বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
নজরুল ও নক্ষত্রলোক
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ১:০৩ এএম |

 নজরুল ও নক্ষত্রলোক
এই পৃথিবীতে নির্গুণ মানুষের চাইতে গুণী মানুষের সংখ্যা হয়তো বেশি। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে অধিকাংশ মানুষেরই কোন-না-কোনো বিষয়ে কিছুনা কিছু গুণপনা আছে। কারো গানের গলা চমৎকার, কারো ছবি আঁকায় হাত, কেউ নৃত্যকুশলী, কেউ এমন কি কথাবার্তায়, আচারে ব্যবহারে যে মানুষকে খুবই সাধারণ বলে মনে হয়, একটু খোঁজ করলে দেখা যাবে তিনিও নানা হাতের কাজে রীতিমতো ওস্তাদ। এখানে বলে নেওয়া ভালো যে, গুণের মধ্যে আবার স্তরভেদ আছে। গুণ এবং গুণপনা সম-গোত্রের জিনিস হলেও ঠিক সম-স্তুরের নয়। কোন মানুষকে গুণীজনরা গুণবান বললে যতখানি বোঝায়, শুধু গুণপনা আছে বললে ঠিক ততখানি বোঝাবে না। কথাটা হালকা হয়ে যাবে। তফাৎটা উৎকর্ষের। গুনপনার দৌড় খুব বেশী নয়-স্বল্পকাল এবং স্বল্প পরিসরের মধ্যে আবদ্ধ। গুণ জিনিসটা একটু উঁচুদরের। সব সময়ে স্থান কালের সীমায় আবদ্ধ থাকে না দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। একটু উচ্চাকাঙ্খীও বটে। গুণপনা কৃতিত্ব লাভেই তুষ্ট, পনের দাবী একটু বেশি। শুধু কৃতিত্বে তার মন ওঠেনা, সে চায় কীর্তি। যথার্থ গুণীজন বলতে তাঁকেই বোঝায় যিনি বিশেষ কোন ক্ষেত্রে নিজের গুণসিদ্ধির দ্বারা সমাজে এমন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন, যে প্রতিষ্ঠা একমাত্র গুণবলেই লভ্য ধনবলে নয়, পদবলে নয়, ভুজবলে তো নয়ই। সে প্রতিষ্ঠার আয়ুস্কাল গুণী ব্যক্তির জীবৎকালকে ছাড়িয়ে যায়।
বিদ্বান পন্ডিত, কবি সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, সুরশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, শিক্ষাব্রতঃী, সমাজসেবী, রাজনীতিবিদ এঁরা সকলেই গুণীজন। উৎকর্মের একটা স্তর উত্তীর্ণ হলে এঁদের সকলেরই কীতি এবং প্রতিষ্ঠা স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে। এঁরা শুধু কৃতী ব্যক্তি নন, এঁরা কীর্তিমান। কারণ এদের কিছু কিছু কীর্তি নিঃসন্দেহে বিন্যাসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এই যে গুনবানের কথা বলছি এরা বিশেষ কোন ট্যালেন্ট বা গুণের চর্চা করেছেন, তাতে পারদর্শিতা লাভ করেছেন এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রে গুণগ্রাহীদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। গুণ জিনিসটা স্নোবলের মতো কলেবরে বাড়তে থাকে। চর্চা যত বাড়বে কদর তত বাড়বে, গুনগ্রাহীঃ সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ফলে গুনীর অবর্তমানেও গুণকীর্তন থামবে। ফলে গুনীর অবর্তমানে গুণকীর্তন থামবে না। গুণবানরা এভাবেই প্রতিষ্ঠাবান হন।
