আবার আলোচনার বিষয় ‘কিশোর গ্যাং’। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই কিশোরদের একটি অংশের বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় তারা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশে চলমান বিশেষ অভিযানের (অপারেশন ডেভিল হান্ট) মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের নৃশংসতার অনেক অভিযোগ দেশের বিভিন্ন থানায় জমা পড়েছে কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। দেশজুড়ে নতুন কৌশলে কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে। প্রতিদিনই তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ উঠছে। খোদ পুলিশের ওপরও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে তারা।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে দুজনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পুলিশের তথ্যানুযায়ী গত বছরের এপ্রিলের আগে রাজধানীতে অন্তত ১২৭টি কিশোর-তরুণ গ্যাং সক্রিয় ছিল।
ঢাকার মধ্যে আদাবর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সবচেয়ে বেশি, প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছে। মিরপুর, উত্তরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লা, ডেমরাসহ রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে বেড়েছে। সারা দেশে ছিল ২২৭টি গ্যাং। এ দেশের প্রতিটি থানায় তাদের তালিকা ছিল। তবে গত ৫ আগস্টের আগে ও পরে দেশের বেশির ভাগ থানা ধ্বংস হওয়ায় সেই তালিকাও ধ্বংস হয়েছে।
থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সময় বদলালেও পাল্টায়নি কিশোর-তরুণদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। বিগত সরকারের সময়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে শুরু করে কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের শেল্টার দিতেন। বর্তমানে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে সমাজে নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া কিছু উঠতি সন্ত্রাসী। এ ছাড়া রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় জামিনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও এখন কিশোর গ্যাংকে শেল্টার দিচ্ছে। কিশোর-তরুণ গ্যাং নিয়ন্ত্রণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
দেশের সর্বত্র কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ব্যাপক বেড়েছে। হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটে অপরাধী হিসেবে তারা কাজ করছে। সরকার পরিবর্তনের পর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, পেশাদার খুনিসহ বেশ কয়েকজন ভয়ংকর অপরাধী জামিনে বের হয়েই নিজ নিজ অপরাধের সাম্রাজ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। আবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের একটি বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি।
কিশোর গ্যাং বা সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীগুলো তৈরি হলো কেন? কেনই বা তারা এত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোররা। তাদের আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। কিশোর বয়সে হিরোইজমের প্রবণতা থাকে। আবার কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠছে।
কিশোর গ্যাং কালচার নির্মূলে মদদদাতাদেরও ছাড় দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে।