্র খনন কাজ শুরুর আগে মাস্টার প্ল্যান করে কাজ না করলে তথ্যগুলো কিন্তু হারিয়ে যেতে পারে। এজন্য একটি শক্তিশালী টিম দরকার। 
কুমিল্লায় ময়নামতি যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো.শাহীন আলম জানান, মন্তেরমুড়ায় দুই দফায় খনন কাজ হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি বের হয়ে আসেনি। এই জায়গাটিতে কোন সুরক্ষা প্রাচীর না করতে পারায় খননে বের হয়ে আসা অমূল্য স্থাপনা অনিরাপত্তায় রয়েছে। এছাড়াও ওই এলাকায় আরও কয়েকটি প্রত্নক্ষেত্র রয়েছে যা আমাদের জরিপে উঠে এসেছে। যেগুলোতে খনন কাজ পরিচালনা করতে না পারায় সেগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। 
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যলয়ের পরিচালক ড.নাহিদা সুলতানা বলেন, আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। মন্তেরমুড়া খনন কাজ সম্পর্কে জেনেছি। আগামী অর্থবছরে এই প্রত্নক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ খনন করে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা সম্ভবনা রয়েছে। খণ্ডকালীন খননে প্রত্নক্ষেত্রের কোন ক্ষতি হয় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের শুধু শীতকালেই খনন কাজ করতে হয়। একটি প্রকল্পের পর আমরা মাঠ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজ হাতে নেই। সে প্রক্রিয়া ওই প্রত্নক্ষেত্রটি ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে চাইলে একাধিক প্রত্নক্ষেত্র একই সাথে খনন কাজ শুরু না করে একটি ক্ষেত্র একটি প্রকল্প ধরে শেষ খনন করা দরকার। এতে প্রকল্পের খনন কাজ সম্পূর্ণ হয়।  
 



















সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে নিখোঁজের ৫ দিন পর সেপটিক ট্যাংকে মিলল নারীর বস্তাবন্দি লাশ
বরুড়ায় “আমরা কুমিল্লার তরুণ প্রজন্ম” সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন
কুমিল্লার মুরাদনগরে ভুক্তভোগীর বাড়িতে কায়কোবাদ
ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াই ছিলো নিপীড়নকারীদের উদ্দেশ্য?
পর্নোগ্রাফি মামলার আসামিদের রিমান্ডে চায় পুলিশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে নিখোঁজের ৫ দিন পর সেপটিক ট্যাংকে মিলল নারীর বস্তাবন্দি লাশ
চালের ড্রাম ছিলো ৩ হাজার ইয়াবা ও ৩০ লাখ টাকা; জব্দ করল সেনাবাহিনী
ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াই ছিলো নিপীড়নকারীদের উদ্দেশ্য?
লালমাইয়ে দুই মাদকসেবীকে সাজা
অবশেষে বন্ধ হলো কুমিল্লা কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২