কিন্তু এই যে গুণের কথা বলা হল এও গুণের সর্বোচ্চ স্তর নয়। গণ যখন নিজেকে বহুগুণে অতিক্রম করে যায় তখন শুধু গুণ বললে তার সব টুকু বলা হয় না। গুণের যেখানে চরম স্ফতরুণ সেখানে গুণ কথাটা বড় বেশি নিরীহ নি®প্রাণ শোনায়। সেখানে সে একটা প্রচন্ড শক্তি রূপে প্রকাশ পায়। সোজা কথায় গুণ সেখানে আগুন হয়ে দেখা দেবে। সমস্ত মানুষটাই একটি প্রজ্বলিত শিখার মতো জ্বলতে থাকে। সে শিখার আভা চতুর্দিক আলোকিত করে। এই আভার নাম প্রতিভা। প্রতিভা কথাটাকে আমরা একটু ঢিলেঢালাভাবে ব্যবহার করি। একটু উঁচু দরের ট্যালেন্ট হলেই তাকে প্রতিভা বলে চালিয়ে দিই। ট্যালেন্ট বা গুণ যখন স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে উৎকর্ষে, বৈশিষ্ট্যে, বৈচিত্র্যে, অজস্রতায়, অনন্যতায় সকলের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে তখন তা প্রতিভার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। প্রতিভা জিনিসটা একটা আকস্মিক ফেনোমেনন এর ন্যায় কোন ধরা বাঁধা বিধি নিয়মের বশীভূত নয়। এ জিনিস চর্চার দ্বারা পাওয়া যায় না। অর্জিত বিদ্যা নয়, প্রকৃতি-দত্ত শক্তি। শেকস্পীয়ার যে জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন, আমরা স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে বিদ্যাচর্চা করে থাকি সেভাবে তা কখনই লভ্য নয়। সে জ্ঞান একমাত্র প্রতিভাবানের কাছেই ধরা দেবে আর কারো কাছে নয়, কারণ সে জ্ঞানের ভান্ডার যেখানে সেখানে থেকে জ্ঞান আহরণের ক্ষমতা আমাদের নেই। সাহিত্য সংগীত শিল্পকলায় যেখানেই অত্যুচ্চ ক্ষমতার প্রকাশ পেয়েছে, দেখা গিয়েছে সেখান পূর্বাজিত বিধিবদ্ধ শিক্ষার কোন প্রমাণ নেই। সেটা নিজ প্রতিভা থেকে উদ্ভুত। 
আগেই বলেছি প্রতিভা প্রকৃতি-দত্ত শক্তি। প্রকৃতি মায়ের দানের হাত দরাজ কিন্তু একমাত্র প্রতিভার বেলায় দেখা যায় তিনি অতি মাত্রায় কৃপন দার্শনি শোপেন হাওয়ার কথাটি বড় সুন্দর করে বলেছেন। বলেছেন প্রকৃতির অভিজাত্য বোধ বড় কড়া। মনুষ্য সমাজে আভিজাত্য সূচিত হয় বংশগৌরবে, ধনগৌরবে, পদগৌরবে-এহেন অভিজাতের সংখ্যা শত সহস্র কিন্তু প্রকৃতিদত্ত প্রতিভাগৌরবে অভিজাতের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। কোটিতে একজন মেলে না। বাস্তবিক পক্ষে অনন্যসাধারণ ক্ষমতার অধিকার না হলে কোন মানুষকে ঠিক প্রতিভাবান বলা চলে না। প্রতিভার মধ্যে গুনের প্রকাশ যতখানি শক্তির প্রকাশ তার চাইতে ঢের বেশি। মনুষটার মধ্যে একটা প্রচন্ড শক্তির ক্রিয়া চলতে থাকে এবং ঝড়ের বেগে তাকে ঠেলে নিয়ে চলে। এ শক্তিটা সব সময়ে ঠিক স্বাভাবিক ভাবে ক্রিয়া করে না। শক্তি জিনিসটা স্বভাবতই একটু পেররোয়া উড়নচন্ডী। শক্তির অধিকারী কতখানি একে আয়ত্তের মধ্যে রাখতে পারবেন তারই উপর নির্ভর করবে এর চরিচার্থতা। আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে অপচয়ের আশংকা প্রতিভার কুটিলা গতিও যে কখন কোনদিকে মোড় নেবে তার ঠিকানা নেই, অধিকারীর পক্ষে বিপদজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এ শক্তির স্বভাবই এমন যে মানুষটাকে রীতিমতো পেয়ে বসে। আমরা কোন অস্বাভাবিক ভাবগ্রস্ত মানুষকে যেমন বলি ওকে কিছুতে পেয়েছে, এও তেমনি ভূতে পাওয়া মানুষতো আর কিছু নয়-তার কার্যকলাপ অভূতপূর্ব। ইংরেজিতে এরূপ মানুষকে বলে ধ সধহ ঢ়ড়ংংবংংবফ কথাটা যে খারাপ অর্থে গুণবাচক কোন অসাধারণ শক্তির প্রেরণায় কোন মানুষ যখন অসাধ্য সাধনে প্রবৃত্ত হন তখন খুব সঙ্গত ভাবেই তাঁকে ঐ আখ্যা দেওয়া হয়। তবে এ শক্তির মধ্যে বিপদের বীজ নিহিত আছে সে বিষয়ে সন্দেহমাত্র নেই, ইংরেজি ফধবসড়হরপ বা ফবসড়হরপ শব্দটিতে এর ইঙ্গিত আছে। কোন আসুরিক শক্তির প্রাবল্যে অত্যদ্ভূত কার্যকলাপ সম্পর্কে শব্দটির ব্যবহার। পশ্চিমী লিজেন্ডে ফাউষ্ট কাহিনী এই অসাধ্যসাধিকা শক্তির প্রকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত। ফাউষ্ট-এর বিদ্যা বুদ্ধির অভাব ছিল না কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি চেয়েছেন অসাধ্য সাধনের শক্তি। ফাউষ্ট মানুষটাকে কেউ খারাপ বলে না; কিন্তু আপন উদ্দাম শক্তিকে আয়ত্তে রাখতে পারেননি বলেই নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে এনেছিলেন। আধুনিক জীবনেও প্রতিভা যে ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ঘটাতে পারে টমাস মান তাঁর ডক্টর ফাউষ্টস নামক উপন্যাসে তা দেখিয়েছেন। পাশ্চত্ত্য পন্ডিতেরা অনেকেই প্রতিভাকে অবিমিশ্রন শুভঙ্করী শক্তি বলে মনে করেন না। তাঁদের মতে প্রতিভা কল্যাণ করে যতখানি তার চাইতে অকল্যাণ করে বেশি অর্থাৎ প্রতিভাবানের পক্ষে প্রতিভা অনেক সময়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।
এ কথা নিশ্চিত যে প্রতিভা ফড়ঁনষব বফমবফ ংড়িৎফ. এর দুদিকেই ধার কাজেই একে ব্যবহার করতে হয় অতি সন্তর্পনে, সাবধানে। নতুবা হিতে বিপরীত হবার আশংকা। প্রতিভার দীপ্তি যেমন প্রতিভাবানের সকল কর্মকে সমুজ্জ্বল করে তেমনি আবার প্রতিভার উত্তাপ প্রতিভাবানকে দগ্ধ করে ছাড়ে। নিরন্তর একটা অস্থিরতার মধ্যে থাকেন, শান্তিতে থাকতে জানেন না। স্বভাবতই ছিটগ্রস্ত মানুষ, ছিটের মাত্রা একটু চাড়িয়ে গেলেই মস্তিস্ক বিকৃতি দেখা দেয়। প্রতিভা জিনিসটা প্রকৃতপক্ষে একটা উন্মাদনার মত কাজ করে। শোপেন হাওয়ার যে বলেছেন প্রতিভাবানে এবং উন্মাদে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে সেটা কিছু মিথ্যা নয়। বহু যুগ আগে প্লেটোও বলেছিলেন যে, প্রতিভাবান মানুষ কখনই কথায় কাজে নরম্যাল নয়। দৃষ্টান্তের অভাব নেই। আইজ্যাক নিউটনের সাময়িক ভাবে মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটেছিল; নীৎশের পরিণতি আরো মর্মান্তিক। শোপেন হাওয়ার বলেছেন, কেউ আবার আত্মঘাতীও হন-ভ্যান গগ্ তার দৃষ্টান্ত। কেউ বা দুরারোগ্য ব্যাধির কবলে পড়েন-পল গগ্যার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। অকাল মৃত্যুর দৃষ্টান্তও কম নয়-শেলী, কীটস, বায়রণ, দার্শনিক স্পিনোজা, আমাদের আবুল হাসান ও রুদ্র মোঃ শহীদুল্লাহ প্রত্যেকেই প্রতিভাবান এবং প্রত্যেকেই অকালে গত। এ সূত্রে মাইকেল মুধুসুদনের নাম করা যেতে পারে। তিনিও অনন্যসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর ও অকাল মৃত্যুই বলতে হবে। তাছাড়া শেষ জীবনে দুঃসহ দৈন্য ভোগের মূলেও রয়েছে তাঁর প্রতিভা বিড়ম্বিত জীবন। মধুসূদন যে বলেছিলেন-আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিনু