নাগরিক সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হলেও বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সেবার মান নিয়ে ৮০ শতাংশ মানুষই অসন্তুষ্ট বলে জানা গেছে। নগর কর্তৃপক্ষের সেবাকার্যক্রম নিয়ে নাগরিকদের নাখোশ হওয়ার এ তথ্য উঠে এসেছে খোদ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনেরই চালানো এক জরিপে। তাই প্রশ্ন উঠেছে- সেবার মান বৃদ্ধি করতে না পারলেও, স্বাভাবিক নাগরিক সেবাটুকু দিতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন?
জানা গেছে, জাইকা প৪প২টু প্রকল্পের সহায়তায় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়নের কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নাগরিক জরিপ-২০২৫ চালানো হয়। এ জরিপের তথ্যে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সেবায় নাগরিকদের সন্তুষ্টি নিয়ে এক জরিপে সড়ক নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য অপসারণ, মশক নিধন, তথ্য প্রদানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও সেবা কার্যক্রমে ৮০ শতাংশ মানুষ 'সন্তুষ্ট নয়'।সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির নাগরিক সদস্যগণের পরিচয় উহ্য রেখে প্রশ্নপত্র জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। জরিপটি ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন সভা কক্ষে পরিচালিত হয়েছিল বলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এতে ১৫ জন জরিপ ফরম পূরণ করেছেন। সবচেয়ে বেশি ৯৩ শতাংশ জড়িপে অংশগ্রহণকারী বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ৩১ টি বিষয়ের মধ্যে ১২ টি বিষয়েই জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশের বেশি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
গতকাল ২৩ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটিরসভায় এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ।
জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাপ্য তথ্যের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অসন্তুষ্টি জানিয়েছেন ৮০ শতাংশ, ড্রেন/ পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়েছেন ৭৩ শতাংশ, বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়েছেন ৯৩ শতাংশ, সড়ক বাতি সুবিধাদি নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়েছে ৮০ শতাংশ, টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ৮৭ শতাংশ,মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮৭ শতাংশ, অবৈধ স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮৭ শতাংশ, অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮০ শতাংশ, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮০ শতাংশ, হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮০ শতাংশ, ট্রেড লাইসেন্স প্রধান এবং নবায়ন কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮০ শতাংশ, অ যান্ত্রিক যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮৭ শতাংশ, নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদান পদ্ধতিতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮৭ শতাংশ জরিপে অংশগ্রহণকারী।
এছাড়া শহরের সৌন্দর্য কার্যক্রম, নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কিত কার্যক্রম এবং নাগরিক অভিযোগ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ৭৩ শতাংশ জরিপে অংশগ্রহণকারী অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
জরিপে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের অসন্তুষ্ট নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক সাইফুদ্দিন আহমেদের কাছে প্রশ্ন রাখেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। এ সময় সিটি কর্পোরেশন স্থাপনের দীর্ঘ সময় পরেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের অসন্তুষ্টি নিয়ে দৈনিক কুমিল্লার কাগজের সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়ের এক প্রশ্নের জবাবে সিটি প্রশাসক বলেন, নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। এসময় সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয় বলেন, সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পরেও নাগরিকদের অসন্তুষ্টি নিয়ে দায়সারা গোছের জবাব দিয়ে পাড় পাওয়া যাবে না। নাগরিকদের ট্যাক্স এর টাকা সেবা খাতে ব্যয় না করে অন্য কিছুতে ব্যয় করা যাবে না। এজন্য সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরো আন্তরিক হতে হবে বলে জানান তিনি।
সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জরিপে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত সেবা সমূহ, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কার্যক্রম সমূহ, সিটি কর্পোরেশনের সাথে নাগরিকদের যোগাযোগ ও নাগরিকদের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম সমূহ বিষয় হিসেবে প্রযোজ্য হয়েছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মামুন, জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মোহাম্মদ বশির আহমেদ, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূইঁয়া, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসানাত বাবুল, ব্যবসায়ী নেতা আলহাজ¦ শাহ মোঃ আলমগীর খান, সাবেক কাউন্সিলর রায়হান রহমান হেলেন, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়, ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মঞ্জুর আলম ভূইয়া প্রমুখ।