শনিবার ১৭ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন
ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫, ১:৪৬ এএম |

 শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬-এর ২ ধারায় শব্দদূষণের সংজ্ঞা দেওয়া আছে। সংজ্ঞা অনুযায়ী শব্দদূষণ বলতে তফসিল ১ বা ২-এ উল্লিখিত মানমাত্রা অতিক্রমকারী এমন কোনো শব্দ সৃষ্টি বা সঞ্চালন, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বা ক্ষতির সহায়ক আর হর্ন বলতে বোঝাবে উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী নিউম্যাটিক, হাইড্রোলিক বা মাল্টি টিউনড হর্ন।
শব্দ থেকে দূষণ ঘটে মূলত অতিরিক্ত শব্দ থেকে। যেমন- গাড়ির শব্দ, হর্নের শব্দ, ইট ও পাথর ভাঙার শব্দ, মাইক বাজানো থেকেই শব্দদূষণ ঘটতে পারে। এসব শব্দের অধিকাংশই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। উচ্চমাত্রার এসব শব্দের কারণে মানুষের হৃৎপিণ্ড ও ধমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত শব্দের কারণে বন্যপ্রাণীদেরও মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। এদের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। বন্যপ্রাণী বিশেষ করে পাখিদের পরিব্রাজনের পথ পরিবর্তিত হয়ে যা। এর কারণে শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। 
অবসাদ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসসহ নানারকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। মাথাব্যথা, রক্তচাপ, আলসার, হৃদরোগ উচ্চ শব্দের কারণে হতে পারে। ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মানসিক চাপ বাড়ে। এর ফলে অনিদ্রা বেড়ে যায়। বয়স্ক ও অসুস্থরা বেশি শব্দদূষণের শিকার হন। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা হওয়া প্রয়োজন দিনের বেলায় ৫৫ ডেসিবেল ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৬৫ ডেসিবেল ও রাতের বেলা ৫৫ ডেসিবেল হতে হবে। শিল্পাঞ্চলে এ মাত্রা দিনের বেলা ৭৫ ও রাতের বেলা ৬৫ ডেসিবেল হতে হবে। হাসপাতালের ক্ষেত্রে দিনে ৫০ ডেসিবেল ও রাতে ৪০ ডেসিবেল হতে হবে। ইউএনইপির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল ও রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবেল। এ মাত্রা স্বাভাবিক সহ্য ক্ষমতার চেয়ে বেশি।  
একটি তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশের ২০ ভাগ মানুষ কানে শুনতে পায় না। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশই শিশু। অপর এক তথ্যমতে, আমাদের দেশের ১১.৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়েছে। মোবাইলে কথা শুনতে অসুবিধা হয় ১৫.৫ শতাংশ পুলিশ সদস্যের। ১৯.১ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের বেশি ভলিউম দিয়ে টিভি দেখতে হয়। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের একটি তথ্যমতে, ২০২২ সালে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৩ থেকে ২ গুণ বেশি শব্দ পাওয়া গেছে। 
শব্দদূষণ শুধু মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে না। এটি প্রভাব ফেলে প্রাণী জীবনের ওপরও। শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে ঢাকা। নানা কারণে শব্দদূষণ হতে পারে। যানবাহনের শব্দ থেকে শব্দদূষণ ঘটছে। প্রতি বছর গাড়ির সংখ্যা বাড়ছেই। বিমান ওড়া ও নামার সময় সৃষ্ট শব্দও দূষণের জন্য দায়ী। এ ছাড়া টিভি, টেপ রেকর্ডার, সাউন্ড বক্স থেকেও শব্দদূষণ ঘটে। 
আর নয় শব্দদূষণ, চাই সুস্থ জীবন- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমাদের দেশে পালিত হলো ৩০ এপ্রিল আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস ২০২৫। এটি প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ বুধবার পালিত হয়। এ বছর দিবসটি ৩০ এপ্রিল পালিত হলো। এ দিবস পালন শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর হেয়ারিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন দিবসটি শুরু করে। নানা পেশাজীবী, পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা শব্দদূষণ রোধে প্রতিরোধ ও নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে র‌্যালি ও মানববন্ধন হয়।
 বক্তারা শব্দদূষণ আইন দ্রুত বাস্তবায়ন ও দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ জেলায় ৩০ এপ্রিল আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ৮(১) লঙ্ঘন করায় পাঁচটি পরিবহন থেকে পাঁচটি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করা হয় এবং ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। 
৮ ধারায় হর্ন ব্যবহারের বিধিনিষেধ নিয়ে বলা আছে। এখানে বলা হয়েছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তি মোটর, নৌ বা অন্য কোনো যানে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন ব্যবহার করবে না। নীরব এলাকায় চলাচলকালে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নীরব এলাকা ব্যতীত অন্য কোনো এলাকায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করা যাবে। যেমন- বিয়ে বা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হলে, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সভা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হলে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করা যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের খেলা, যাত্রাগান, হাটবাজারের বিশেষ কোনো দিনেও তা করা যাবে। এসব ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে। 
সুনামগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এরকম উদ্যোগ যেন সব সময়ই নেওয়া হয়। এতে করে শব্দদূষণ আইন সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়বে। এসব কর্মকাণ্ড শব্দদূষণ রোধে সহায়ক হবে। শুধু আইন প্রয়োগ করলেই চলবে না। শব্দদূষণ রোধে সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে। 
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক












সর্বশেষ সংবাদ
বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়
‘আসিফ নজরুল স্যার দায় এড়াতে পারেন না’
সড়কে পড়েছিল ‘৪৫ লাখ’ টাকা
‘নির্বাচনের পূর্বেই কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে’
মুরাদনগরে গোমতী নদীর তীরথেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন
কুমিল্লায় মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
কুমিল্লায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিদের বিক্ষোভ, সাংবাদিককে ছরিকাঘাত
এ সরকারের হাতে দেশের ভূখণ্ডনিরাপদ নয়
কুমিল্লায় ঘুষ ছাড়াই নিয়োগ পেলেন ৭৫ কনস্টেবল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২