হায়! এ ছলনা প্রকৃতপক্ষে প্রতিভার ছলনা। আকাশ-চুম্বী আশা আকাক্সক্ষা প্রতিভাবানের স্বভাবগত। প্রতিভার রুদ্র মূর্তির কথাই কেবল বলছি। কিন্তু রুদ্রেরও দক্ষিণ মুখ আছে এবং প্রতিভাবান মানুষরা সেই দক্ষিণ মুখের দাক্ষিণ্য থেকে কখনই বঞ্চিত হন না। দুঃখ পান, দুর্ভোগ ভোগেন কিন্তু যখন যে অবস্থাতেই থাকুন প্রতিভাবানের অসামান্যতা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। মুখে স্বীকার  বা না  সকলেই মনে মনে জানেন যে ইনি আর সকলের মতো নন, ইনি ভিন্ন, ইনি অনন্য। তবে একথাও স্বীকার করতে হবে যে প্রতিভার স্বভাবে একটা অতিশয়তা আছে। আপন শক্তির পরে অগাধ বিশ্বাস এবং বোধ করি সে কারণেই কাজে একটু প্রগলভতা প্রকাশ পেলেও সেটা খুব একটা দৃষ্টিকুট কিংবা পীড়াদায়ক মনে হয় না বরং বললে অন্যায় হবে না যে, প্রগলতভা এবং স্পর্ধিত স্বভাব মানুষটার আকর্ষণ খানিকটা বাড়িয়েই দেয়। আসল কথা, প্রতিভাবানকে ভালো মন্দ সব কিছুতেই মানিয়ে যায়। কিন্তু বিপদের আশংকাটা এখানেই। প্রতিভার একটা অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ আছে-চকিতে মনকে চমৎকৃত করে, লোকে নির্বিচারে তারস্বরে সব কিছুর তারিফ করতে থাকে। মাথা ঠিক রাখা দায় হয়ে ওঠে। ঊর্ধ্বশ্বাসে ঢলে, স্পর্ধার সঙ্গে চলে, দুঃসাধ্যের প্রয়াস করে, অসাধ্যের স্বপ্ন দেখে। অতি দ্রুত চলতে গেলে অচিরে দম ফুরিয়ে যায়, ঝড়ের উদ্দামতা এক সময়ে নিস্তেজ হয়ে আসে। প্রতিভাও অনেক সময় নিজেই নিজেকে নিঃশেষ করে। ফাউষ্ট-এর শক্তির খেলা যে একটা সময়-সীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল সেও একটা ংুহনড়ষরপ ব্যাপার, শক্তির ও সে সীমা আছে সে কথাটা স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
শক্তিকে ইস্পাতের ন্যায় তাপ শৈত্যের সহনশীলতায় টেম্পার করে নিতে হয়, তবেই সে শক্তি উন্নত ধরনের কাজে ব্যবহারের উপযোগী হয়। এ না হলে শক্তির যথাযোগ্য ব্যবহার সম্ভব নয়, অপচয়ের আশংকাই থাকে বেশি। শক্তি জিনিসটা এক রোখা, আপন মর্জিমত চলে। ওকে সামলে রাখাই দায়। অস্থির অশান্ত ভাবটাকে দমন করে একটু যদি শিষ্ট শান্ত সৌম্য ভাব দেওয়া যায় তাহলেই ওর প্রসন্ন রূপটি ফুটে উঠবে। এই টেম্পার করে নেওয়ার কথা বলছিলাম সেটা আর কিছু নয় শক্তির সঙ্গে সাধনার যোগ্য সহজ নয়, কিন্তু যেখানেই যোগাযোগটি ঘটেছে সেখানেই স্থৈর্যে ধৈর্যে মাধুর্যে প্রতিভা যথার্থই শক্তিরূপনী হয়ে দেখা দিয়েছে অর্থাৎ সবার্থসাধিকা শক্তি রূপে প্রকাশ পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এর প্রকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত। শক্তির মধ্যে একটা বণ্য উচ্ছৃঙ্খল ভাব আছে; যত বেশি শক্তি তত বেশি প্রলোভন, সেজন্যে তাকে বশ মানিয়ে নিতে হয়, নইলে বিপত্তি ঘটে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অপরিসীম শক্তিকে আপন বশে রেখেছিলেন। অনন্য-মনা সাধনার বলেই সেটি সম্ভব হয়েছিল। শক্তি এবং সাধনার এমন শুভ-সংযোগ পৃথিবীতে কমই ঘটেছে। রূপ, গুণ, ধন, মান, বিদ্যা বুদ্ধি, খ্যাতি প্রতিপত্তি