বর্ষাকাল কেবল শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেছে বন্যা কিংবা নদীভাঙনের প্রকোপ। টানা তিন দিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে ফেনীর মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফেনীর ফুলগাজীতে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মুহুরী নদীর বরইয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে।
এতে নতুন করে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বিজয়পুর, বসন্তপুর, ফতেহপুর, বশিকপুর ও জগৎপুর গ্রামের নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। এসব গ্রামের মৎস্য ও পোলট্রি খামারিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে।
গত বছরও এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছিল। সেই দুর্ভোগের স্মৃতি এখনো প্রবল। নতুন করে প্লাবিত হওয়া এলাকার বাসিন্দারা জানায়, ফুলগাজী ও পরশুরামের মুহুরী, কুহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর দুই তীরে ১২২ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এটি এলাকার মানুষের আশীর্বাদ না হয়ে যেন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এই বাঁধটি প্রতিবছর ভেঙে একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়।
গত বৃহস্পতিবার মুহুরী ও কুহুয়া নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী বাজারসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীকে নিয়ে বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ফেনী পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, ‘ভারি বৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানি বাড়ছে। বাঁধের ভাঙনস্থল রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নিরাপত্তায় আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে।’
ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদীর পুরনো বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নাজিরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাছির মোহাম্মদ ঘাট ও মালাকারপাড়া এলাকায় ১০ হাজার পরিবার নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রকল্প হাতে নিলেও নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। ফলে হালদাতীরের বাসিন্দারা বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এদিকে আবহাওয়া বিভাগ বলছে, আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে উজান থেকে পানি নেমে আসাও অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যা, ভূমিধস ও নদীভাঙনের আশঙ্কা থাকবেই। কিন্তু সেসব প্রতিরোধে এবং নদীভাঙন রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশে অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত ক্ষতি হয়, কেবল বন্যায় তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার আঘাত প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। এর প্রধান কারণ আমাদের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। তাই নদী খননের মাধ্যমে নদী দিয়ে পানিপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।