শনিবার ১৭ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
একটি সুন্দর পরিবেশ, একটি সুন্দর জীবনের সহায়ক
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:০৮ এএম |

একটি সুন্দর পরিবেশ, একটি সুন্দর জীবনের সহায়ক
বর্তমানে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ দূষণ মাটি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণসহ এসব দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শব্দ দূষণ ছাড়া বাকি তিনটি দূষণ একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যত্রতত্র ফেলে রাখা ময়লা-আবর্জনায় একটি স্থানের মাটি দূষণ হলে বায়ু ও পানি দূষিত হয়। ময়লা-আবর্জনা ফেলার ব্যাপারে আমারা যথেষ্ঠ সচেতন নই। প্রায় সাধারণ মানুষ বাসাবাড়ির আবর্জনা বাড়ির আঙিনা কিংবা বাড়ির আশপাশের রাস্তায় ফেলে রাখতে দেখা যায়। সাধারণ ব্যবসায়ী কিংবা ছোটখাটো দোকানদারদের দোকান পাটের বর্জ্য দোকানের সামনে বা রাস্তায় ফেলে রাখেন অনেক জায়গায়। আমরা যখন রাস্তায় চলাচল করি ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান থেকে খাবার গ্রহণ করে থাকি। এইসব খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ,কাগজ ও প্যাকেট যত্রতত্র ফেলে রাখতে দেখা যায়। গণপরিবহনের যাত্রী, ব্যক্তিগত পরিবহনে চলাচলকারী, পথচারী সবাই এই কাজটি করে থাকে। এতে করে ময়লা- আবর্জনা জমে পরিবেশ দূষণ করে।
আমাদের দেশে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। সে সব শিল্প কারখানার কঠিন ও তরল বর্জ্য পরিশোধন করার কথা থাকলেও, পরিশোধন না করেই বেশির ভাগই উন্মুক্ত স্থানে ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে ফেলা হয়। এতে পরিবেশ ও প্রতিবেশিরা দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কলকারখানার তরল বর্জ্য এবং আবাসিক বর্জ্যের নির্গত ময়লা পানি প্রাকৃতিক জলাশয়ে মিশে গিয়ে পানি দূষিত করছে।
আবাসিক তরল বর্জ্য, হাটবাজারের তরল বর্জ্য ও কলকারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এর কারণ হচ্ছে ড্রেনে ফেলে রাখা ময়লা-আবর্জনা। পলিথিন ও অন্যান্য কঠিন বর্জ্য ড্রেনে ফেলে রাখার কারণে ময়লা পানি অপসারণের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেখা দেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। দূষিত হয় পরিবেশ।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিটা মানুষই শান্তি চায়। তারপরেও সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এমনকি সেটা পৌঁছে যায় সমাজ থেকে জাতিগত পর্যায়ে। সেক্ষেত্রে আমরাই দায়ী। যদিও এ সমস্ত অশান্তি আর বিশৃঙ্খলার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ অন্যতম। আমরা চাইলেই আমাদের এই সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুন্দর করে তুলতে পারি-সেক্ষেত্রে একটা জিনিস প্রয়োজন, সেটা হলো আত্মসচেতনতা। যদি আমরা নিজে সচেতন হই তাহলে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। 
জলবায়ু পরিবর্তনে যখন পুরো বিশ্ব সংকটাপন্ন অথচ আমাদের দেশে চলতি অর্থবছরের বাজেটেই বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক ব্যাগ ও মোড়ক সামগ্রীর ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে তা ১ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। 
যেখানে পুরো বিশ্ব পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে সেখানে আমরা কিনা পরিবেশের বিপর্যয়ে ভূমিকা রাখা পণ্যে শুল্ক কমিয়ে আনছি। অথচ শুধু পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনলেই পরিবেশ, জলবায়ু ও মানুষ নানারকম ক্ষতিকর বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে পারে। তাই ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও কাব স্কাউট ইউনিট লিডার মাহাবুবা আক্তারকে পলিথিন ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে জানান- পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তাই আমি পলিথিনের বিপক্ষে। কিন্তু কী করব? আমাকে তো বাজার করতে গেলেই দোকানিরা হাতে পলিথিন ধরিয়ে দেন। অথচ পলিথিন নিয়ে বাড়ি ফিরতে আমার একদমই ভালো লাগে না। শুধু মাহাবুবা আক্তার নয়, এমন অনেক মানুষেরই অপছন্দ পলিথিন। তারপরও তাদের অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যবহার করতে হয় এ পলিথিন। কেননা বাংলাদেশের কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, শপিংমলসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে না।
আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন করে, তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। সেই সঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করলে ছয় মাসের জেলসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগের অভাবে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পলিথিন ও পলিথিন জাতীয় পণ্যের ব্যবহার এতো বেশি যে তা নির্মূল করা বেশ কঠিন। খুব খেয়াল করলে দেখবেন, পলিথিন ছাড়া আমাদের একদিনও কাটে না। খাদ্যদ্রব্য আনায়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও ব্যবহার হয় পলিথিন। ২০০২ সালে নিষিদ্ধের পর কিছুদিন পলিথিন ব্যাগ বন্ধ ছিল। কিন্তু বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি । কিছু দিন পর সেই ব্যাগও বাজারে ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের দেওয়া তথ্য মতে শুধু ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি পলিথিনের ব্যবহার  হচ্ছে।  রাজধানীর লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় প্লাস্টিকের কারখানা আছে অনেক। যেখানে প্রকাশ্যে চলে অবৈধ পলিথিনের উৎপাদন ও বিক্রি। অথচ এ পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। পরিবেশ দূষণের যেসব কারণ আছে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পলিথিন। পলিথিন মাটি, পানি, বায়ুকে সমানভাবে দূষিত করে। 
জানা যায় প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের একটি। পলিথিন একশ  বছরেও পচে না। এ সময়ে এটি মাটির যেখানেই থাকে, সেখানেই ক্ষতি করে। এ কারণে উর্বরতা কমে ফসলের ফলন কমায়। পোড়ালে তা বায়ু দূষিত করে। 
সরকার চাইলেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই পলিথিন কারখানা বন্ধ করে পলিথিন ব্যবসায়িদের অন্য কোন ব্যবসায়ের সুযোগ করে দিতে পারেন। আইন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ব্যক্তি  জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রতিটা পদক্ষেপেই যদি আমরা নিজেদের শুদ্ধ রাখতে পারি, তাহলে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। সুন্দর এবং আদর্শিক বাংলাদেশ গঠনে ব্যক্তি পরিবর্তনই জরুরী।
আমাদের সবারই সচেতন হওয়া উচিত ময়লা- আবর্জনা ফেলার ব্যাপারে। ঘরের ময়লা নির্দিষ্ট ঝুড়িতে রাখতে হবে। বাসাবাড়ির ময়লা ড্রামে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে। কলকারখানার ময়লা- আবর্জনা অবশ্যই পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। তরল বর্জ্য পানিতে ফেলা যাবে না। তরল ও কঠিন বর্জ্য যাতে মাটি দূষণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি সুন্দর পরিবেশ, একটি সুন্দর জীবনের সহায়ক।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা। 













সর্বশেষ সংবাদ
বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়
‘আসিফ নজরুল স্যার দায় এড়াতে পারেন না’
সড়কে পড়েছিল ‘৪৫ লাখ’ টাকা
‘নির্বাচনের পূর্বেই কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে’
মুরাদনগরে গোমতী নদীর তীরথেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন
কুমিল্লায় মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
কুমিল্লায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিদের বিক্ষোভ, সাংবাদিককে ছরিকাঘাত
এ সরকারের হাতে দেশের ভূখণ্ডনিরাপদ নয়
কুমিল্লায় ঘুষ ছাড়াই নিয়োগ পেলেন ৭৫ কনস্টেবল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২