সমস্তই পথে পথে প্রলোভনের ফাঁদ পেতে রেখেছিল কিন্তু তাঁর আপন কক্ষপথ থেকে তাঁকে এতটুকু বিচ্যুত করতে পারেনি। জগৎ জোড়া খ্যাতি লাভ করেও মতি-ভ্রম ঘটেনি। শক্তি এবং খ্যাতি দুটিকেই তিনি সবিনয়ে গ্রহণ করেছেন। অপর এক দৃষ্টান্ত শেকস্পীয়ার। মানব জীবনের নিগূঢ়তম রহস্যকে তিনি মনশ্চক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন, মানুষের গভীরতম দুঃখকে হৃদয়ঙ্গম করেছেন, সর্বনাশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবনের সঙ্গে বোঝাপড়া করেছেন। একের পর এক ট্র্যাজেডি রচনা কালে শেকস্পীয়ার বিশেজ্ঞরা বলেছেন, ঐ সময়ে শেকস্পীয়ার যেন এক অত্যুচ গিরিশিখরের কিনারায় দাঁড়িয়ে জীবন-রহস্যের অতল গহ্বরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। এ যে কোন মুহূর্তে মন এবং মস্তিষ্কের ভারসাম্য হারিয়ে চরম বিপদ ঘটাতে পারত। একান্ত স্থিতধী ব্যক্তি ছিলেন বলেই ধীর মস্তিষ্কে একাজ করা সম্ভব হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের বেলায় যেমন ঘটেছে শেকস্পীয়ারকেও তেমনি সমব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেক নিন্দাবাদ এবং কুটবাক্য শুনতে হয়েছে কিন্তু তাতে শেকস্পীয়ারের কিছুমাত্র চিত্তবিকার ঘটেছিল বলে মনে হয় না। তিনি তাঁদের কোন কথার জবাব দিয়েছেন এমন কোন প্রমানও পাওয়া যায় না। বরং সমসাময়িকদের মুখে এবহঃষব ঝযধশবংঢ়বধৎব কথাটি অল্পাধিক প্রচলিত ছিল। শক্তির পূর্ণ বিকাশের জন্যে যে মানসিক স্থৈর্য এবং প্রশান্তির প্রয়োজন গ্যোয়টে এবং টলস্টয়ের মধ্যেও তা দেখা দিয়েছে। যৌবনের চাঞ্চল্য গ্যোয়টের মধ্যে কিছু কম ছিল না কিন্তু তার উদ্দামতাকে তিনি দমন করেছিলেন।
প্রতিভা যেমন লন্ডভন্ড করে ছাড়ে, মতি স্থির থাকলে তেমনি আবার প্রতিভাবানকে মহামন্ডিত করে সত্যি বলতে কি, প্রতিভার মহিমা রাজ মহিমাকেও ছাড়িয়ে যায়। দিগি¦জয়ী নেপোলিয়ান গ্যোয়টের দর্শন প্রার্থী ছিলেন। তারও আগে রাজশক্তি যখন ঢের বেশি পরাক্রমশালী তখন স্বয়ং ইংল্যান্ডেশ্বর ডক্টর জনগণকে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ করে এনে ছিলেন শুধু তাঁকে দেখবার জন্য। ঐ যুগেই ভল্টেয়ার ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের কাছে যে সম্মান লাভ করেছিলেন তা এ কালে, সে কালে কোন কালেই আর ঘটেনি। প্রোশিয়ার সম্রাট ফ্রেডরিক দ্য গ্রেট-এর প্রাসাদে বহুদিন তিনি সম্মানিত অতিথি রূপে বাস করেছেন রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন মূল্যবান উপঢৌকন পাঠাতেন, নিয়মিত পত্রালাপ করতে সুইডেনের রাজা গুস্তাফাস। ডেনমার্কের রাজা ক্রিস্চান রাজকার্য পরিচালনায় সবিনয়ে তাঁর উপদেশ নির্দেশ প্রার্থনা করতেন। বিংশ শতাব্দীতেও দেখা গেল পশ্চিম মহাদেশের দেশে দেশে শাসকবর্গ রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ করে রাজ সমারোহে অভ্যর্থনা করেছেন।
