গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এক তথ্য প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি অফিসের সেবা পেতে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। ২১টি সরকারি অফিসের মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ। দ্বিতীয় অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তৃতীয় অবস্থানে পাসপোর্ট অফিস।
সরকারি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে গত এক বছরে প্রায় ৩২ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে। গ্রামে এই হার ৩২ শতাংশ হলেও শহরে ৩০ শতাংশ। অবশ্য পুরুষের চেয়ে নারীরা তুলনামূলক কম ঘুষ দিয়েছেন। বিবিএস জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সের ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী-পুরুষ এ জরিপে অংশ নেন। এ জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্যবিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১৬ অভীষ্টের ছয়টির অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে।
বিবিএসের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নাগরিকদের সর্বাধিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ। সেখানে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ মানুষ সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
জরিপের ফল অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
জরিপে উঠে আসা ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, গড় সংখ্যা দেখে খারাপ বলে মনে হয় না। আমার ধারণা ছিল সরকারি সেবা নিতে সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। যেসব দপ্তরে কম ঘুষ দিতে হয় বলে জরিপে দেখানো হয়েছে, সেখানেও যে কম দিতে হয়, তা নয়। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রচণ্ড ঘুষ-বাণিজ্য হয়। বেশি হয় বদলি-বাণিজ্য। তাড়াতাড়ি সেবা পাওয়ার জন্য ঘুষ লেনদেন হয়।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষা খাত উল্লেখ করা না হলেও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দেখেছি প্রচুর ঘুষ লেনদেন হয়। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তা ধরা হয়েছে। বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগী এ কাজে জড়িত। পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, বিআরটিএ অফিস অনলাইন হলেও ঘুষের লেনদেন হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অফিসারদের তা দেখা দরকার। পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করার হারটি শতভাগ হওয়া দরকার।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের মধ্যে অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন ৪৭ শতাংশ নাগরিক। তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ সহজে ৮৯ শতাংশ কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করলেও সন্তুষ্টি তুলনামূলকভাবে কম।
সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিবিএসের জরিপ প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তা সরকারি সেবাগ্রহীতাদের জন্য হতাশাজনক। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি অফিসের সেবা পেতে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। সরকারি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে এ ধরনের বিড়ম্বনা বা হয়রানির বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি এবং ঘুষ বন্ধ করতে হলে সেবাদাতাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যাশা করছি, সেবা প্রতিষ্ঠানের কাজের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।