অবশ্য প্রতিভাবানরা সকলেই জগজ্বয়ী শক্তির অধিকারী হবেন এমন কোন নিয়ম নেই। প্রতিভার ছোঁয়াচটা লেগেছে, মানুষটা জ্বলেও উঠেছিল কিন্তু অল্পকাল জ্বলেই হঠাৎ নিভে গিয়েছে এমন দৃষ্টান্তও আছে। আরম্ভটা যেমন চমক লাগলো, শেষটা আবার তেমনি মিয়োনো যে কারণেই হোক শেষ রক্ষা হয়নি, তাহলেও মানুষটা যে অসাধারণ তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবেই। প্রতিভা জিনিসটাই বেহিসাবী, ওকে সামলে রাখতে না পারলে হিসাবে গরমিল হয়ে যায়, আকাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না সামান্যটুকু করতে গিয়ে অনেকটুকু নিয়ে টান ধরে, লাভ হয় যত খানি, ক্ষয় হয় তার চাইতে বেশি। ফলে সমস্ত শক্তিই অকালে নিঃশেষিত হয়। এই যে বেহিসাবি উড়নচন্ডী প্রতিভা-এর দৃষ্টান্ত সকল কালে, সকল দেশেই দেখা গিয়েছে দূরৈ যেতে হবে না আমাদের হাতের কাছের দৃষ্টান্ত কাজী নজরুল ইসলাম।
নজরুলের সাহিত্যিক জীবন বলতে গেলে মাত্র বিশ বছরের। বিশ বাইশ বছরে শুরু চল্লিশ বিয়াল্লিশ শেষ। একটি উস্কার মত অকস্মাৎ বাংলার আকাশে দেখা দিলেন। আকাশের বুক চিরে বিদ্যুৎ গতিতে দীপ্ত শিখায় সকলের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে অচিরে উষ্কাটি ভূমিসাৎ হল। নজরুলের কত জ্বালাময়ী কবিতা এক সময়ে আগ্নেয়গিরির লাভা স্রোতের ন্যায় ঝলকে ঝলকে প্রবাহিত হয়েছে, কিন্তু একদিন সেই যে স্রোত স্তব্ধ হল, আর তাতে এতটুকু আনন্দ ফিরে এলনা, নিজের আগুনেই নিঃশেষে দগ্ধ হয়ে চিরতরে নির্বাচিত হলেন।
নজরুলের জন্ম আমাদের ভূখন্ডে নয়। তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনের প্রায় গোটা সময়টা তিনি কাটিয়েছেন, আজ যা ভারতের পশ্চিম বঙ্গ সেখানে। অবশ্য নজরুল তাঁর বেশ কিছু কবিতা ও গান রচনা করেছেন আমাদের ভূখন্ডে বসে। যে কথা রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কেও প্রযোজ্য। নজরুল সজ্ঞান সচেতন অবস্থায় বাংলাদেশ দেখেন নি, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাননি। আমরা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছি, অত্যন্ত সঙ্গত ভাবে, রবীন্দ্রনাথের গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’-কে। তবু নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। তিনি মুসলমান এই বলে নয়। ওই দৃষ্টিকোণ প্রাধান্য পেলে একটি আধুনিক প্রগতিশীল জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের ভিতই নড়বড়ে হয়ে যাবে। নজরুলের কবিতায় উচ্চারিত যে মূল্যবোধগুলির কথা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি, শোষণবিরোধী, সাম্যবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, উদার মানবতাবাদী, এই সব মূল্যবোধের ধারক ও প্রবক্তা হিহাসেই আমরা নজরুলকে মুখ্যতঃ গ্রহণ করি, ইসলামের কবি হিসাবে নয়, এবং সেসূত্রেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি বলে বিবেচিত হতে পারেন।
বাংলার হিন্দু মুসলমানের দুই সংস্কৃতির একটা মিলিত রূপ জনজীবনের গভীরে চিরকালই বিরাজমান ছিল। উপর তলাকার জীবনে একটা ভিন্নতা অবশ্যই ছিল। সে ভিন্নতা যেমন জীবনাচরণের পদ্ধতিতে লক্ষণীয়, তেমনি লক্ষণীয় নিত্যদিনের ব্যবহৃত কতিপয় শব্দাবলীর মধ্যেও। কিন্তু এক্ষেত্রেও একজন উচ্চবিত্ত মুসলমান ও একজন উচ্চবিত্ত হিন্দুর মধ্যে যতখানি মিল ছিল, তার তুলনায় একজন উচ্চবিত্ত মুসলমান ও একজন নিম্নবিত্ত মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য ও দূরত্ব ছিল বহুগুণ বেশি। বাংলার গ্রাম জীবনে সহজ-সরল নিরক্ষর হিন্দু-মুসলমান খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে মনের ভিতর থেকে একটা মিলনের সেতু গড়ে উঠেছিল, বিকশিত হয়েছিল একটা ঐক্যবদ্ধ সংস্কৃতি, যেখানে কোন ধর্মের আনুষ্ঠানিক আচারের চাইতে মানবধর্মের প্রেম ভালোবাসার দিকটিই প্রাধান্য পায়। এর পিছনে ক্রিয়াশীল ছিল নানান প্রভাব। হিন্দুদের সহজিয়া সম্প্রদায়, শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্ম, বাউলদের জীবনধারা, বাংলার মুসলমান সুলতানদের উদার মানবিকতা ও বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা, গৌতমবুদ্ধের অনুসারীদের নীতিমালা প্রভৃতির কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। এর মধ্যে ঐক্যের দিকটিই ছিল মুখ্য। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে এই ঐক্যের প্রতিফলনই আমরা দেখি চন্ডীদাসে, লালন ফকিরে, গ্রাম-বাংলার অজস্র গানে, কারুশিল্পে, তৈজসপত্রের নকশায়, কাঁথার মোটিফে এবং হাজারো লোকজ কর্মকান্ডে। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের মধ্যে আমরা হিন্দু মুসলমান উভয়ের সংস্কৃতির এক অপূর্ব যুগলবন্দী লক্ষ করি। নজরুল-সাহিত্য আলোচনায় এ বিষয়টির প্রতি অনেকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত এর যথাযথ ব্যাপক, গভীর ও অনুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ হয়নি।
নজরুলের সর্বাধিক পরিচিত বিদ্রোহী কবিতার মধ্যেই আমরা দেখি কত চিত্রকল্প, কত অনুষঙ্গ, যা উঠে এসেছে হিন্দু ও মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্ম, পুরাণ, ইতিহাস ও সংস্কৃতির গভীরতা থেকে। কবির কণ্ঠে এই শুনি খোদার আরশের কথা, তারপরই রুদ্র ভগবানের কথা। নটরাজ, কৃষ্ণ, ব্যোমকেশ, দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র, পরশুরাম, ছিন্নমস্তা চন্ডী, বিদ্রোহী ভৃগু, বাসুকির ফনা-র উল্লেখ যেমন এই অতুলনীয় কবিতায় আছে, যার উৎস হিন্দুর পুরাণ ও ধর্ম, তেমনি আছে ইস্রাফিলের শিঙ্গা, জিব্রাঈলের আগুনের পাখা, বোররাক আর চেঙ্গিসের উল্লেখ, যা উঠে এসেছে মুসলমানরে ধর্মীয় ঐতিহ্য, ইতিহাস ও উপকথা থেকে। নজরুলের বিখ্যাত দীর্ঘ প্রেমের কবিতা পুজারিণীতে কবি বিরহের বেদনা বিধূর পরিবেশ সৃষ্টি করতে গিয়ে উপস্থিত করেছেন শ্যাম ও রাধিকাকে, একাকিনী দময়ন্তী ও বিষাদিনী শকুন্তলাকে, উমা ও ভোলানাথকে। লক্ষণীয় যে, কবি এদের ব্যবহার করেছেন একান্তভাবে প্রেমের কবিতার দাবি মেটাবার জন্যে, এর মধ্যে ধর্মীয় বা আধ্যাত্নিক কোন আবেগ অনুভূতি নেই, নিতান্ত মানুষী ব্যর্থ প্রেমের যন্ত্রণাকে মূর্ত করাই কবির লক্ষ্য। যথার্থ বাঙালি কবি হিসাবে হিন্দুর ধর্ম ও পুরাণকে সাহিত্যকর্মে ব্যবহার করবার সহজাত অধিকারের বলেই নজরুল এ কাজটি এত দক্ষতার সঙ্গে করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তবে ধর্মীয় অনুভূতি ও অধ্যাত্ন্য চেতনাকে প্রাধান্য দিয়েও নজরুল অনেক কবিতা লিখেছেন এবং সেখানেও তিনি আল্লাহ, রসুল, খোলাফায়ে রাশেদীন, ফাতেহা-ই-দোয়াজদাহম, রোজার ঈদ, কোরবানীর ঈদ নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন কালী, লক্ষèী, সরস্বতী ও দুর্গাকে নিয়ে। এ প্রসঙ্গে যা বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা এই যে, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ধর্মীয় অনুষঙ্গ নিয়ে রচিত এই সকল কবিতায় নজরুল হৃদয়কে মুখ্য করেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার আকুতি প্রকাশ করেছেন, শুষ্ক নি®প্রাণ পুঁথিসর্বস্ব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের পরিবর্তে মানবধর্ম পালন করে, তুচ্ছ স্বার্থ প্রণোদিত ভেদবুদ্ধি ভুলে গিয়ে, হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যকে দৃঢ় করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। 
জীবন যাত্রায় সংসার যাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলাটা নিরাপদ। নজরুল নিরাপদ পথে চলতে জানতেন না, কোন ব্যাপারেই মাত্রাজ্ঞান ছিল না। সংসারী মানুষ ছিলেন কিন্তু সংসারের কথা ভাবনেনি। গান করতে বসেছেন তো আহার নিদ্রা ভুলেছেন; সাহিত্য চর্চা করেছেন তো অর্থ উপার্জনের কথা ভাবেননি, রাজনীতি করেছেন তো রাজশক্তি পরোয়া করেননি, রাজদ্রোহের দায়ে পড়েছেন।
অনেক ব্যাপারেই তাঁকে সামলে রাখা কটিন ছিল কিন্তু একটি ব্যাপারে তিনি আশ্চার্য সংযম এবং অবিচল দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। সম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মান্ধতাকে তিনি কোন কালে প্রশ্রয় দেনিন। ধর্মবিরোধ তাঁর কবি ধর্মে এতটুকু আঁচড় বসাতে পারেনি। সর্বান্ত কারণে কবি ছিলেন বলেই বিভেদ মূলক কোন চিন্তা কালে তাঁর মনে মনে স্থান পায়নি।












সর্বশেষ সংবাদ
অসম্পূর্ণ খননে নষ্ট হচ্ছে প্রত্নসম্পদ
চবিতে ‘ডি লিট’ নিলেন ইউনূস, নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখালেন ড. ইউনূস
শেখ হাসিনার সঙ্গে অনলাইন বৈঠকের অভিযোগে কুমিল্লার আরেক আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
পুশইনের বিষয়ে সীমান্তে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে: কুমিল্লা সেক্টর কমান্ডার
জাতীয় নাগরিক পার্টি কুমিল্লা জেলার সাংগঠনিক প্রস্তুতি সভা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ‘স্ক্যাবিস’
শেখ হাসিনার সঙ্গে অনলাইন বৈঠকের অভিযোগে কুমিল্লার আরেক আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
কুমিল্লায় প্রবাসীর ঘর থেকে ২০০ কেজি গাঁজা জব্দ, মা-মেয়ে আটক
ওএসডির পর কুমিল্লা সিটির প্রধান নির্বাহীকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত
কুমিল্লায় ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার মামলায় ব্যবসায়ী তাহের কারাগারে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২